প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
স্কুল তো নয়, যেন রণক্ষেত্র।
ভেঙে পড়ে রয়েছে চেয়ার-টেবিল। শৌচালয়ের দরজা ভাঙা। কোথাও প্রধান শিক্ষকের চেয়ার ভেঙে পড়ে রয়েছে মাঠের মধ্যে। এক কথায়, লন্ডভন্ড অবস্থা।
শনিবার পঞ্চায়েত ভোট শেষে রবিবার রাজ্যের বেশ কিছু স্কুলের এ হেন চেহারা দেখে শিক্ষকেরা শঙ্কিত, কী ভাবে বুধবারের পরে শুরু হবে নিয়মিত ক্লাস? তাঁদের অভিযোগ, যা হয়ে রয়েছে, সেখান থেকে ভাঙাচোরা ক্লাসরুমকে স্বাভাবিক ক্লাসরুমে ফিরিয়ে আনা রীতিমতো চ্যালেঞ্জ। তাঁদের প্রশ্ন, এই চেয়ার-টেবিল যে ভাঙল, তার ক্ষতিপূরণ কী ভাবে পাওয়া যাবে?
দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবারের পাতরা এলাকার একটি বুথে শনিবার বেলা ২টো নাগাদ অশান্তি শুরু হয়। কয়েক জন যুবক ভোট কেন্দ্রের ভিতরে বচসায় জড়িয়ে পড়েন। ওই বুথের এক ভোটকর্মী পরে জানান, নীল জামা, সাদা পাজামা পরা দু’-তিন জন যুবক হঠাৎ স্কুলের চেয়ার-টেবিল ধরে আছাড় মারতে শুরু করেন। ভোটকর্মীরা বারবার ওই যুবকদের নিরস্ত হতে অনুরোধ করেছিলেন। গোলমালের জেরে স্কুলের সম্পত্তি কেন নষ্ট করছেন, সেই প্রশ্নের অবশ্য কোনও উত্তর মেলেনি।
সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের কয়েক জন সদস্যের দাবি, ভোটের দিন, শনিবার দুপুরে তাঁদের হেল্পলাইনে মালদহ ও মুর্শিদাবাদ থেকে এই ধরনের বেশ কিছু অভিযোগ আসছিল। সেখানেও গন্ডগোলের সময় স্কুলের সম্পত্তি ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, শিক্ষকেরা যে কাঠের চেয়ারে বসেন, তা ভেঙে পায়াকে লাঠি হিসেবে ব্যবহার করেছে দুষ্কৃতীরা। মঞ্চের অন্যতম আহ্বায়ক ভাস্কর ঘোষ সোমবার বলেন, ‘‘এ রকম অভিযোগ আমরা অনেক পেয়েছি। শুধু এ বারই নয়। আগেও দেখা গিয়েছে যে, ভোটে গোলমাল হলে যাবতীয় আক্রোশ গিয়ে পড়ে স্কুলের সম্পত্তির উপরে। অবাধে ভাঙচুর চলে। নিয়ম অনুযায়ী, এর ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা নির্বাচন কমিশনের। কিন্তু তা কখনওই পাওয়া যায় না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শিক্ষকেরা নিজেদের গাঁটের টাকা খরচ করে ওই সব চেয়ার-টেবিল সারান।’’
বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনন্দ হন্ডার কথায়, ‘‘স্কুলের কম্পোজ়িট গ্রান্ট থাকে। সেখান থেকে টাকা নিয়ে এগুলো সারানোর কথা বলে শিক্ষা দফতর। কিন্তু বর্তমানে সেই তহবিলের যে হাল, তা দিয়ে এত কিছু সারানো সম্ভব নয়। নানা কারণে কম্পোজিট গ্রান্ট আগেই শেষ হয়ে যায়। শুধু তো চেয়ার-টেবিল নয়, শৌচালয় ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। এর আগে এমন হয়েছে, টাকার অভাবে সেই শৌচালয় সারানো যায়নি। ফলে, শৌচালয় ছাড়াই বহুদিন স্কুল করতে হয়েছে পড়ুয়াদের।’’ শিক্ষানুরাগী ঐক্যমঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারীর অভিযোগ, ‘‘এ বার পঞ্চায়েত ভোটে যে ধ্বংসলীলা চলল, তাতে বহু স্কুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ক্ষতিপূরণ কম্পোজিট গ্রান্ট থেকে মেটানো সম্ভব নয়। নির্বাচন কমিশনকে এই ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।’’
নির্বাচন কমিশনের এক কর্তা অবশ্য বলেন, ‘‘স্কুলের সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত হলে সে ক্ষতিপূরণের জন্য কমিশনের কাছে আলাদা কোন ফান্ড থাকে না। তবে জেলা প্রশাসনের কাছে ভোটের নানা খাতে খরচের জন্য তহবিল থাকে। সেখান থেকেই মেরামতি হওয়ার কথা।’’ যদিও শিক্ষকদের দাবি, এখনও পর্যন্ত যত ভোট হয়েছে, সেখানে স্কুলের এই ক্ষতিগ্রস্ত সম্পত্তি মেরামতিতে কানাকড়ি পাওয়া যায়নি জেলা প্রশাসন থেকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy