Advertisement
০৮ অক্টোবর ২০২৪
RG Kar Issue

মেডিক্যাল কলেজের ৯০ শতাংশ কাজের সময়সীমা জানিয়েছে নবান্ন, তবে বহু কাজের বরাত এখনও বাকি

সোমবার মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ সাংবাদিক বৈঠকে যা বলেছিলেন, তাতে মনে করা হচ্ছে বৃহস্পতিবারের মধ্যে সরকারি হাসপাতালগুলিতে নির্মাণ এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত কাজ অনেকটাই শেষ হয়ে যাবে।

Many proposed development of Government Medical College are pending till date

গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৪ ১৯:০১
Share: Save:

অনশন তুলে জুনিয়র ডাক্তারেরা কাজে ফিরুন। তাঁদের দাবি অনুযায়ী বকেয়া কাজের ৯০ শতাংশই ১০ তারিখের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। সোমবার বলেছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। পন্থ কোনও মাসের উল্লেখ করেননি। কিন্তু ধরে নেওয়া হচ্ছে ‘১০ তারিখ’ বলতে তিনি ১০ অক্টোবরের কথাই বলছেন। কারণ, অন্য একটি প্রসঙ্গে তিনি ‘১ নভেম্বর’ বলেছেন মাসের উল্লেখ করেই। কিন্তু মুখ্যসচিবের কথামতো ১০ (অক্টোবর) তারিখের মধ্যে ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হবে কি না, তা নিয়ে খানিকটা ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। কারণ, হাতে সময় ৭২ ঘণ্টা। আর ওই কাজগুলির বরাত দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকার সদ্যই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। ঘটনাচক্রে, যে মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল নিয়ে সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন, সেই আরজি করের জন্য নির্দিষ্ট উন্নয়ন প্রকল্পের বিজ্ঞপ্তিও রয়েছে সদ্যপ্রকাশিত তালিকায়।

সোমবার নবান্নে ‘রাত্তিরের সাথী’ প্রকল্প নিয়ে ‘রিভিউ মিটিং’ হয়। তার পরেই মুখ্যসচিব পন্থ ওই সময়সীমার কথা জানিয়েছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন, ১০ তারিখের মধ্যে মেডিক্যাল কলেজগুলির উন্নয়ন এবং সংস্কারমূলক সব কাজ প্রায় শেষ হয়ে যাবে। সিসি ক্যামেরা বসানো থেকে ডিউটি রুম, শৌচাগার থেকে বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ— চিকিৎসকদের দাবির মধ্যে যেগুলি আছে, তার সবই প্রায় শেষের পথে। ‘রেফারেল সিস্টেম’ নিয়েও আলোচনা হয়েছে। ১৫ (অক্টোবর) তারিখ থেকে তা নিয়ে একটি পাইলট প্রজেক্ট শুরু হচ্ছে বলেও জানিয়েছিলেন পন্থ। তিনি বলেছিলেন, ‘‘১ নভেম্বর থেকে পুরো রাজ্যে ওই প্রক্রিয়া চালু হবে, এই লক্ষ্য নিয়েই আমরা এগোচ্ছি।’’ সব হাসপাতালে ‘প্যানিক বাটন’ ব্যবস্থা চালুরও দাবি ছিল। সেটিও ১ নভেম্বর থেকে চালু হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যসচিব।

সাত জন জুনিয়র ডাক্তার যে ১০ দফা দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেছেন, তার মধ্যে রয়েছে সব মেডিক্যাল কলেজে সিসি ক্যামেরার সংখ্যা বাড়ানো, চিকিৎসকদের বিশ্রামের জন্য ‘রেস্ট রুম’ নির্মাণ, মহিলাদের জন্য পৃথক শৌচালয় নির্মাণ। সেই কাজ অনেক জায়গায় শুরু হয়ে গিয়েছে ঠিকই। কিন্তু বেশ কিছু ক্ষেত্রে সদ্য বরাত দিতে চেয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে রাজ্যের পূর্ত দফতর। আরজি কর হাসপাতালের অ্যাকাডেমি বিল্ডিংয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের ‘রেস্ট রুম’ এবং পুরুষ-মহিলা আলাদা শৌচাগার সংস্কারের জন্য নবান্নের বরাদ্দ ১৫,৭৭,৪২৬ টাকা। সেই কাজের জন্য বরাত চেয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে গত ১৪ সেপ্টেম্বর। সেখানে উল্লেখ করা রয়েছে, নির্মাণকারী সংস্থা দরপত্র জমা দিতে পারবেন ৭ অক্টোবর (সোমবার) পর্যন্ত। সমস্ত দরপত্র খুলে দেখা হবে ৯ অক্টোবর বুধবার। এর পরে বাছাই সংস্থাকে কাজের নির্দেশ দেওয়া হবে। যদিও দ্রুত কাজ শেষ করতে হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘ওয়ার্ক অর্ডার’ দেওয়ার সাত দিনের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে।

আরজি করের কলেজ বিল্ডিংয়ের নীচের তলায় ‘মাল্টি সেন্সর ডিটেক্টর’, ‘ডিসপ্লে বোর্ড’ মেরামত এবং ‘ফায়ার ডিটেকশন প্যানেল’ তৈরির জন্যও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে পূর্ত দফতর। ৪ অক্টোবর প্রকাশিত ওই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, দরপত্র জমা নেওয়া হবে ২৯ অক্টোবর দুপুর ২টো পর্যন্ত। ক্যালকাটা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের চেস্ট বিল্ডিং, প্রশাসনিক ভবন, ক্যান্সার বিভাগে দুর্ঘটনা রুখতে কিছু নির্মাণকাজের জন্য বরাত চেয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে গত ২৭ সেপ্টেম্বর। সব মিলিয়ে এক কোটি টাকারও বেশি খরচের ওই কাজের জন্য পূর্ত দফতর দরপত্র জমা নেবে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত। দরপত্র যাচাইয়ের কাজ শুরু হবে ১৭ অক্টোবর। যে সংস্থা বরাত পাবে, তারা সর্বোচ্চ ১২০ দিন সময় পাবে কাজ শেষ করতে।

বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজে সিসি ক্যামেরা বসানো এবং সেই সংক্রান্ত পরিকাঠামো তৈরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। তাতে বলা হয়েছে, সিসি ক্যামেরা বসাতে হবে পুরনো এবং নতুন ‘লেডিজ় হস্টেল’, ‘রবিন হল হস্টেল’, ‘ডাক্তার চুমারি হস্টেল’, ‘এসআরবি বয়েজ় হস্টেল’ এবং ‘কটেজ বিল্ডিং’-এ। ওই কাজের জন্য জমা পড়া দরপত্র খোলা হবে বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর। মর্গ থেকে নার্স হোস্টেল, চক্ষুবিভাগ থেকে হাসপাতালের অন্যান্য জায়গায় সিসি ক্যামেরা বসানোর জন্য আরও একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে পূর্ত দফতর। সেটির ক্ষেত্রেও মঙ্গলবার পর্যন্ত জমা পড়া দরপত্র পূর্ত দফতর খুলে দেখবে বৃহস্পতিবার।

সেই প্রেক্ষিতেই প্রশাসনিক মহলের একাংশে প্রশ্ন উঠেছে, ৯০ শতাংশ কাজ বৃহস্পতিবারের মধ্যে হয়ে যাবে বলে মুখ্যসচিব যে দাবি করেছেন, তা কি সম্পন্ন হবে? পূর্ত দফতরের এক কর্তার অবশ্য বক্তব্য, ‘‘মুখ্যসচিব ৯০ শতাংশ কাজ হয়ে যাবে বলেছেন। বাকি থাকবে ১০ শতাংশ। যে বিপুল পরিমাণ কাজ হচ্ছে, তাতে ১০ শতাংশও অনেকটা। এই কাজগুলি সেই ১০ শতাংশের মধ্যেও পড়তে পারে।’’ পূর্ত দফতরের ওই কর্তার এ-ও দাবি যে, ‘প্যানিক বাটন’ চালুর যে সময়সীমা মুখ্যসচিব দিয়েছেন, তার মধ্যে কাজ অনেকটাই এগিয়ে যাবে। কারণ, হাতে অক্টোবরের বাকি ২০ দিন রয়েছে। তবে পুজোর মধ্যে খানিকটা চাপ নিয়েই কাজ করতে হচ্ছে বলেও তাঁর বক্তব্য।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE