মনোরঞ্জন ব্যাপারী। — ফাইল চিত্র।
বিজেপি ঘুরে জোড়াফুল শিবিরে ফিরে আসা নেতাদের আক্রমণ শানালেন বলাগড়ের তৃণমূল বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী। বুধবার বিধানসভায় উপস্থিত ছিলেন মনোরঞ্জন। সেখানেই, সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় দলবদলুদের ‘সুবিধাভোগী-ধান্দাবাজ’ বলে খোঁচা দিলেন তিনি।
গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলের বেশ কয়েক জন নেতা-কর্মী দল ছেড়ে যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে। তালিকায় ছিলেন একাধিক হেভিওয়েটও। কিন্তু বিধানসভার ফল ঘোষণার পরই উল্টো ছবি দেখা গিয়েছে। এই রাজনৈতিক ‘ওঠানামা’ নিয়েই মুখ খুলেছেন মনোরঞ্জন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি আসলে লেখালিখির জগতের মানুষ। কিন্তু বিধায়ক হতে হয়েছিল এই জন্য যে বিজেপিকে রুখতে হবে, বিজেপিকে ঠেকাতে হবে। এমন একটা সময়, যখন বাংলাটাকে বিজেপি গ্রাস করে নেবে এমন একটা রব উঠে গিয়েছে। তখন আমাদের মনে হয়েছিল, বিজেপি যদি এসে যায় তা হলে আমাদের বাংলা ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি সব ধ্বংস করে দেবে।” তিনি আরও বলেন, “আমাকেও তো হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছিল— গৌরী লঙ্কেশকা ভাই বনা দেঙ্গে। তখন আমাদের মনে হয়েছিল, মরতে যখন হবেই তখন লড়ে মরি। তার পর দিদি সেই সুযোগটা দিলেন। দেওয়ার পর লড়লাম।’’ প্রসঙ্গত বলাগড় বিধানসভা কেন্দ্রে ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বিপুল ভোটে এগিয়ে ছিল বিজেপি। কিন্তু বিধানসভা ভোটে বিজেপি প্রার্থীকে হারিয়ে জিতে যান মনোরঞ্জন।
দলবদলের হিড়িকে পা মিলিয়েছিলেন মনোরঞ্জনের নির্বাচনী কেন্দ্র বলাগড়ের তৃণমূল নেতানেত্রীদের একাংশও। সেই ‘অভিজ্ঞতা’ তুলে ধরে মনোরঞ্জন বলেন, ‘‘সেই সময় আমি ১৫৩ জন পর্যন্ত গুনতে পেরেছিলাম। তার পর আমি গুনতে পারিনি। তখন মনে হয়েছিল, এই যে বেইমান, বিশ্বাসঘাতক, মিরজাফরের দল, বাংলাটাকে যারা ধ্বংস করতে চায়, তাদের মুখের মতো জবাব দিতে হবে। লড়তে হবে। সেই লড়াই লড়েছি। দিদি সুযোগ দিয়েছেন। যারা সুবিধাভোগী, ধান্দাবাজ তারা যে দিকে পাল্লা ভারী সে দিকেই ঝুঁকে যায়। যখন বাংলা বিপন্ন, বাঙালি বিপন্ন, এবং তৃণমূল দল বিপন্ন, সেই সময় যারা দল ছেড়ে চলে গেল, আজকে তৃণমূলের সুদিনে তারা দলে ফিরছে। তাদের সুবিধাভোগী ছাড়া আর কী বলা যায়।’’
এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘তৃণমূল একটা গণতান্ত্রিক দল। এই দলে সবাই নিজেদের মতামত রাখতে পারেন। তবে দলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শীর্ষ নেতৃত্বই নেবেন।’’
সাংবাদিকরা মনোরঞ্জনকে প্রশ্ন করেন, তিনি বিধায়ক পদ ছাড়তে চাইছেন কি না। কিছুটা লঘু সুরে বলাগড়ের বিধায়ক বলেন, ‘‘যদি দিদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন। একমাত্র দিদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদেশ আমার কাছে ভগবানের আদেশের চেয়ে বড়। উনি যা বলবেন তাই করব। তাতে আমার এক বারও দ্বিধা থাকবে না। আমি তো লোকের সঙ্গেই আছি। লোকজন আমাকে ভালবাসে। লোকের লড়াই-আন্দোলনে আমি আছি। বিধায়ক হিসাবেও আছি, বিধায়ক না হয়েও থাকব। লেখালিখির ক্ষতি হচ্ছে এটা ঠিক। কিন্তু বিধায়ক পদ ছাড়া বা না ছাড়াটা এক জন মানুষের আদেশের উপর নির্ভর করছে।’’
অবশ্য মনোরঞ্জন এও বলেন, ‘‘এত কাল আমি লেখালিখির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। মানুষের দুঃখ-বেদনা-যন্ত্রণার কথা লিখতাম। কিন্তু তাঁর দুঃখ-বেদনা দূর করতে আমার তরফ থেকে সেই ভাবে কোনও উদ্যোগ নেওয়ার সামর্থ্য ছিল না। বিধায়ক হওয়ার পর কিছু মানুষের চোখের জল মোছার উদ্যোগ নিতে পারছি। তাই নিজেকে আমি সন্তুষ্ট মনে করছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy