‘কর্মশ্রী’ প্রকল্পে জবকার্ড প্রাপকদের একটা বড় অংশকে এ বারও কাজ দেওয়া গেল না। নবান্ন সূত্রের খবর, গত বছরের তুলনায় এ বার কাজ পাওয়া জবকার্ড প্রাপকের সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু তাতেও রাজ্যের মোট জবকার্ড প্রাপকের মধ্যে ২৬ শতাংশ শ্রমিককে কাজ দেওয়া গিয়েছে। তার মধ্যে চারটি জেলায় বছরে গড়ে ৫০ দিন কাজও দেওয়া যায়নি।
রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার বলেন, “যেখানে সংখ্যাটা কম, সেখানে কী ভাবে আরও কাজ দেওয়া যায়, আমরা আলাদা ভাবে দেখব। ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পেও বহু জবকার্ড প্রাপক কাজ পাচ্ছেন। অর্থবর্ষ শেষ হতে এক মাস আছে। সংখ্যাটা বাড়বে।”
কেন্দ্রীয় সরকার একশো দিন কাজের প্রকল্পে বরাদ্দ বন্ধ রাখায় ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে জবকার্ড প্রাপকদের সরকারি প্রকল্পে কাজ দিতে নির্দেশ দেয় রাজ্য। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সে জন্য আলাদা ভাবে ‘কর্মশ্রী’ প্রকল্প চালু করেন। ঘোষণা করেন, এই প্রকল্পে জবকার্ডধারীদের বছরে ৫০ দিন কাজ দেওয়া হবে। পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন, সেচ, পূর্ত, জনস্বাস্থ্য কারিগরি-সহ প্রায় ৩০টি দফতরের কাজে ঠিকা সংস্থাগুলিকে জবকার্ড প্রাপকদের কাজ দিতে বলা হয়। কিন্তু অনেক ঠিকা সংস্থা তাঁদের কাজে নিতে গড়িমসি করে বলে অভিযোগ।
নবান্ন সূত্রের দাবি, ‘কর্মশ্রী’ প্রকল্পে গত অর্থবর্ষে ৬৪ লক্ষ ৩১ হাজার ৫১ জনকে রাস্তা তৈরি, মাটি কাটা, বাঁধ তৈরির মতো কাজ দেওয়া হয়। এ বার ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত ৬৪ লক্ষ ৮৫ হাজার ৩৫৯ জনকে কাজ দেওয়া গিয়েছে। অর্থাৎ, গত অর্থবর্ষের তুলনায় এ বার ৫৪ হাজারের বেশি মানুষ কাজ পেয়েছেন। যদিও রাজ্যে নথিভুক্ত জবকার্ড প্রাপকের সংখ্যা আড়াই কোটির বেশি। যার অর্থ হল, মোট জবকার্ড প্রাপকদের মধ্যে ৭৪ শতাংশ শ্রমিককে এই প্রকল্পে কাজ দেওয়া যায়নি।
রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তার দাবি, এ বার রাজ্যের ২২টি জেলায় এখনও পর্যন্ত গড়ে ৫৭ দিন কাজ দেওয়া গিয়েছে। যদিও তার মধ্যে ১২টি জেলা রাজ্যের গড়ের থেকে কম দিন কাজ দিতে পেরেছে। কর্মদিবস সৃষ্টিতে প্রথমে রয়েছে নদিয়া (গড়ে ৬৫ দিন), জলপাইগুড়ি (গড়ে ৬৪ দিন), উত্তর দিনাজপুর (গড়ে ৬৩ দিন)। উত্তরবঙ্গের অন্য চার জেলা দার্জিলিং (গড়ে ৩৪ দিন), কোচবিহার (গড়ে ৪৬ দিন) এবং দক্ষিণ দিনাজপুর ও কালিম্পংয়ে (গড়ে ৪৭ দিন) সব থেকে কম কর্মদিবস তৈরি হয়েছে। ওই প্রশাসনিক কর্তার দাবি, “কর্মদিবস তৈরিতে পিছিয়ে থাকা জেলাগুলিকে উঠেপড়ে লাগতে বলা হয়েছে।”
জেলাগুলি কী করছে? এই প্রকল্পে অন্যতম পিছিয়ে পড়া জেলা কোচবিহারের অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) হিমাদ্রি সরকার বলেন, “এখানে শ্রমিকদের চাহিদা অনুযায়ী কাজ দেওয়া হয়। হতে পারে, কোথাও কাজের চাহিদা কম ছিল। তবে সমস্ত দফতর ‘কর্মশ্রী’ প্রকল্প দেখছে।” তাঁর দাবি, “গত বার ৫৩ হাজার মানুষকে কাজ দেওয়া গিয়েছিল। এ বারে তিন গুণের বেশি বেড়ে এক লক্ষ ৭০ হাজার মানুষকে কাজ দেওয়া হয়েছে। আগামী ক’দিনে আরও বাড়বে।”
তথ্য সহায়তা: নমিতেশ ঘোষ
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)