Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Parvej Arsalan

আরসালানকে পুলিশে দেওয়া হয়েছিল কেন?

বড় ছেলে রাঘিবকে বাঁচাতে তাঁর ‘নির্দোষ’ ছোট ভাই আরসালানকে প্রথমে পুলিশের হাতে কেন তুলে দিয়েছিল পারভেজ পরিবার?

 ব্যাঙ্কশাল কোর্টে রাঘিব পারভেজ। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

ব্যাঙ্কশাল কোর্টে রাঘিব পারভেজ। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৯ ০৩:১৬
Share: Save:

জবাব মিলছে না বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের। ফলে শেক্সপিয়র সরণিতে জাগুয়ার দুর্ঘটনার রহস্য বৃহস্পতিবার আরও ঘনীভূত হয়েছে।

যে-সব প্রশ্ন তদন্তকারীদের ভাবাচ্ছে, তার মধ্যে আছে: বড় ছেলে রাঘিবকে বাঁচাতে তাঁর ‘নির্দোষ’ ছোট ভাই আরসালানকে প্রথমে পুলিশের হাতে কেন তুলে দিয়েছিল পারভেজ পরিবার? তদন্তকারীদের কাছে এটা বড় রহস্য। পরিবারের লোকজন এই প্রশ্নের সুস্পষ্ট কোনও উত্তর দেননি। জানা যায়নি, রাঘিব ১৯ অগস্ট, সোমবার দুবাই থেকে কলকাতায় ফিরে এলেও তাঁকে গ্রেফতার করতে আরও দু’দিন দেরি হল কেন? রাঘিবের ফেরার কথা তাঁর পরিবার কেনই বা গোপন রেখেছিল?

১৬ অগস্ট গভীর রাতে শেক্সপিয়র সরণি ও লাউডন স্ট্রিটের মোড়ে পারভেজদের জাগুয়ার গাড়ি একটি মার্সিডিজ বেন্‌জ় গাড়িতে ধাক্কা মারে। সেই মার্সিডিজ একটি পুলিশ কিয়স্কে ধাক্কা মারায় দু’জন বাংলাদেশি মারা যান। পুলিশ জানায়, দুর্ঘটনাগ্রস্ত জাগুয়ারের মালিক যে আরসালান সংস্থা, ১৭ অগস্ট সকালে তা জানার পরে তাদের ঠিকানায় নোটিস পাঠিয়ে জানতে চাওয়া হয়, ১৬ অগস্ট রাতে সেটি কে চালাচ্ছিলেন। নোটিস পেয়ে আরসালান পারভেজকে নিয়ে তাঁর মামা মহম্মদ হামজা শেক্সপিয়র সরণি থানায় যান। সেখানে তিনি লিখিত ভাবে পুলিশকে জানান, গাড়ি চালাচ্ছিলেন আরসালান। তার পরেই আরসালানকে গ্রেফতার করা হয়।

লালবাজারের কর্তারা বুধবার দাবি করেন, দুর্ঘটনার রাতে আরসালান নন, গাড়ি চালাচ্ছিলেন তাঁর দাদা রাঘিব। প্রশ্ন উঠেছে, আরসালান গাড়ি চালাচ্ছিলেন না জেনেও তাঁর মামা মহম্মদ হামজা কেন তাঁকে থানায় নিয়ে গেলেন? তিনি রাঘিবকে বাঁচাতে চাইলেন কেন? আরসালানের বাবা পারভেজ আখতার বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘ঠিক কী হয়েছিল, জানা নেই। এ দিন জামিন পেয়ে আরসালান বাড়িতে ফিরলেও সে আতঙ্কে রয়েছে।’’ পুলিশ রাঘিবকে জেরা করে জেনেছে, ২০১৭ সালেও লেক টাউনে পোর্সে গাড়ি চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটান তিনি। কিন্তু কে এক ব্যক্তিকে ধাক্কা মেরেছিল, পুলিশ সেই সময় তা জানতে পারেনি। ওই বছরেই সৈয়দ আমির আলি অ্যাভিনিউয়ে বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালানোর অভিযোগ ওঠে আরসালান সংস্থার বিরুদ্ধে। সেই গাড়িটিও রাঘিব চালাচ্ছিলেন বলে পুলিশ অফিসারদের সন্দেহ।

শেক্সপিয়র সরণিতে দুর্ঘটনার রাতে ঠিক কী হয়েছিল? লালবাজার জানায়, এজেসি বোস রোডের একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের অধ্যক্ষের ছেলের জন্মদিনের পার্টিতে গিয়েছিলেন রাঘিব। রাতে সল্টলেকের এক বন্ধুকে গাড়িতে তুলে নিয়ে তাঁকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। তার পরে কিড স্ট্রিটের এক বন্ধুর ফোন পেয়ে গাড়ি নিয়ে সেখানে যান। কিড স্ট্রিটের বন্ধু রাঘিবকে প্রথমে জানিয়েছিলেন, সল্টলেকের বন্ধুকে তিনিই বাড়িতে পৌঁছে দেবেন। কিন্তু রাঘিব কিড স্ট্রিটে পৌঁছে জানতে পারেন, ওই বন্ধু বেরোতে পারবেন না। তাই সল্টলেকের বন্ধুকে নিয়ে তিনিই রওনা দেন। জওহরলাল নেহরু রোড ও শেক্সপিয়র সরণি ধরে ঘণ্টায় প্রায় ১৫০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি ছুটিয়ে দেন রাঘিব।

এ দিনই আরসালান এবং তাঁর মামাকে শর্তসাপেক্ষে জামিন দেন ব্যাঙ্কশাল কোর্টের বিচারক দীপাঞ্জন সেন। শর্ত: দু’জনকেই পাসপোর্ট জমা রাখতে হবে তদন্তকারীর কাছে এবং তদন্তের প্রয়োজনে ডাকলে হাজির হতে হবে। রাঘিবকে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। অভিযুক্তদের আইনজীবী দেবজ্যোতি সেনগুপ্ত আদালতে জানান, তাঁর মক্কেলদের যে-কোনও শর্তে জামিন দেওয়া হোক। সরকারি আইনজীবী অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায় জানান, আরসালান পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে বলেছিলেন, গাড়ি চালাচ্ছিলেন তিনিই। পুলিশ পরে জানতে পারে, গাড়ির চালক ছিলেন রাঘিব। এই মামলায় আরসালানের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ লোপাটের চেষ্টা এবং হামজার বিরুদ্ধে রাঘিবকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ যোগ করার আবেদন জানান অভিজিৎবাবু। আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy