Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Amphan

ধুয়ে গেল কাঁচামাটি, ফের কোটালে ভাসল কিছু গ্রাম

শনিবার সকাল ১১টার পর থেকে কোটালের জল বাড়তে থাকে। আর তারপরেই বিপত্তি বহু জায়গায়।

আমপানে ধুয়ে-মুছে গিয়েছে সব কিছু। ফাইল চিত্র।

আমপানে ধুয়ে-মুছে গিয়েছে সব কিছু। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০২০ ০৩:৩১
Share: Save:

আশঙ্কাই সত্যি হল।

ফের ভাঙল সদ্য মেরামত করা কাঁচামাটির বাঁধ। ক’দিন আগেই যাঁরা বোঁচকাবুঁচকি নিয়ে গ্রামে ফিরেছিলেন ত্রাণ শিবির থেকে, ফের তাঁরা রওনা দিলেন শিবিরের দিকেই। আর কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে বলে গেলেন, ‘‘যত দিন না কংক্রিটের বাঁধ তৈরি হচ্ছে, আমাদের এই দুর্ভোগ কেউ আটকাতে পারবে না।’’

আমপানে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকার নদীবাঁধে ক্ষতি হয়েছে। কোথাও বাঁধ স্রেফ জলে ধুয়ে গিয়েছে। কোথাও ভেঙেচুরে একসা। পূর্ণিমার ভরা কোটালের আগে সেই বাঁধ মেরামত করতে না পারলে ফের ভাসবে গ্রাম, এই আশঙ্কা ছিলই। বহু জায়গায় বাঁধে মাটি ফেলা হলেও মেরামত খুব শক্তপোক্ত হয়নি বলে অভিযোগ উঠছিল নানা জায়গা থেকে।

শনিবার সকাল ১১টার পর থেকে কোটালের জল বাড়তে থাকে। আর তারপরেই বিপত্তি বহু জায়গায়।

হাসনাবাদের শুলকুনি, টিলারচক, টিয়ামারি এলাকায় সদ্য মেরামত করা বাঁধ ফের ভেঙেছে ডাঁসা নদীর জলের তোড়ে। টিয়ামারিতে স্লুইস গেট ভেঙে জল ঢুকেছে গ্রামে। টিয়ামারি ও টিলারচকে আমপানের পরে মেরামত করা বাঁধ ভেঙেও জল ঢুকেছিল। কোটালের জলে ফের ভেঙেছে বাঁধ। প্লাবিত পাটলি খানপুর পঞ্চায়েতের কয়েকটি গ্রাম। বাঁশতলি, রূপমারি, কুমিরমারি, বাইনাড়া, গেঁওমারিতেও কোথাও বাঁধের ফাটল দিয়ে, কোথাও বাঁধ উপচে জল ঢুকেছে।

আরও পড়ুন: দুর্গতদের ঘরে যাক সাহায্য, দাবি কেন্দ্রীয় দলের কাছে

সন্দেশখালি ২ ব্লকের শিতলিয়ায় কলাগাছির নদীর জল বেড়ে ভেঙেছে বাঁধ। আমপানের পরে শিতলিয়ায় প্রায় ২ কিলোমিটার অংশে বাঁধ মেরামত করা হয়েছিল। তার ৩০-৪০ ফুট অংশ ভেঙেছে। বাঁধ ছাপিয়ে
নতুন করে জল ঢুকেছে হাসনাবাদের বিভিন্ন গ্রামে। আমপানের দাপটের পরেও এ সব জায়গা ভাসেনি। শুলকুনির বাসিন্দা স্বপন মাইতি, প্রতিমা মাইতিরা জানালেন, আমপানে ঘরের চাল উড়েছিল। ঘর ভেসে গিয়েছিল। আশ্রয় নেন ত্রাণ শিবিরে। সেখানে কিছু দিন কাটিয়ে ভাঙা
বাড়ি মেরামত করে থাকছিলেন সেখানেই। কিন্তু নতুন করে বাঁধ ভেঙে জল ঢুকেছে গ্রামে। ফের ভেসেছে ঘরবাড়ি। বাক্স-প্যাঁটরা নিয়ে ফের ত্রাণ শিবিরে গেলেন তাঁরা। স্বপনের কথায়, ‘‘কংক্রিটের বাঁধ না হলে আবার ঘটবে এই কাণ্ড। আমাদের শান্তিতে থাকতে দেবে না।’’

উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সভাধিপতি বীণা মণ্ডল বলেন, ‘‘শীতকালে বাঁধে মাটি দেওয়া হয়েছিল। তবে আমপানের তাণ্ডব এতটাই ছিল, বাঁধের ক্ষতি হয় অনেক জায়গায়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা হয়েছে দ্রুত। ফের কোথাও কোথাও মাটি আলগা থাকায় বাঁধের ক্ষতি হচ্ছে।’’

রায়দিঘিতে ছাতুয়ানদীর বাঁধ এমনিতেই দুর্বল ছিল নন্দকুমার পঞ্চায়েত এলাকায়। আমপানে সে বাঁধ ভেঙেছিল। যতটুকু মেরামত করা গিয়েছিল, তার ৫০-৬০ ফুট অংশ ভেঙেছে শনিবার। জয়ন্তী সর্দার, রূপালি সর্দারেরা আমপানের পর থেকে এখনও গ্রামে ফিরতে পারেননি। ত্রাণ শিবির থেকে খাবার নেন। আর থাকেন প্লাস্টিক, ত্রিপল টাঙিয়ে,
বাঁধের উপরে। তাঁদের কথায়, ‘‘আমপানে বাঁধ ভেঙে ভাসতে হয়েছিল। সে বাঁধ কী যে সারাই হল, কে জানে! ফের ভেঙেছে।’’

সেচ দফতরের রায়দিঘি সাব ডিভিশনের সহকারী বাস্তুকার অমিয় চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাঁধ সারানো হয়েছিল। কিন্তু কোথাও কোথাও ফের ভেঙেছে। জরুরি বৈঠক ডেকে এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’

ক্যানিং, গোসাবা, বাসন্তী, কুলতলির মতো এলাকাগুলিতে বাঁধ ভেঙে জল ঢুকেছিল আমপানে। সেখানেও বাঁধ মেরামতি হয়। সেগুলি অবশ্য এখনও অক্ষত। ক্যানিং মহকুমা সেচ দফতরের আধিকারিক সুরজিৎ লাহিড়ি বলেন, ‘‘পূর্ণিমার কোটালে সর্বোচ্চ যে পরিমাণ জল বাড়ার কথা ছিল, আমাদের বাঁধ তার থেকে উঁচু করেই মেরামত করা হয়েছিল। তাই কোথাও বাঁধ উপচে গ্রামে জল ঢোকেনি। আর জোয়ারের সময়ে হাওয়া না থাকায় বাঁধের ক্ষতি হয়নি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Amphan High Tide Sunderbans
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy