Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
100 days work

একশো দিনে সরকারি কর্মীও, অভিষেকের সাহায্যে বিতর্ক

একশো দিনের বকেয়া টাকা আদায়ে দিল্লিতে গিয়ে আন্দোলন করেছেন অভিষেক নিজে। সেই আন্দোলনে শামিল প্রকল্পের বঞ্চিতদেরই এখন তাঁর উদ্যোগে অর্থসাহায্য পাঠানো হচ্ছে।

100 days work

একশো দিনের কাজ করা ওই সরকারি কর্মীদের অনেকেই আবার বকেয়া মজুরির দাবিতে দিল্লিতে তৃণমূলের আন্দোলনে শামিল হন বলে অভিযোগ। প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

কিংশুক গুপ্ত
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ১০:২৮
Share: Save:

নিয়ম বলছে, সরকারি কোনও কর্মীই একশো দিনের কাজ পেতে পারেন না। অথচ জঙ্গলমহলে অভিযোগ, বহু ক্ষেত্রে নিয়মভঙ্গেরই ছবি। যাঁরা কাজ পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে আছেন সিভিক ভলান্টিয়ার, বাংলা সহায়তা কেন্দ্রের ডেটা এন্ট্রি অপারেটর, এনভিএফ কর্মীও। আরও অভিযোগ, একশো দিনের কাজ করা ওই সরকারি কর্মীদের অনেকেই আবার বকেয়া মজুরির দাবিতে দিল্লিতে তৃণমূলের আন্দোলনে শামিল হন। এখন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাঠানো অর্থসাহায্যও পাচ্ছেন তাঁরা। ঝাড়গ্রাম জেলায় এমন সব দৃষ্টান্ত সামনে রেখে সরব বিজেপি। তৃণমূল অবশ্য এতে দোষের কিছু দেখছে না।

একশো দিনের বকেয়া টাকা আদায়ে দিল্লিতে গিয়ে আন্দোলন করেছেন অভিষেক নিজে। সেই আন্দোলনে শামিল প্রকল্পের বঞ্চিতদেরই এখন তাঁর উদ্যোগে অর্থসাহায্য পাঠানো হচ্ছে। সেই মতো ঝাড়গ্রাম জেলায় গত মঙ্গলবার ৪টি ব্লকের ২৯ জনের হাতে টাকারখাম ও শুভেচ্ছাপত্র তুলে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ, সেই প্রাপক তালিকাতেই রয়েছেন ওই সরকারি কর্মীরা। আছেন তৃণমূল ব্লক সভাপতির ছেলে, সদ্য বিদায়ী পঞ্চায়েত সদস্য, তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতির কলেজ পড়ুয়া ভাইপোও।

ঝাড়গ্রাম জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক মনে করাচ্ছেন, একশো দিনের কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে আয়ের কোনও ঊর্ধ্বসীমা নেই। তবে এটি ‘কর্ম নিশ্চয়তা প্রকল্প’ হওয়ায় ধরেই নেওয়া যায়, আবেদনকারীর কাজ নেই বলেই কাজ চাইছেন। তিনি যোগ্য কি না, তা খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেন পঞ্চায়েত প্রধান। তাই এ ক্ষেত্রে অভিযোগ, গরিব মানুষকে বঞ্চিত করে অন্যায্য ভাবে সরকারি কর্মীদেরও কাজ পাইয়ে দিয়েছে তৃণমূলের পঞ্চায়েত।

অভিষেকের পাঠানো অর্থসাহায্য পেয়েছেন নয়াগ্রাম ব্লক তৃণমূল সভাপতি রমেশ রাউতের ছেলে কিংশুক রাউত, যিনি পেশায় এনভিএফ কর্মী। গোহালডিহা গ্রামের বাসিন্দা কিংশুক মানছেন, ‘‘লকডাউনের সময় জবকার্ড করিয়েছিলাম। ৪০ শ্রমদিবসের বকেয়া মজুরির পুরোটাই পেয়েছি। তবে টাকাটা আমার স্ত্রী শম্পাই নিয়েছে। আমরা স্বামী-স্ত্রী মিলেমিশে কাজ করলেও বেশিরভাগ দিন শম্পাই কাজ করেছিল।’’

একই ভাবে নয়াগ্রাম থানার সিভিক ভলান্টিয়ার অতনু পাত্রের স্বীকারোক্তি, ‘‘দিল্লির কর্মসূচিতে গিয়েছিলাম বলে ২৩ দিনের বকেয়া মজুরি নগদে পেয়েছি।’’ সাঁকরাইল ব্লকের বাংলা সহায়তা কেন্দ্রের ডেটা এন্ট্রি অপারেটর সন্তুকুমার কুইলাও বলেন, ‘‘বাবা কাজ করেছেন। আমি দিল্লিতে গিয়েছিলাম বলে আমার নামে টাকা এসেছে। ওই টাকাবাবাই নিয়েছেন।’’

জামবনি ব্লকের চিচিড়া পঞ্চায়েতের প্রাক্তন তৃণমূল প্রধান পঞ্চানন মান্ডি বলছেন, ‘‘যাঁরা স্থায়ী অথবা অস্থায়ী সরকারি চাকরি করেন, তাঁরা কোনও ভাবেই কাজ পাওয়ার যোগ্য নন। আমি প্রধান থাকাকালীন এমন লোককে আয়ের শংসাপত্র দিতাম, যাঁদের বার্ষিক পরিবারিক আয় ৩৫ থেকে ৫৫ হাজার টাকার মধ্যে।’’ জেলায় একশো দিনের প্রকল্পের ভারপ্রাপ্ত নোডাল অফিসার শুভ্রাংশ মণ্ডল বলছেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে আয়ের ঊর্ধ্বসীমা নেই ঠিকই।তবে কোনও সরকারি কর্মী, এমনকি কিছু ক্ষেত্রে বেসরকারি সংস্থার কর্মীও এই কাজ পেতে পারেন না। অবশ্য কেউ কাজ চাইলে তাঁর প্রয়োজন খতিয়ে দেখে কাজ দেওয়াটাও নিয়মের মধ্যেই পরে।’’

বিজেপির ঝাড়গ্রাম জেলা সহ-সভাপতি দেবাশিস কুণ্ডুর কটাক্ষ, ‘‘ভুয়ো মাস্টার রোলে যাঁদের নামে কাজ দেখানো হয়েছে, তাঁদের বাড়িতে অভিষেক টাকা পাঠাচ্ছেন। এতেই তো স্পষ্ট যে, এই প্রকল্পে কী ভাবে টাকা লুট হয়েছে!’’ তৃণমূলের ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি দুলাল মুর্মুর পাল্টা যুক্তি, ‘‘একটি জবকার্ডে একই পরিবারের অনেকে কাজ করেন। তাই আন্দোলনে যোগ দিতে যাঁরা পরিবারের প্রতিনিধি হয়ে দিল্লি গিয়েছিলেন, তাঁরা সবাই একশো দিনের কাজ করছেন, এমন না-ও হতে পারে। যাঁদের নিয়েপ্রশ্ন তোলা হচ্ছে, তাঁদের নামে টাকা এলেও কাজ করেছেন সেই পরিবারের অভাবী সদস্যরা।’’

অন্য বিষয়গুলি:

100 days work West Bengal Jungle Mahals
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy