Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

দু’হাতে বাম ও তৃণমূল, মান্নান-পত্রে তুলকালাম

তিন বছর আগে বামেদের সঙ্গে সমঝোতার প্রথম এবং প্রবল প্রবক্তা ছিলেন মান্নানই। বিধানসভার অন্দরে বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীকে সঙ্গে নিয়ে ধারাবাহিক সমন্বয় করেই তিনি চলেছেন। প্রথম তাল কেটেছিল লোকসভা ভোটের আগে।

আব্দুল মান্নান।—ফাইল চিত্র।

আব্দুল মান্নান।—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৯ ০৩:৩৭
Share: Save:

নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করেই রাজ্যের তিন বিধানসভা আসনে উপনির্বাচনে লড়ার প্রস্ততি নিচ্ছে কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট। এরই মধ্যে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীকে লেখা বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের চিঠি প্রকাশ্যে আসায় তুলকালাম বাধল বিরোধী শিবিরের অন্দরে! উপনির্বাচনে কালিয়াগঞ্জ ও করিমপুর বাম-কংগ্রেসের মধ্যে ভাগাভাগির কথা বলার পাশাপাশি খড়গপুর সদর আসনে তৃণমূলকে সমর্থনের পক্ষে সওয়াল করেছেন মান্নান। যার জেরে সামাজিক মাধ্যমে বিরোধী দলনেতাকে তীব্র আক্রমণ ও বিদ্রুপের ঝড় তুলেছেন কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা।

তিন বছর আগে বামেদের সঙ্গে সমঝোতার প্রথম এবং প্রবল প্রবক্তা ছিলেন মান্নানই। বিধানসভার অন্দরে বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীকে সঙ্গে নিয়ে ধারাবাহিক সমন্বয় করেই তিনি চলেছেন। প্রথম তাল কেটেছিল লোকসভা ভোটের আগে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র ও সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের মধ্যে যখন লোকসভায় আসন ভাগাভাগি নিয়ে কথা চলছে, তার মধ্যেই বিধান ভবনে দলীয় বৈঠকে কার্যকরী সভানেত্রী দীপা দাশমুন্সির ফোনে বক্তৃতা করে বিরোধী দলনেতা বলেছিলেন, বামেদের শর্ত মেনে জোট করা যায় না। তখন তাঁর পক্ষে ছিলেন দীপা, শঙ্কর মালাকার, নেপাল মাহাতোরা। এ বার চিঠি-বিতর্কে এখনও তাঁর পক্ষে কেউ দাঁড়াননি।

কংগ্রেসের নেতা-কর্মীদের একাংশ মান্নানের যে চিঠির ভিত্তিতে সোমবার সামাজিক মাধ্যমে মুখর হয়েছেন, সেখানে লেখা আছে: কালিয়াগঞ্জ ও করিমপুরে বাম এবং কংগ্রেস সমঝোতা করে লড়তে পারে। কিন্তু খড়গপুরে কংগ্রেসের সাংগঠনিক অস্তিত্ব বলার মতো নয়। সেখানে বিজেপিকে হারানোর জন্য তৃণমূলকে সমর্থন করা যেতে পারে। কংগ্রেসেরই নেতা-কর্মীরা প্রশ্ন তুলেছেন, একই সঙ্গে বাম ও তৃণমূলের সঙ্গে সমঝোতা কী ভাবে সম্ভব? বিরোধী দলনেতার পদ বাঁচাতে তৃণমূলের সুনজরে থাকার চেষ্টা কি না, সেই প্রশ্নও তোলা হয়েছে। এমনকি, মান্নানের তত্ত্ব ‘অবাস্তব’ বলে নস্যাৎ করে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বও প্রশ্ন তুলেছেন, তাঁদের হাতে-থাকা করিমপুর অন্য কোনও দলকে ছেড়ে দেওয়ার কথা আসছে কী ভাবে? বহু বছরের হারা আসন খড়গপুরই বা তার ‘বিনিময়ে’ নেওয়ার যুক্তি আসছে কোথা থেকে?

এই সেই চিঠির অংশ।

মান্নান অবশ্য এই বিষয়ে সরাসরি জবাবে যেতেই চাননি। তাঁর কৌশলী মন্তব্য, ‘‘গৌতম বুদ্ধ বলেছিলেন, মানুষের বিবেকই সব চেয়ে বড় আদালত।’’ তবে দলের অন্দরে তাঁর যুক্তি, বাংলায় ১৮টা লোকসভা আসন জিতে বিধানসভায় বাজিমাতের যে স্বপ্ন তারা দেখছে, তা ঠেকানোর জন্য এই উপনির্বাচনকে কৌশলে ব্যবহার করা উচিত। দেশ জুড়ে উপনির্বাচনে খারাপ ফলের পরে বাংলায় তিনটির মধ্যে বিজেপি কোনও আসন না পেলে গেরুয়া শিবিরের পালের হাওয়া কেড়ে নেওয়া যাবে। তাঁর ওই যুক্তিকেই ‘তৃণমূলের দালালি’ হিসেবে ব্যঙ্গ করা হচ্ছে বলে মান্নানের আক্ষেপ।

প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপত্রের কার্যকরী সম্পাদক অশোক ভট্টাচার্য অবশ্য পাল্টা যুক্তি দিয়ে পোস্ট করেছেন, ‘যেখানে জোট গড়ার মূল লক্ষ্যই ফ্যাসিস্ত ও সাম্প্রদায়িক বিজেপি এবং তৃণমূলের হাত থেকে বাংলা বাঁচানো, সেখানে তৃণমূলকে আসন ছেড়ে দিলে সেই অভিমুখ প্রশ্নের মুখে পড়বে’। সারদা-কাণ্ডে মামলাকারী কংগ্রেস নেতা কী ভাবে তৃণমূলের হয়ে দলীয় সভানেত্রীর কাছে সওয়াল করলেন, তাতে বরং বিস্মিত তাঁর সহকর্মীরাই। তবে সোমেনবাবু এই নিয়ে মুখ খোলেননি। তাঁর সিঙ্গুরের বাড়ির কালীপুজোয় এ দিন মান্নান ঘুরেও এসেছেন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy