Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Farmer Producer Company

ফড়েদের এড়িয়ে দিশা দেখাচ্ছে বিকল্প ব্যবস্থা

লাভ হয় ফড়ের। দাম পান না চাষি। তবে সেই ফাঁদ এড়িয়ে ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন অনেকেই। কী ভাবে?দেগঙ্গারই সুদর্শন মণ্ডল তাঁর খেতের পটল ৬০ টাকায় সরাসরি বেচছেন কলকাতার বাজারে।

ভেজিটেবিল প্রোডিউসার কোম্পানি বাজার থেকে আনাজ কিনে সুফল বাংলার স্টলে পাঠানোর জন্য প্যাকিং করছে। ছবি: সামসুল হুদা

ভেজিটেবিল প্রোডিউসার কোম্পানি বাজার থেকে আনাজ কিনে সুফল বাংলার স্টলে পাঠানোর জন্য প্যাকিং করছে। ছবি: সামসুল হুদা

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৫:১০
Share: Save:

উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গার চাষি সাজ্জাদ হোসেন খেতের পটল বেচছেন ৪০ টাকা কেজি দরে। কলকাতার বাজারে তা ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

দেগঙ্গারই সুদর্শন মণ্ডল তাঁর খেতের পটল ৬০ টাকায় সরাসরি বেচছেন কলকাতার বাজারে। সাজ্জাদের চেয়ে তিনি বাড়তি ২০ টাকা লাভ করছেন।

পার্থক্য একটাই। সাজ্জাদ আনাজ বেচেন দেগঙ্গা বা বেড়াচাঁপা হাটে। সুদর্শন একটি এফপিসি-র (ফার্মার প্রোডিউসার কোম্পানি) সদস্য-সম্পাদক। ওই সংস্থার ৭৩৫ জন সদস্যই ফড়েদের এড়িয়ে নিজেদের আনাজ নিজেরাই বাজারজাত করছেন। সরাসরি গাড়িতে আনাজ তুলে চলে আসছেন তাঁরা। বিকল্প ব্যবস্থাগুলির মধ্যে এটাই সবচেয়ে কার্যকর বলে মেনে নিয়েছেন অনেক চাষি।

এফপিসি কী?

উদ্যানপালন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ব্যবস্থা আসলে অনেক চাষিকে জোটবদ্ধ করা। কেন্দ্রের একটি প্রকল্পের আওতাধীন। ২০১১-’১২ সালে ‘পাইলট প্রকল্প’ চালু হয়। কেন্দ্র কিছু আর্থিক সাহায্য করে। এতে সংস্থার পক্ষ থেকে চাষিদের কম দামে সার-বীজ-কৃষি সরঞ্জাম বিলি করা হয়। বিভিন্ন বাজার, ‘সুফল বাংলা’ স্টল এবং কিছু ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে আনাজ বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়। লাভের অর্থ জমির পরিমাণ অনুযায়ী সদস্যদের মধ্যে বণ্টন করা হয়। টাকা জমা পড়ে চাষিদের অ্যাকাউন্টে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত তো বটেই, এই সংস্থা বিদেশেও আনাজ রফতানি করে।

ফড়েদের নাগাল এড়িয়ে বেশ কয়েকটি এফপিসি লাভের মুখ দেখছে উত্তর ২৪ পরগনায়। বনগাঁ, গাইঘাটা, আমডাঙা, ব্যারাকপুরে সংস্থাগুলির সদস্য দিনদিন বাড়ছে। আমডাঙা-বনগাঁ-দেগঙ্গার কৃষকেরা জানান, লকডাউনের সময় কার্যত অসাধ্য সাধন করেছে সংস্থাগুলি। পরিবহণ ব্যবস্থা ছিল না বলে বাজার উপচে পড়ছিল স্থানীয় আনাজে। ফলে, পটল ৫ টাকা, ঝিঙে ২ টাকা, কুঁদরি ১ টাকা, বেগুন ৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। এফপিসিগুলির পাশে দাঁড়ান জেলার সহ-উদ্যানপালন অধিকর্তা শুভদীপ নাথ। তিনি সরাসরি কলকাতার কয়েকটি স্বনির্ভর গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রিত বাজার এবং সরকারি স্টলগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন। ফলে, এফপিসির সদস্যেরা তাঁদের আনাজ লরি ভাড়া করে সরাসরি বাজারে নিয়ে যান। তুলনায় বেশি দাম মেলে।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়েও রয়েছে এমন একটি সংস্থা। দুই মেদিনীপুর, হাওড়া এবং নদিয়াতেও গড়ে উঠেছে এমন সংস্থা। সম্প্রতি মুর্শিদাবাদেও শুরু হয়েছে।

ভাঙড়ের সংস্থাটির সদস্য ১৭৫০ জন। সংস্থার চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার খান বলেন, ‘‘চাষিদের মোট জমির পরিমাণ ৮০০ একর। চাষিদের নিয়ে বিভিন্ন নামে ১১৭টি গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে। প্রতিটি গ্রুপ থেকে দু’জন করে নিয়ে ২৩৪ জনের পরিচালন সমিতি তৈরি করা হয়েছে। তার মধ্যে থেকে ১০ জনকে নিয়ে তৈরি হয়েছে পরিচালন পর্ষদ।’’

ওই সংস্থার সদস্য ইজরায়েল মোল্লা এবং আসাদুল ইসলাম বলেন, “সংস্থা সরাসরি আনাজ বিক্রির ব্যবস্থা করছে বলে চিন্তা কমেছে। ফড়েদের নাগালের বাইরে বেশি দাম পাচ্ছি। সংস্থা সারা বছর আমাদের পাশে থেকে নানা ভাবে সহযোগিতা করে।” একই কথা বলছেন আমডাঙার চাষি সহিদুল মোল্লা, আসলাম গাজি, গোবিন্দ বিশ্বাসেরা।উত্তর ২৪ পরগনার সহ-উদ্যানপালন অধিকর্তা বলছেন, “এফপিসি ভাল কাজ করছে ঠিকই। তবুও বহু পথ হাঁটা এখনও বাকি। লক্ষ লক্ষ চাষির এখনও ভরসা সেই হাট-বাজার। অধিকাংশ চাষিকে এমন সংস্থার আওতায় আনলে নতুন ব্যবস্থা তৈরি হবে।” এফপিসি-তে চাষিদের আস্থা বাড়ছে। কিন্তু এর আগে ক্রেতা-বিক্রেতার মাঝে যাতে আর কেউ না-থাকে, সেই উদ্দেশ্যেই রাজ্য জুড়ে তৈরি হয়েছিল কিসান মান্ডি। চাষিদের কতটা কাজে আসছে সেই মান্ডিগুলি?

অন্য বিষয়গুলি:

Farmer Producer Company Farmer Agriculture
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy