মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, দীপ্সিতা ধর, সায়নদীপ মিত্র এবং ঐশী ঘোষ।
পশ্চিমবঙ্গে ঘুরে দাঁড়াতে হলে সংগঠনের খোলনলচে বদলানো ছাড়া গতি নেই। সিপিএমের অন্দরে এই মতামত জোরালো হচ্ছে ক্রমশ। নতুন মুখ তুলে আনার দাবি উঠেছে দীর্ঘদিন। সেই চাহিদাকে মান্যতা দিয়েই সিপিএমের পরবর্তী রাজ্য কমিটিতে, এমনকি রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতেও, দেখা যেতে পারে অনেক নতুন মুখ এবং তরুণ মুখ।
মঙ্গলবার থেকে কলকাতায় দলের জেলা দফতর প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে শুরু হয়েছে সিপিএমের ২৬তম রাজ্য সম্মেলন। সেই সম্মেলনে নির্বাচিত হবে নতুন রাজ্য কমিটি। প্রস্তাবিত হবে নতুন সম্পাদকমণ্ডলী। এবং মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়-সহ একঝাঁক নতুন মুখের সংযোজন হতে পারে নতুন সম্পাদকমণ্ডলীতে। সম্মেলনের প্রথম দিনেই সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি নিজের বক্তৃতায় বলেন, “২০১৬ সালে রাজ্য প্লেনাম হয়। সেই প্লেনামে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত দলের সর্বস্তরের কমিটির ক্ষেত্রে এখনও সেই সব সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়নি। সকলকে বুঝতে হবে, সংগঠনের খোলনলচে না বদলালে, দল কিছুতেই রাজ্যে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না।” তাঁর এমন বক্তব্য সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর নতুনদের সংযোজনের জল্পনা আরও উস্কে দিয়েছে।
বয়সসীমার কড়াকড়ির কারণে সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব থেকে এ বার আনুষ্ঠানিক ভাবে বিদায় নেবেন বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র, রবীন দেব, অশোক ভট্টাচার্য ও মৃদুল দে-রা। ঠিক হয়েছে— ৭৫ বছরের বেশি বয়সি কেউ আর রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে থাকবেন না। এ বারের সম্মেলনে ৪০২ জন প্রতিনিধি ছাড়াও ১০৫ জন পর্যবেক্ষক বা আমন্ত্রিত দর্শক অংশ নিয়েছেন। বৃহস্পতিবার নতুন রাজ্য কমিটি গঠনের মাধ্যমে সম্মেলন শেষ হবে। সেখানেই নতুন সম্পাদককে দায়িত্ব দেওয়ার পাশাপাশি সম্পাদকমণ্ডলীর প্রস্তাবিত নামগুলি ঘোষণা হতে পারে। মীনাক্ষী ছাড়াও সেখানে থাকতে পারে দীপ্সিতা ধর, সায়নদীপ মিত্রের মতো তরুণদের নাম। থাকতে পারেন ঐশী ঘোষও।
কৃষক সভার প্রতিনিধি হিসেবে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে ঢুকতে পারেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার নেতা তুষার ঘোষ। কারণ, কৃষকসভার অমল হালদার ও বিপ্লব মজুমদার এই সম্মেলন থেকেই বয়সজনিত কারণে সরে যাবেন। উত্তরবঙ্গের অশোক ভট্টাচার্যের জায়গায় সম্পাদকমণ্ডলীতে জায়গা পেতে পারেন প্রাক্তন রাজ্যসভা সাংসদ সমন পাঠক।
এ ছাড়াও, গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির রাজ্য সম্পাদিকা কণীনিকা ঘোষ আসতে পারেন সম্পাদকমণ্ডলীতে। সিপিএমের হুগলি জেলার সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সম্পাদক সুশান্ত ঘোষকেও স্থান দেওয়া হতে পারে সম্পাদকমণ্ডলীতে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা থেকে আসতে পারেন তাপস সিংহও। তবে মীনাক্ষী, দীপ্সিতা, ঐশী, সায়নদীপরা রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে এলে তারুণ্যের অন্তর্ভুক্তিতে তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হবে রাজ্য সিপিএমের রাজনীতিতে।
গত বিধানসভা ভোট থেকেই এইসব ছাত্র-যুব নেতাদের সামনে আনার কাজ শুরু করেছিল আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শুভেন্দু অধিকারীর দ্বৈরথেও আলাদা করে নজর কেড়েছিলেন মীনাক্ষী। সম্প্রতি ছাত্রনেতা আনিস খানের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সিপিএমের ছাত্র-যুবরা যে আন্দোলন সংগঠিত করেছিলেন তাঁর নেতৃত্বেও তিনি ছিলেন। সেই আন্দোলনে জেলেও থাকতে হয়েছে তাঁকে। এমন একজন লড়াকু যুবনেত্রীকে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে এনে সংগঠনে নতুন অক্সিজেন দিতে চাইছে সিপিএম। বিধানসভা ভোটে বালি কেন্দ্রে দীপ্সিতা, জামুরিয়াতে ঐশী ও কামারহাটিতে লড়াই করেন সায়নদীপ। প্রত্যেকেই পরাজিত হয়েছেন। কিন্তু আগামী প্রজন্মের নেতৃত্ব হিসেবে তাঁদেরই বেছে নিতে পারে মুজাফফর আহমেদ ভবন। বৃহস্পতিবার এই নতুন সদস্যদের নাম প্রস্তাবিত হলেও, সম্পাদকমণ্ডলী চূড়ান্ত হবে না এখনই। এপ্রিল মাসে কেরলের কন্নুরের সিপিএমের পার্টি কংগ্রেস থেকেই চূড়ান্ত মান্যতা পাবে পশ্চিমবঙ্গ সংগঠনের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy