অনশন মঞ্চে মানস ভুঁইয়ার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। সোমবার সুমন বল্লভের তোলা ছবি।
দলের সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর অনুরোধে ষষ্ঠ দিনে অনশন প্রত্যাহার করলেন কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়া। কিন্তু তার আগে দু’টি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা ঘটে গেল গাঁধীমূর্তির নীচে তাঁর অনশন-মঞ্চে।
প্রথমত, সবংয়ের কংগ্রেস বিধায়কের আন্দোলনের প্রতি সহমর্মিতা জানাতে সোমবার তাঁর অনশন-মঞ্চে হাজির হলেন সিপিএমের আনিসুর রহমান, রামেশ্বর দোলুই, আরএসপি-র সুভাষ নস্কর, ফরওয়ার্ড ব্লকের বিশ্বনাথ কারক, ডিএসপি-র প্রবোধ সিংহ, সিপিআইয়ের অরুণ মহাপাত্র-সহ ৮ জন বাম বিধায়কের প্রতিনিধিদল। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের পরামর্শে মানসবাবুর মঞ্চে পৌঁছে আনিসুরের বক্তব্য, ‘‘অন্যায়ের বিচার চেয়ে বিধানসভার আমাদের এক সহকর্মী অনশনে বসেছেন। তাই তাঁর পাশে দাঁড়াতে এসেছি।’’ বাম বিধায়কদের পাল্টা কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন মানসবাবুও। প্রদেশ কংগ্রেসের যে বর্ষীয়ান নেতা একাধিক বার প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছেন বামেদের সঙ্গে কোনও সমঝোতা হলে তিনি দল ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাববেন, তাঁর অনশন-মঞ্চেই প্রতিনিধি পাঠিয়ে সূর্যবাবুরা মোক্ষম চাল দিয়েছেন— মেনে নিচ্ছে কংগ্রেস শিবিরের একাংশও। সেই সঙ্গেই রাজ্য রাজনীতিতে বাম-কংগ্রেসের চলতি রসায়নে নতুন মাত্রাও যোগ করে রাখল এই ঘটনা।
দ্বিতীয়ত, অনশনের মঞ্চকে কেন্দ্র করেই মানসবাবু যে ভাবে দলের সব অংশকে একত্রিত করে অদূর ভবিষ্যতের জন্য একগুচ্ছ আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করাতে পেরেছেন, তা অবশ্যই কংগ্রেসের জন্য স্বস্তিজনক। মানসবাবুর মঞ্চে দাঁড়িয়েই প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দীপা দাশমুন্সি পুজোর পরে বিধানসভা অভিযান করে সংগঠনকে অতীতের প্রিয়রঞ্জনদের কায়দায় পথে নামার ডাক দিয়েছেন। যুব কংগ্রেসের ‘ধর্মতলা চলো’ অভিযান শেষ করে গাঁধীমূর্তির মঞ্চে এসে সংগঠনের সর্বভারতীয় সভাপতি অমরেন্দ্র সিংহ রাজা ব্রার ডাক দিয়েছেন, দিল্লির যন্তরমন্তরে মানসবাবুকে নিয়ে অবস্থান আন্দোলনের। আর খোদ মানসবাবু ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়কে (তিনিও অনশনে অংশগ্রহণকারী) পরামর্শ দিয়েছেন, আগামী তিন মাস জেলার কলেজে কলেজে সবং-কাণ্ড নিয়েই প্রচার চালানোর। সংগঠন চাঙ্গা করার এই আবহে একমাত্র প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর অনুপস্থিতিই কিছুটা বিমর্ষ করেছে মানসবাবুকে। শেষ পর্বে যিনি বলেছেন, ‘‘সভাপতি এলে আরও ভাল লাগত। যদিও দু’দিন আগেই তিনি এসে সাহস জুগিয়েছেন।’’
প্রত্যাশামাফিক এ দিন বিকালে সনিয়ার বার্তা নিয়ে এআইসিসি-র সম্পাদক ও রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা শাকিল আহমেদ খান অনশন-মঞ্চে আসেন। তাঁর বার্তায় শারীরিক অবস্থার কথা বিবেচনা করেই মানসবাবুকে অনশন প্রত্যাহারের অনুরোধ করেছেন সনিয়া। শাকিল যখন সনিয়ার বার্তা জানাচ্ছেন, অনশন-মঞ্চে তখন কংগ্রেস নেতৃত্বের পাশাপাশি ‘সেভ ডেমোক্র্যাসি’র অশোক গঙ্গোপাধ্যায়, বিকাশ ভট্টাচার্যেরা উপস্থিত। ছিলেন সবংয়ের সজনীকান্ত মহাবিদ্যালয়ে নিহত ছাত্র কৃষ্ণপ্রসাদ জানার দাদা হরিপদ ও বৌদি সবিতা জানাও। শাকিলের সঙ্গে সবিতাদেবী ফলের রস খাইয়ে মানসবাবুর অনশন ভাঙান। মানসবাবু বলেন, ‘‘লড়াই থামালে চলবে না। না হলে এই ব্যাভিচারী সরকার আরও অত্যাচারী হয়ে উঠবে!’’
রানি রাসমণিতে যুব কংগ্রেসের কর্মসূচি শেষ করে অমরেন্দ্রদের সঙ্গেই মানসবাবুর মঞ্চে আসেন দীপা। লড়াইয়ের পথে যাওয়ার কথা বোঝাতেই দীপা বলেন, ‘‘প্রয়োজন হলে পুজোর পরে সারা বাংলার কর্মীদের এনে বিধানসভা অভিযান করব। শ’য়ে শ’য়ে, হাজার হাজার কর্মীরা মুখ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করলে নিশ্চয়ই উনি জবাব দিতে বাধ্য হবেন!’’ একই সুরে রানি রাসমণিতে যুব কংগ্রেসের সভায় অমরেন্দ্র ঘোষণা করেন, ‘‘পুজোর পরে বিধানসভা এবং মুখ্যমন্ত্রীকে ঘেরাও করা হবে।’’ ভবিষ্যতের এই ঘোষণার মাঝেই কংগ্রেসের একাংশে অবশ্য গুঞ্জন থেকে গেল, কোনও দাবিপূরণ না হওয়া সত্ত্বেও অনশন শেষ!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy