Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Students

ম্যানেজমেন্ট-আইটিআইয়ের এই ছাত্রদের পড়ার জন্য ভরসা ১০০ দিনের কাজ!

আয়ের সঙ্গে চারা গাছ তৈরির আনন্দে মেতে বাঁকুড়ারই ইঁদপুরের সরকারি আইটিআই কলেজের ছাত্র সৌমিক মণ্ডল, সৌরভ নন্দী, অয়ন কুণ্ডুরা।

গাছের চারার পরিচর্যায় ব্যস্ত দীপ, সৌরভ ও সৌমিকেরা। নিজস্ব চিত্র

গাছের চারার পরিচর্যায় ব্যস্ত দীপ, সৌরভ ও সৌমিকেরা। নিজস্ব চিত্র

তারাশঙ্কর গুপ্ত 
পাাত্রসায়র শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০২০ ০৩:৫৮
Share: Save:

কলেজ বন্ধ। লকডাউনে রুজি বন্ধ হওয়ায় পরিবারেও অর্থের টান। তাই একশো দিনের প্রকল্পে কাজ চেয়ে পঞ্চায়েতে আবেদন করেছিলেন কয়েক জন কলেজ পড়ুয়া। তাঁদের কেউ বেসরকারি হোটেল ম্যানেজমেন্ট কলেজে, কেউ বা আইটিআই-তে পড়ছেন। বাঁকুড়ার পাত্রসায়রের বেলুট-রসুলপুর পঞ্চায়েতের উদ্যোগে এলাকার সেই সব যুবকদের হাতে এখন তৈরি হচ্ছে রঙ্গন, পাতাবাহার, আম, জাম, কাঁঠালের চারাগাছ। পারিশ্রমিকের কিছুটা সংসারে দিয়ে বাকিটা জমাচ্ছেন পড়ার খরচের জন্য।

লকডাউনের গোড়ায় বাবার চাকরি যাওয়ায় সংসার চালাতে পঞ্চায়েতে একশো দিনের কাজ চেয়ে আবেদন করেছিলেন পাত্রসায়রের কাকাটিয়ার বাসিন্দা কলকাতার একটি পলিটেকনিক কলেজের পড়ুয়া প্রিয়া নন্দী। কাজের বদলে পঞ্চায়েত খাদ্য সামগ্রী দিয়ে তাঁকে সাহায্য করে। তবে বেলুট-রসুলপুর পঞ্চায়েতের প্রধান তাপস বারি বলেন, ‘‘অভিজ্ঞতা না থাকলেও ওই পড়ুয়ারা পরিস্থিতির চাপে একশো দিনের কাজ চেয়েছেন। ওঁদের জব-কার্ড করিয়ে একশো দিনের প্রকল্পে নার্সারি তৈরির কাজে লাগানো হয়েছে।’’ তিনি জানান, ১০ জন পড়ুয়া ও কয়েক জন অলঙ্কার-শিল্পী-সহ পঁচিশ জন মিলে গত দু’মাসে প্রায় ৪০ হাজার চারা তৈরি করেছেন। তাঁদের দিয়েই পঞ্চায়েতের বিভিন্ন জায়গায় সেই সব গাছ লাগানো হবে। সব মিলিয়ে পাঁচ মাস কাজ দেওয়ার ইচ্ছা রয়েছে। বিডিও (পাত্রসায়র) প্রসন্ন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই পরিস্থিতিতে ওই যুবকদের ভাল কাজের সুযোগ দিয়ে পঞ্চায়েত প্রশংসনীয় কাজ করেছে।’’

স্থানীয় শ্যামদাসপুরের যুবক দীপ পাঠক কলকাতার একটি বেসরকারি হোটেল ম্যানেজমেন্ট কলেজের পড়ুয়া। তিনি বলেন, ‘‘জমি বিক্রি করে বাবা কলেজে ভর্তি করান। কিন্তু পড়া, থাকা মিলিয়ে মাসে ছ’হাজার টাকা খরচ। তাই একটি হোটেলে পার্টটাইম কাজ করি। বাবা বাসের কন্ডাক্টরের কাজ করে ও পুজো করে মাসে ১০ হাজার টাকা রোজগার করতেন। সে সব প্রায় বন্ধ। শুধু রেশনের চালে সংসার চলে না। তাই কাজ চেয়েছিলাম পঞ্চায়েতে। দিনে কম-বেশি ১৭০ টাকা হিসেবে মজুরি যা পাচ্ছি, তাতে বাবাকে সাহায্য করছি, কিছুটা জমাতেও পেরেছি। ওই টাকা পড়াশোনার কাজে লাগবে।’’

আরও পড়ুন: সংক্রমিতদের নাম ছড়াচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপে, উঠছে প্রশ্ন

আয়ের সঙ্গে চারা গাছ তৈরির আনন্দে মেতে বাঁকুড়ারই ইঁদপুরের সরকারি আইটিআই কলেজের ছাত্র সৌমিক মণ্ডল, সৌরভ নন্দী, অয়ন কুণ্ডুরা। সৌরভ জানান, হস্টেলে থাকা-খাওয়া সহ সব মিলিয়ে মাসিক খরচ তিন হাজার টাকা। তাঁর বাবার বই-খাতার দোকান ‘লকডাউন’-এ আর পানের বরজ প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সৌমিক বলেন, ‘‘লোকের কাছে হাত পাতার থেকে একশো দিনের কাজ করা ভাল। বাবাকে কিছু দিচ্ছি, কিছুটা হস্টেল খরচের জন্য তুলেও রাখছি।’’ সৌরভ, অয়নরা বলেন, ‘‘সুদিন নিশ্চয় ফিরবে। তখন গাছগুলো আমাদের লড়াইয়ের স্মৃতি হয়ে থাকবে।’’

আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে সর্বোচ্চ সংক্রমণ, ফের মৃত্যু ডাক্তারের

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy