গ্রামে হাবিবুলের দেহ আসার পরে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন। নিজস্ব চিত্র।
গুজরাত থেকে মঙ্গলবার ভোরে পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীর বাড়িতে এসে পৌঁছল ছেলের নিথর দেহ। তার উপরে হাত রেখে কান্নায় ভেঙে পড়লেন মা। পাশে বাবা স্থবিরের মতো বসে। এর মধ্যেই গ্রামে প্রশ্ন উঠে গেল, পড়াশোনা ছেড়ে হাবিবুলের মতো কিশোরদের ভিন্ রাজ্যে কাজে যেতে হল কেন? স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুধু হাবিবুল নয়, কাজের খোঁজে অন্য রাজ্যে রয়েছেন এলাকার আরও অনেকে। চাষে লাভ কমে যাওয়া, এলাকায় একশো দিনের কাজ কার্যত বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে সংসারে আর্থিক টানাটানির কারণেই ছোটদের বাইরে পাঠাতে হচ্ছে, দাবি বাসিন্দাদের একাংশের।
গয়নার দোকানে কাজ শিখতে পূর্বস্থলীর কেশববাটী গ্রামের হাবিবুলকে গুজরাতের মোরবী শহরে পাঠিয়েছিলেন বাবা-মা। সেখানে দোকানে কাজ করেন তাঁর কাকা সাহিবুল শেখ। রবিবার সন্ধ্যায় সেতু দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় হাবিবুলের। সোমবার রাতে বিমানে দেহ কলকাতায় পৌঁছনোর পরে, গাড়িতে গ্রামে আনা হয়। মঙ্গলবার সকালে পরিবারটির সঙ্গে দেখা করে পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘বিমানে দেহ পাঠানোর খরচও গুজরাত সরকার দেয়নি। এখনও ক্ষতিপূরণের অর্থ মেলেনি। তা যাতে দ্রুত মেলে, প্রশাসনের তরফে দেখা হচ্ছে।’’
পরিবারটিকে সান্ত্বনা দিতে এ দিন ভিড় জমান এলাকার অনেকে। তাঁরা জানান, হাবিবুল ছাড়াও এই পরিবারের দু’টি কিশোর-তরুণ গুজরাতে কাজে গিয়েছেন। এলাকার অন্তত জনা ষাটেক বাসিন্দা কেরল, তামিলনাড়ু, গুজরাত, মহারাষ্ট্র, দিল্লি-সহ নানা রাজ্যে কর্মরত। কেউ গিয়েছেন নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে, কেউ গয়নার দোকানে কাজ করতে। এলাকাবাসীর দাবি, ইদানীং অল্পবয়সীদের ভিন্ রাজ্যে পাঠানোর প্রবণতা তৈরি হয়েছে।
এর কারণ কী? গ্রামের বাসিন্দা সামসুল আলম শিকদারের বক্তব্য, ‘‘ধান, পাটের মতো ফসল ফলিয়ে সংসার চলে এলাকার বেশির ভাগের। কিন্তু চাষের খরচ বেড়ে চলায়, লাভ কমছে। আর্থিক দুরবস্থার কারণেই ভিন্ রাজ্যে যাওয়ায় ঝোঁক বেড়েছে।’’ গ্রামবাসীর একাংশের দাবি, অন্য রাজ্যে দিনে গড়ে ৫০০-১২০০ টাকা উপার্জন হয়। মাসে ২২-২৪ দিন কাজ মেলে। কয়েক বছর সেখানে কাজ করলে হাতে মোটা টাকা জমে। এলাকায় ফিরে বাড়ি তৈরি-সহ নানা কাজে তা লাগানো যায়।
এলাকার অনেকের আরও দাবি, পড়াশোনা করে বাড়ির ছেলেরা চাকরি পাবে— সে আশা তাঁরা করেন না। বরং প্রাথমিক শিক্ষাটুকুর পরে, অল্প বয়স থেকে রোজগার শুরু করলে দ্রুত সংসারের হাল ফিরবে, মনে করেন তাঁরা। সে ভাবনা থেকেই ছোটদের কাজে পাঠানো হচ্ছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, আগে একশো দিনের কাজে কিছুটা রোজগার হত। কিন্তু গত এক-দেড় বছর তা-ও তেমন মিলছে না। সংসার চালাতে গ্রামের অনেক পরিবার চড়া সুদে ঋণ নিয়েছে। তা শোধ করতে বাড়তি উপার্জনের রাস্তা খুঁজতে হচ্ছে। সে সূত্রেই ধরতে হচ্ছে ভিন্ রাজ্যের পথ।
বিজেপির জেলা (কাটোয়া) সভাপতি গোপাল চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘রাজ্য সরকার কর্মসংস্থানের বিষয়ে উদাসীন। তাই বড়রা তো বটেই, এখন ছোটদেরও গুজরাতের মতো এগিয়ে থাকা রাজ্যে কাজে যেতে হচ্ছে।’’ স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়ের পাল্টা দাবি, ‘‘কয়েক দিন আগে সারানো সেতু যেখানে ভেঙে পড়ে, তাকে এগিয়ে থাকা রাজ্য বলা মানায় না। এ রাজ্যে কর্মসংস্থানের অভাব নেই। তবে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার একশো দিনের কাজের টাকা বন্ধ করে রাখায়, গ্রামীণ এলাকার মানুষেরা বিপাকে পড়ছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy