স্বাস্থ্যসম্মান হাতে হাসিবা খাতুন।
আপত্তি প্রতিরোধের আকার নিয়েছিল। তবু স্বাস্থ্যকর্মীর ধর্ম থেকে বিচ্যুত হননি দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলির বাসিন্দা হাসিবা খাতুন। ওঁর জেদই মেরিগঞ্জ এক নম্বর ব্লকে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবে সাফল্য এনে দিল রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরকে।
বছর দশেক আগে স্বাস্থ্যকর্মীর পোশাক গায়ে তোলেন হাসিবা। বাড়িতে তখন বড় মেয়ে ছাড়া আরও তিনটি শিশু। গ্রামের মাতব্বরেরা তাঁর সিদ্ধান্তে আপত্তি জানান। পাশে দাঁড়ান স্বামী। গ্রামের মহিলাদের যখনই প্রয়োজন হয়েছে, ছুটে যান হাসিবা। রাতবিরেতেও। গর্ভবতীদের রক্তচাপ মাপা, লোহিত কণিকার মাত্রা কম কি না, তা পরীক্ষা করা এবং অন্যান্য পরিষেবা দিয়ে চলেছেন তিনি।
সেকেন্ড এএনএম (অগ্জ়িলিয়ারি নার্স মিডওয়াইফ) পদে হাসিবা প্রায় সাড়ে ছ’হাজার মানুষের জন্য কাজ করেন। পূর্ব খালপাড়, কেওড়া মাটাল, কোরানিয়া, ঘরামিপাড়া-সহ কয়েকটি গ্রামে স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের খবর, গত বছর জুলাইয়ে ওই এলাকায় ঘরে সন্তান প্রসবের সংখ্যা ছিল ৮০। বছর বিয়াল্লিশের হাসিবার চেষ্টায় তা কমে হয়েছে ১৫। প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের হার এখন প্রায় ৯০ শতাংশ! এই তথ্য চমকপ্রদ বলে স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের অভিমত। হাসিবার কাজের জন্য তাঁকে সম্মানিত করা হয়েছে জেলা স্বাস্থ্য সম্মানে।
শুধু পরিসংখ্যানে হাসিবার লড়াই বোঝা সম্ভব নয়। হাসিবা জানান, বছরখানেক আগে তাঁর অঞ্চলের মোড়লেরা একজোট হয়ে হাসপাতালে সন্তান প্রসবে আপত্তি জানিয়েছিলেন। মাইকে ঘোষণার পাশাপাশি নিজেদের সিদ্ধান্ত লিফলেট ছড়িয়ে প্রচার করা হয়। এই পরিস্থিতিতে জেলাশাসকের অভিভাবকত্বে স্বাস্থ্য প্রশাসনের সক্রিয় সহযোগিতায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে গর্ভবতীদের পরিবারকে বোঝাতে শুরু করেন হাসিবা। তিনি বলেন, ‘‘সন্তানসম্ভবাদের বাড়ি বারবার যেতাম। হাসপাতাল থেকে ইউএসজি, রক্তপরীক্ষার রিপোর্ট আমিই এনে দিতাম। ধীরে ধীরে পরিস্থিতির বদল ঘটে।’’ আর প্রতিরোধ? ‘‘স্বাস্থ্যকর্মীর পোশাকের রং ধর্মবিরোধী, এমন কথা শুনেছি। কিন্তু পিছিয়ে আসিনি,’’ হাসিবার গলায় দৃঢ় প্রত্যয়।
হাসিবার সহকর্মীরা জানান, ১৯৯৫ সাল থেকে একটি পরিবারের কোনও শিশু সদস্যকে পোলিয়ো খাওয়ানো যায়নি। জেলাশাসক, বিডিও চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। সেই পরিবারের একটি শিশুকে পোলিয়ো খেতে রাজি করিয়েছিলেন হাসিবা। মায়ের এই লড়াইয়ে পাশে থেকেছেন বড় মেয়ে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর স্তরের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী তাহেরা খাতুন। মা বলেন, ‘‘মেয়ে খুব খুশি। সেই সময় ও-ই ভাইদের দেখেছিল। তাই এত দূর আসতে পেরেছি।’’ আর জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলছেন, ‘‘রোগীদের স্বার্থে আরও অনেক, অনেক হাসিবার প্রয়োজন।’’
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy