চমক না কি রাজনীতি? গ্রাফিক: সনৎ সিংহ
রাজনৈতিক সংঘর্ষে মৃত দলীয় কর্মীদের ‘শহিদ’ তকমা দেওয়ার ক্ষেত্রে বাম, ডান সব রাজনৈতিক দলই সমান। ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই কলকাতায় মহাকরণ অভিযানে পুলিশের বাধা এবং তার জেরে মৃত্যু আজও বার বার মনে করাতে চায় তৃণমূল। প্রতি বছর কলকাতায় ‘শহিদ দিবস’ পালন তৃণমূলের প্রধানতম কর্মসূচি। ক্ষমতায় আসার পরে সেই আয়োজন আরও বড় হয়েছে। ২০২২ সালে সেই দিনে মমতার বক্তব্য অন্য রাজ্যেও প্রচারে উদ্যোগী হয়েছিল তৃণমূল। জাতীয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ তথা ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়েই সেই আয়োজন ছিল বাংলার শাসকদলের।
একই রকম উদ্যোগ বিজেপিরও। বিধানসভা নির্বাচনের আগে মহালয়ার দিন মৃত দলীয় কর্মীদের জন্য গঙ্গার ঘাটে তর্পণ করতে আসেন স্বয়ং বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা। গত ২ মে রাজ্যে তৃতীয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের দ্বিতীয় বছর পূর্তির দিনেও শহিদ তর্পণ করেন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীরা। সেই দিন ধর্মতলায় বিজেপির বিক্ষোভ মঞ্চে বেশ কয়েক জন মৃত কর্মীর পরিবারকেও হাজির করা হয়েছিল। তার আগেই শ্যামবাজারে বিজেপির একটি কর্মসূচি মঞ্চে হাজির হতে দেখা গিয়েছিল বগটুইয়ে নিহতদের পরিবারের সদস্যেদের।
একটা সময় ছিল, যখন বীরভূমের রামপুরহাট ১ ব্লকের বড়শাল গ্রাম পঞ্চায়েতের বগটুইয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে কেউ লড়াই করার সাহস দেখাত না। এ অভিযোগ বিজেপিরই। কারণ, এই গ্রামের নেতা ছিলেন প্রয়াত তৃণমূল নেতা ভাদু শেখ। বগটুইয়ে ভাদু খুন হওয়ার পরেই মর্মান্তিক ঘটনা দেখা যায়। ২০২২ সালের ২১ মার্চ আগুনে পুড়ে মারা গিয়েছিলেন দশ জন। সেই ঘটনা শুধু বাংলা নয়, গোটা দেশের রাজনীতির আলোচ্য হয়ে উঠেছিল। এ বার ভাদু খুনে অন্যতম অভিযুক্ত পলাশ শেখের মা বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন। আবার বগটুইয়ের আগুনে পুড়ে মৃতদের আত্মীয়া সীমা খাতুন, মেরিনা বিবি বগটুই গ্রাম সংসদে প্রার্থী হয়েছেন। নেতৃত্ব দিচ্ছেন বগটুইকাণ্ডের পরে শিরোনামে আসা মিহিলাল শেখ।
এক সময় তৃণমূলের দাপুটে নেতা মিহিলাল জানিয়েছেন, তাঁর পরিবারের মোট তিন জন বিজেপির প্রার্থী হচ্ছেন। তাঁর ভাইপো, ভাইপোর স্ত্রী প্রার্থী হয়েছেন। শুধু তাই নয়, আশপাশের বিভিন্ন সংখ্যালঘু এলাকা থেকেও বিজেপি প্রার্থী করেছে এমন অনেককে, যাঁরা বগটুইকাণ্ডে স্বজনদের হারিয়েছেন।
বগটুইয়ের মতো না হলেও রাজ্য রাজনীতি তোলপাড় হয়েছিল উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জের ঘটনায় পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয় রাধিকাপুরের চাঁদগাও গ্রামের রাজবংশী যুবক মৃত্যুঞ্জয় বর্মন। পঞ্চায়েত নির্বাচনে মৃত্যুঞ্জয়ের বৌদি কণিকা বর্মনকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। আগে মৃত্যুঞ্জয়ের দাদা বিষ্ণু বর্মনও বিজেপির টিকিটে পঞ্চায়েত সমিতিতে জিতেছিলেন। অভিযোগ উঠেছিল, বিষ্ণুকে ধরতে এসে না পেয়েই মৃত্যুঞ্জয়কে গুলি করে পুলিশ।
আবার দক্ষিণবঙ্গের ময়নায় বাকচা গোড়া মহল এলাকার মৃত বুথ সভাপতি বিজয় ভুঁইয়ার স্ত্রীকে প্রার্থী করল বিজেপি। গত মে মাসেই বিজয়ের মৃত্যু ঘিরে তোলপাড় হয় রাজ্য রাজনীতি। ময়নায় বন্ধও ডেকেছিল বিজেপি। এ বার গ্রাম পঞ্চায়েতেই বিজেপির হয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বিজয়ের স্ত্রী লক্ষ্মী ভুঁইয়া।
প্রসঙ্গত, গত বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই ভোট পরবর্তী সন্ত্রাসের অভিযোগে সরব বিজেপি। দলের বহু কর্মীর মৃত্যু হয়েছে বলে নানা ভাবে প্রচার করেছে গেরুয়া শিবির। চলছে সিবিআই তদন্ত। জাতীয় স্তরের বিভিন্ন কমিশন রাজ্য এসেছে। মৃতদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দিল্লিতেও গিয়েছে রাজ্য বিজেপি। এ বার পঞ্চায়েত নির্বাচনেও যে ভোট পরবর্তী সন্ত্রাসের অভিযোগকে হাতিয়ার করা হবে তা আপাতত স্পষ্ট। এখনও পর্যন্ত পঞ্চায়েতে মনোনয়নের সম্পূর্ণ তালিকা পাওয়া যায়নি। তবে বিজেপি সূত্রে খবর, যেখানে যেখানে সম্ভব দলের জন্য প্রাণ দেওয়া কর্মীদের পরিবারের লোকেদের প্রার্থী করা হয়েছে। এটাকে অবশ্য ‘শহিদ রাজনীতি’ বলে মানতে নারাজ বিজেপি। দলের মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আমরা সব সময়ে দলীয় কর্মীদের পাশে থাকি। দলের জন্য যাঁরা শহিদ হয়েছেন তাঁদের পরিবারের পাশে থাকি। এটা নতুন কিছু নয়। তাঁদের প্রার্থী করাটা আসলে অত্যাচারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক জবাব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy