Advertisement
E-Paper

জঙ্গলমহলে ফের গোপনে চলছে মাওবাদী বৈঠক! নজর বাড়াচ্ছে প্রশাসন

বেশ কয়েক বছর বাদে জঙ্গলমহলের মানুষ ঘুম থেকে উঠে রাস্তার ধারে দেওয়ালে দেখলেন সিপিআই (মাওবাদী) নামাঙ্কিত পোস্টার।

দোমোহানি বাসস্ট্যান্ডে শনিবার সকালে এই পোস্টারগুলি দেখা যায়।। —নিজস্ব চিত্র।

দোমোহানি বাসস্ট্যান্ডে শনিবার সকালে এই পোস্টারগুলি দেখা যায়।। —নিজস্ব চিত্র।

সিজার মণ্ড‌ল

শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০২০ ১৯:৩৭
Share
Save

তিন সপ্তাহের মধ্যে দু’বার এ রাজ্যে জঙ্গলমহলের গ্রামে ঢুকে বৈঠক করলেন মাওবাদী নেতা-নেত্রীরা। পূর্ব পরিকল্পনামাফিক স্বাধীনতা দিবসের মধ্য রাতে কয়েকটি গ্রামে কালো পতাকা উত্তোলন করার ফতোয়া দিলেন। স্বাধীনতা দিবসের সকালে একাধিক জায়গায় দেখা গেল মাওবাদীদের পোস্টার। যা থেকে প্রশ্ন উঠছে, ২০১১ থেকে ২০২০, ন’বছরের ব্যবধানে ফের কি জঙ্গলমহলে জমি ফিরে পাচ্ছে লাল গেরিলারা?

শনিবার সকালে বেশ কয়েক বছর বাদে জঙ্গলমহলের মানুষ ঘুম থেকে উঠে রাস্তার ধারে দেওয়ালে দেখলেন সিপিআই (মাওবাদী) নামাঙ্কিত পোস্টার। বেলপাহাড়ি থানা এলাকার ভুলাভেদা বাজার এবং দোমোহানি বাসস্ট্যান্ডে প্রায় পঁচিশটি পোস্টার দেওয়ালে দেখতে পান স্থানীয় বাসিন্দারা। পোস্টারের বয়ান তাঁদের কাছে খুব চেনা। সাদা কাগজে লাল কালিতে হাতে লেখা পোস্টারে স্বাধীনতা দিবসকে ‘কালা দিবস’ হিসাবে পালন করার ডাক দিয়েছে মাওবাদী সংগঠন।

গত বছরও মেদিনীপুর এবং গোয়ালতোড়ের দিকে কয়েক জায়গায় এ রকম লাল কালিতে লেখা ‘মাওবাদী পোস্টার’ পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু প্রতি ক্ষেত্রেই পুলিশের দাবি ছিল, এ পোস্টার মাওবাদীদের নয়। স্থানীয় কোনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠী অযথা আতঙ্ক ছড়াতে মাওবাদীদের নাম করে পোস্টার ছড়িয়েছে। রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দারাও পোস্টারের ভাষা এবং যে এলাকায় আগের পোস্টার পাওয়া গিয়েছিল, সব মিলিয়ে ওই পোস্টারগুলো মাওবাদীদের নয় বলেই দাবি করেছিলেন। কিন্তু শনিবার যে পোস্টার পাওয়া যায়, তা মাওবাদীদের নয় বলে দাবি করেননি কোনও পুলিশ কর্তা। ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার সুপার অমিতকুমার সিংহ রাঠোর কোনও মন্তব্য করতে না চাইলেও জেলা পুলিশের অন্য এক কর্তা বলেন, ‘‘আমরা তদন্ত করছি পোস্টারের বিষয়ে। যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। কারণ এক সময়ে ওই এলাকাগুলো মাওবাদীদের মুক্তাঞ্চল ছিল।”

আরও পড়ুন: সীমান্ত-চ্যালেঞ্জের জবাব দিতে জানে ভারত, মোদীর নিশানায় চিন-পাকিস্তান​

আজ সকালে ওই পোস্টারগুলি চোখে পড়ার পরেই এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়। কারণ বেলপাহাড়ি এবং বাঁশপাহাড়ি— ঝাড়গ্রামের দু’টি জঙ্গলঘেরা এবং ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া এলাকার বাসিন্দাদের একটা অংশের দাবি, তাঁরা টের পাচ্ছিলেন যে রাতের অন্ধকারে ফের আনাগোনা শুরু হয়েছে ‘বন পার্টির’। জঙ্গলমহলের এই এলাকায় এখনও মানুষ সিপিআই মাওবাদী সংগঠনকে বনপার্টি বলেই চেনে‌ন। খবরটা শুধু স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে নয়, পুলিশের কাছেও ছিল। রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের নথি অনুযায়ী, গত ২৮ জুলাই বেলপাহাড়ি থানার এক আধিকারিকের কাছে মাওবাদী একটি স্কোয়াডের আনাগোনা সম্পর্কে তথ্য পৌঁছয়। ওই এলাকায় মোতায়েন কেন্দ্রীয় পুলিশ বাহিনী (সিআরপিএফ)-এর একটি সূত্রের দাবি, ২৭ জুলাই রাতে মাওবাদীদের একটি সশস্ত্র স্কোয়াড বেলপাহাড়ি থানা এলাকার পচাপানি গ্রামে তিন জনের বাড়িতে পোস্টার সাঁটিয়ে দিয়ে যায়। পোস্টারের সঙ্গে ছিল চিঠিও।

গোয়েন্দা সূত্রে খবর, সেই চিঠিতে ওই তিন জনের কাছে টাকা ‘লেভি’ হিসাবে দাবি করা হয়। ২৯ জুলাইয়ের মধ্যে ‘লেভি’ না দিলে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয় বলে জানা গিয়েছে। পচাপানির ওই তিন বাসিন্দার এক জন একটি রাষ্ট্রায়ত্ত গ্যাস সংস্থার এজেন্ট। দ্বিতীয় জন প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক এবং তৃতীয় জনের একটি মুদি দোকান রয়েছে। সূত্রের খবর, তিনটি চিঠিই বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। শনিবার সকালেও বেলপাহাড়ি থানার পুলিশ পোস্টারগুলো খুলে নিয়ে যায় থানায়।

গোয়েন্দাদের একটা অংশের দাবি, স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র থেকে তাঁরা জানতে পেরেছেন, ২৭ জুলাইয়ের পর ফের বেলপাহাড়ি থানা এলাকার শিমূলপাল গ্রাম পঞ্চায়েতের ঝাড়খণ্ড লাগোয়া প্রত্যন্ত কয়েকটি গ্রামে এসেছে মাওবাদীদের স্কোয়াড। গোয়েন্দাদের দাবি, মাওবাদী নেতা মদন মাহাতো এবং জবা মাহাতোরাই ওই এলাকায় ঘোরাফেরা করছেন। গোয়েন্দাদের একাংশের কাছে খবর, মাওবাদীদের ওই স্কোয়াডটি ভীমার্জুন গ্রামে রাতের অন্ধকারে হাজির হয় ক’দিন আগে। সেখানে পৌছনোর আগে থেকে আশপাশের লবনি, গিদিঘাটি, মাকুরভুলা, গিরুলিয়ার মতো কয়েকটি পাহাড়ের কোলে থাকা ছোট্ট গ্রামের মোড়লদের খবর দেওয়া হয়েছিল হাজির থাকার জন্য। সেখানে ওই স্কোয়াডটি ১৫ অগস্ট মধ্য রাতে কালো পতাকা উত্তোলেনর নির্দেশ দেয় গ্রামবাসীদের।

গোয়েন্দাদের দাবি, পৌঁছনোর আগে গ্রামের সবাইকে মোবাইল ফোন বন্ধ করে রাখার নির্দেশ দিয়েছিল মাওবাদী স্কোয়াডটি। রাজ্য গোয়েন্দা শাখার এক আধিকারিক, যিনি দীর্ঘ দিন মাওবাদীদের গতিবিধি নিয়ে কাজ করেছেন, এ দিন বলেন, ‘‘ওই এলাকা লালগড় আন্দোলনের আগে থেকেই মাওবাদীদের শক্ত ঘাঁটি ছিল। লাল গেরিলাদের নিয়মিত আসা যাওয়া ছিল ওই গ্রামগুলোতে। সেখানে ওদের কিছু সমর্থকও আছেন। ভৌগলিক ভাবে ওই গ্রামগুলো অনেক বেশি ঝাড়খণ্ডের কাছে। কয়েক মিনিটের মধ্যে ঝাড়খণ্ডের গভীর জঙ্গলে পৌঁছে যাওয়া যায় ওই গ্রামগুলো থেকে। তাই ফের ওই গ্রামগুলোতে মাওবাদীদের আসা যাওয়া অস্বাভাবিক নয়।”

আরও পড়ুন: মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স পুনর্বিবেচনা করছে কেন্দ্র: জানালেন প্রধানমন্ত্রী​

তবে রাজ্য পুলিশের কর্তাদের চিন্তায় ফেলেছে দু’টি তথ্য। প্রথমত, ওই প্রান্তিক এলাকা ছেড়ে বেলপাহাড়ি থানার অনেক কাছে ভুলাভেদা এবং দোমোহানিতে পোস্টার পাওয়া প্রমাণ করে যে ওই গ্রামগুলোতেও ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে মাওবাদীদের সমর্থকরা। দ্বিতীয় তথ্য সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত নন রাজ্য পুলিশের কর্তারা। তাঁরাও একটি সূত্র থেকে খবর পেয়েছেন, এক সময়ে জঙ্গলমহলে মাওবাদীদের মহিলা শাখার দায়িত্বে থাকা জবা মাহাতো নিজে গত রাতে লালগড় থানা এলাকার ভুলাগাড়়া গ্রামে এসেছিলেন। এক পুলিশ কর্তা বলেন, ‘‘ওই তথ্য যদি সত্যি হয় তবে তা যথেষ্ট উদ্বেগজনক।”

রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ ইতিমধ্যেই সক্রিয় ভাবে নজর রাখা শুরু করেছে ওই এলাকায়। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘মাওবাদীদের নামে পোস্টার পাওয়া গিয়েছে, এটা বাস্তব। বাকি তথ্যের কিছুটা প্রমাণ আছে। বাকিগুলো এখনও প্রমাণিত নয়। সেগুলো কতটা সত্যি তা খতিয়ে দেখতে হবে।”

Maoists Jangalmahal Midnapore Jhargram Police Independence Day

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}