Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Manish Shukla

মেয়ের জন্য নিজের ভাবমূর্তি বদলাতে চেয়েছিলেন মণীশ

দোর্দণ্ডপ্রতাপ সিপিএম নেতা, প্রাক্তন সাংসদ তড়িৎ তোপদারের হাত ধরে মণীশের উত্থান হয়েছিল বলে জানে এলাকা।

মণীশ শুক্ল। ছবি সংগৃহীত।

মণীশ শুক্ল। ছবি সংগৃহীত।

সুপ্রকাশ মণ্ডল
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২০ ০৩:৫৯
Share: Save:

অতীত মুছতে চাইছিলেন। ফেলে আসা পুরনো বিতর্ক-অভিযোগ ঝেড়ে ফেলে গত কয়েক বছরে পুরো দস্তুর রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠার চেষ্টা চালাচ্ছিলেন টিটাগড়ের এক সময়ের বেতাজ বাদশা মণীশ শুক্ল। কিন্তু, ‘শুধুই রাজনীতিবিদ’ হওয়া তাঁর হল না।

সিপিএম-তৃণমূল-বিজেপি— যখন যে দলে ছিলেন, এলাকায় সেই দলের কাছে অপরিহার্য হয়ে উঠেছিলেন এক সময়ের সিপিএমের ছাত্র নেতা মণীশ। ব্যারাকপুরের এক সময়ের দোর্দণ্ডপ্রতাপ সিপিএম নেতা, প্রাক্তন সাংসদ তড়িৎ তোপদারের হাত ধরে মণীশের উত্থান হয়েছিল বলে জানে এলাকা। সিপিএম অস্তমিত হতে না হতেই তৃণমূলে যোগদান। যুব নেতা এবং পুরসভার কাউন্সিলর হলেও, আদতে টিটাগড়ে তিনিই ছিলেন দলের শেষ কথা। আবার বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে, সংগঠন বাড়াতে তাঁর উপরেই ভরসা রেখেছিলেন ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংহ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ৯০-এর দশকের শেষ দিকে সিপিএমের ছাত্র সংগঠন দিয়ে রাজনীতির শুরু মণীশের। ব্যারাকপুর রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ কলেজের ভোটে কার্যত মণীশের একার জোরে ছাত্র সংসদ দখল করে এসএফআই। কার্যত বিনা ভোটে জয়লাভ মণীশকে তড়িতের কাছে এনে ফেলে। অনুগামী তৈরিতে অদ্ভুত দক্ষতাই বিভিন্ন দলে মণীশকে অপরিহার্য করে তুলেছিল বলে মনে করছেন এলাকার রাজনৈতিক নেতারা।

আরও পড়ুন: মণীশ-হত্যা ঘিরে তপ্ত কলকাতাও, তিক্ত বাগ‌্‌যুদ্ধে অর্জুন-ফিরহাদ

এলাকা দখলের জন্য দুষ্কৃতী আমদানির অভিযোগ ছিল মণীশের বিরুদ্ধে। বাম আমলের এক সময় দুষ্কৃতীদের আখড়ায় পরিণত হয়েছিল টিটাগড়। বিভিন্ন কারখানা, চটকল থেকে তোলাবাজি ঘিরে টিটাগড় বছরভর উত্তপ্ত থাকত। কোনও বিতর্কই পিছু ছাড়েনি মণীশের। ২০০৮ সালের লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূল দু’জনের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছিল। তার এক জন ছিলেন মণীশ। সেই ভোটে তড়িৎ হেরে যান। তার মাসখানেকের মধ্যে তৃণমূলে যোগ দেন মণীশ। যোগসূত্র ছিলেন ভাটপাড়ার তৎকালীন বিধায়ক, ‘বাহুবলী’ নেতা অর্জুন সিংহ।

আরও পড়ুন: অভিযোগের পাশাপাশি মণীশ খুনে বহু ধোঁয়াশাও

বাম আমলেই মণীশ এবং দুই তৃণমূল নেতা শীলভদ্র দত্ত এবং শুভ্রাংশু রায়কে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার পর থেকে তৃণমূলেও ক্রমশ অপরিহার্য হয়ে ওঠেন মণীশ। ২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরেও মণীশের বিরুদ্ধে দাদাগিরির অভিযোগ অব্যাহত ছিল। তাঁর দাপটে দলের অন্য নেতারাও একঘরে হয়ে পড়েছিলেন। তার অন্যতম কারণ, মণীশের সাংগঠনিক দক্ষতা এবং রবিনহুড ইমেজ। বিভিন্ন সামাজিক কাজ এবং বিপদে এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়ানো।

চিকিৎসকের পুত্র মণীশ স্নাতক হওয়ার পরে এমবিএ করেছিলেন। ওড়িশার একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি পাশ করেছিলেন। ব্যারাকপুর আদালতে প্র্যাকটিসও করতেন কালেভদ্রে। ২০১৫ সালে টিটাগড় পুরসভায় কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। আরও ভাল করে বললে ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের সময় থেকে নিজের পুরনো ভাবমূর্তি ঝেড়ে ফেলতে উদ্যোগী হন মণীশ নিজেই।

পরিচিতেরা বলছেন, নিজের ইমেজ বদলের অন্যতম কারণ তাঁর ছোট কন্যা। তাঁর বড় মেয়ের বয়স আট। ছ’বছরের ছোট মেয়ে বছর চারেক আগে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। মেয়ের চিকিৎসার জন্য ছোটাছুটি করেছেন প্রায় দু’বছর। অনুগামীরা বলছেন, তার পর থেকে শান্ত হয়ে গিয়েছিলেন। বিতর্ক থেকে দূরে রাখতেন নিজেকে। গত লোকসভা ভোটের আগে অর্জুন বিজেপিতে যোগ দিলেও মণীশ তৃণমূলে থেকে যান। বলা হচ্ছিল, এটা অর্জুনের কৌশল। প্রসঙ্গ উঠলেই মণীশ বলেছেন, “আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগত সৈনিক।” লোকসভা ভোটের পরই অবশ্য তিনি বিজেপিতে যোগ দেন।

প্রাণনাশের আশঙ্কা ছিল বলে লাইসেন্সড রিভলভার রাখতেন মণীশ। কিন্তু লাইসেন্স নিয়ে গোলমালের জেরে সে আগ্নেয়াস্ত্র পুলিশ জমা নিয়ে নিয়েছিল।

অন্য বিষয়গুলি:

Manish Shukla Crime Murder Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy