সব্যসাচী দত্ত। —ফাইল চিত্র।
বিধাননগর বিধানসভায় জেতেননি সব্যসাচী দত্ত। তার পর থেকেই তিনি কার্যত ঘরবন্দি। প্রথম দিকে এক দু’বার দলের ডাকে বৈঠকে এলেও এখন তা-ও বন্ধ। আক্রান্ত কর্মীদের পাশে দাঁড়ানোর দায়িত্ব দেওয়া হলেও তাতে নাকি তাঁকে দেখা যাচ্ছে না। এমনকি, বাড়ি থেকে দলের ভার্চুয়াল বৈঠকেও যোগ দিচ্ছেন না। দেখেশুনে গেরুয়া শিবিরের একাংশে প্রশ্ন, সব্যসাচী কি এখনও বিজেপি-তে আছেন?
বিধাননগরের প্রাক্তন মেয়রের অবশ্য দাবি, এ সবই জল্পনা। নিজের অসুস্থতা এবং করোনা পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারের আরোপিত বিধিনিষেধের জন্যই তিনি বাড়ি থেকে বেরোচ্ছেন না। তবে সব্যসাচী-ঘনিষ্ঠদের অনেকে মনে করছেন, ‘দাদা’ এখন রাজনীতি থেকে একটু দূরে দূরেই থাকতে চাইছেন।
বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার পর থেকেই রাজারহাট নিউটাউনের প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক ‘বেশি সুবিধাজনক’ ভেবে বিধাননগরে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। মেনে নেয় নতুন দল। তাঁর হয়ে অমিত শাহ প্রচারেও আসেন। কিন্তু প্রায় ৮,০০০ ভোটে তৃণমূলের সুজিত বসুর কাছে হারেন তিনি।
এর পর থেকেই সব্যসাচী ঘরবন্দি। কলকাতায় জেপি নড্ডার ডাকা বৈঠকে অবশ্য গিয়েছিলেন। কিন্তু এর পর তাঁকে আর বিশেষ দেখা যায়নি। গত শুক্রবার রাজ্য বিজেপি পদাধিকারিদের বৈঠকেও তিনি গরহাজির ছিলেন। গেরুয়া শিবির সূত্রে জানা গিয়েছে, বিধাননগর ছাড়াও উত্তর কলকাতার কাশীপুর, বেলগাছিয়া, মানিকতলা-সহ কিছু এলাকায় যে সব কর্মী-সমর্থক আক্রান্ত বলে অভিযোগ জানাচ্ছেন, তার রিপোর্ট তৈরি করে দলকে দেওয়ার দায়িত্ব পেয়েছিলেন সব্যসাচী। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সে রিপোর্ট পাওয়া যায়নি বলেই বিজেপি সূত্রে খবর।
সব্যসাচীর হয়ে ভোটে কাজ করা বিধাননগর বিধানসভার অন্তর্গত দত্তাবাদ এলাকার বিজেপি কর্মীরাও দলীয় নেতৃত্বের কাছে তাঁর বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ করেছেন বলে জানা গিয়েছে। তাঁদের দাবি, সাহায্য ও পরামর্শের আশায় সব্যসাচীর বাড়িতে গেলে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা কর্মীরা তাঁদের ঢুকতেই দেয়নি! ঘটনার কথা স্বীকার করে সব্যসাচী বলেন, ‘‘ফল ঘোষণার পরের দিনই কয়েকজন এসেছিলেন। তখন আমার পক্ষে কিছু করার ছিল না। তাঁদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি এটা ঠিক। তবে সেটা আমি জানতাম না। নিরাপত্তা কর্মীদের ওই আচরণের কথা পরে জানতে পেরেছি।’’
বিজেপি-র বিধাননগর মণ্ডল সভানেত্রী পিয়ালি বসু অবশ্য স্পষ্ট করে সব্যসাচীর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ জানাননি। যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে তিনি বলেন, ‘‘দত্তাবাদ এলাকায় অনেক কর্মী আক্রান্ত। আমি তাঁদের সাহায্যের জন্য যা যা করণীয় করে চলেছি। পুলিশে অভিযোগ থেকে স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলারকে ফোন— সবই করেছি।’’ এই কাজে তিনি সব্যসাচীকে পাশে পেয়েছেন কি? পিয়ালি সে প্রশ্নের জবাব দিতে চাননি।
রাজ্য বিজেপি নেতারা কেউ প্রকাশ্যে সব্যসাচীর অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন না তুললেও দলে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। নিচুস্তরের কর্মীদের বক্তব্য, সব্যসাচী অনেক সময় ফোনও ধরছেন না। প্রশ্ন করায় সব্যসাচী বলেন, ‘‘ফোন ধরছি না এটা ঠিক নয়। তবে অনেক ক্ষেত্রেই পরিস্থিতির কারণে কর্মীদের পাশে দাঁড়াতে না পারার জন্য অসহায় বোধ করছি। দত্তাবাদ এলাকায় গোলমালের খবর জানি। কিন্তু আমি সেখানে গেলে উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে।’’ পাশাপাশিই তিনি বলেন, ‘‘আমার শরীরও বেশ কিছুদিন ধরে খারাপ যাচ্ছে। চোখের সমস্যাতেও ভুগছি। রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, সংগঠন সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে।’’
উত্তর কলকাতার দায়িত্ব পাওয়ার কথাও মেনে নিয়ে সব্যসাচী বলেন, ‘‘রাজ্যে যে লকডাউন পরিস্থিতি রয়েছে, তাতে ঘোরাফেরা করা সম্ভব নয়। নেতৃত্বের সঙ্গেও কথা হয়েছে। তাঁরাও সেটাই বলেছেন। দলেরও কোনও বৈঠক এখন হচ্ছে না। ভার্চুয়াল বৈঠক হলেও আমার বাড়িতে সেই বৈঠকে যোগ দেওয়ার পরিকাঠামোগত সুবিধা না থাকায় যোগ দিতে পারছি না।’’ রাজ্য বিজেপি-র একাংশের অবশ্য বক্তব্য, ইচ্ছা থাকলে যে কাজ করা যায়, সেটা দলের অনেক নেতা-কর্মী করে দেখাচ্ছেন। মোবাইল ফোন থেকেই ভার্চুয়াল বৈঠকে যোগ দেওয়া যায়। সব্যসাচী যা বলেছেন, সেটা যুক্তি হতে পারে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy