ছবি: সংগৃহীত।
লকডাউন পর্বে থমকে বহু জীবিকা। ভিন্ রাজ্য থেকে কাজ হারিয়ে সুন্দরবনের গ্রামে ফিরে অনেকে এখনও তেমন কাজ জুটিয়ে উঠতে পারেননি। রোজগারের আশায় কাঁকড়া-মাছ ধরতে জঙ্গলে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। আর এই পরিস্থিতিতে গত কয়েক মাসে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বাঘের আক্রমণে প্রাণহানির ঘটনাও।
বুধবারই সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ পিরখালির জঙ্গলের গাগরাখালি এলাকায় বাঘের হানায় প্রাণ গিয়েছে মৎস্যজীবী হরিপদ মণ্ডল (৪৮)-এর। সঙ্গীরা বাঘের সঙ্গে লড়াই করে হরিপদকে উদ্ধার করে নিয়ে এলেও তাঁকে বাঁচানো যায়নি।
মৃতের স্ত্রী বলেন, ‘‘বাঘের ভয়ে তিন বছর আগে জঙ্গলে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছিল। আন্দামানে কাজে গিয়েছিল। কিন্তু বাইরে থাকতে না-পেরে বছরখানেক আগে ফিরে আসে। ব্যবসা করেও সুবিধা হল না। লকডাউনে অনেক টাকা ক্ষতি হওয়ায় ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। অনেক দিন বেকার বসেছিল। বাধ্য হয়ে জঙ্গলে যাওয়া শুরু করে।”
বন দফতরের হিসেব বলছে, ২০১৯ সালের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ছ’মাসে সুন্দরবনে বাঘের হানায় প্রাণ গিয়েছিল ৬ জনের। কিন্তু মার্চের ২৫ তারিখ লকডাউন শুরুর পর থেকে গত সাড়ে চার মাসে ১০ জন বাঘের আক্রমণের মুখে পড়েছেন। পাঁচ জনের প্রাণ গিয়েছে। নিখোঁজ ৫ জন।
বন দফতরের একটি সূত্র জানাচ্ছে, একটা সময়ে জঙ্গল ছেড়ে বাঘ গ্রামে ঢুকে গবাদি পশুর প্রাণ নিত। মানুষও মারা যেতেন। গত কয়েক বছর ধরে জঙ্গলের একাংশ নাইলনের জাল দিয়ে ঘিরে দেওয়ায় সেই ঘটনা অনেকটা কমেছে। কিন্তু তার পরেও রোখা যাচ্ছে না প্রাণহানি।
জঙ্গলে কি তা হলে খাবারের অভাব পড়ায় ‘সহজ শিকার’ মানুষকে টার্গেট করছেন দক্ষিণরায়? তেমনটা মনে করছেন না বনকর্তারা। বরং তাঁদের অনেকেরই বক্তব্য, মানুষ বেশি করে জঙ্গলমুখী হওয়ায় বাড়ছে আক্রমণের সংখ্যা। স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, লকডাউনে কাজ হারিয়েছেন বিভিন্ন পেশার মানুষ। ভিন্ রাজ্য থেকেও ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন অনেকে। এলাকায় বিকল্প কর্মসংস্থান সে ভাবে নেই। ফলে সংসার চালাতে গিয়ে জঙ্গলমুখী হচ্ছেন অনেকে। মূলত কাঁকড়া ধরতেই তাঁদের উৎসাহ। স্থানীয় বাজারে কাঁকড়ার দাম ভালই।
গোসাবার কুমিরমারি ও লাহিড়িপুর পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা মঙ্গল সর্দার, নবীন মণ্ডল, সীতা মিস্ত্রিরা বলেন, “কাঁকড়া ধরতে পারলে দু’টো রোজগার হয়। তাই বিপদ আছে জেনেও জঙ্গলে যেতে হয়।” কুমিরমারি পঞ্চায়েতের প্রধান দেবাশিস মণ্ডল বলেন, ‘‘ভিন্ রাজ্য থেকে বহু মানুষ ফিরেছেন এলাকায়। দল বেঁধে কাঁকড়া ধরতে যাচ্ছেন তাঁদের অনেকে। অভিজ্ঞতা কম থাকায় বিপদে পড়ছেন কেউ কেউ।”
বনকর্তাদের একাংশের মতে, লকডাউনে জলপথে পরিবহণ অনেকটা কম। লঞ্চ-ভুটভুটির শব্দ, মাঝিমাল্লাদের হাঁকাহাঁকি, যাত্রীদের হইচই কমেছে। ফলে নিশ্চিন্তে নদী-খালের পাড়ে চলে আসছে বাঘ। এ সব জায়গাতেই কাঁকড়া, মাছ ধরতে জাল পাতেন মৎস্যজীবীরা।
সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের ফিল্ড ডিরেক্টর তাপস দাস বলেন, ‘‘মানুষের জঙ্গল-নির্ভরতা কমাতে নানা পদক্ষেপ করছি আমরা। তবুও কিছু মানুষ বনকর্মীদের নজর এড়িয়ে জঙ্গলে ঢুকে বিপদ ডেকে আনছেন।”
লাহিড়িপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান নিরঞ্জন বাগ আবার বলেন, “একশো দিনের কাজের প্রকল্পে বহু মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। তবুও বাড়তি রোজগারের আশায় অনেকে জঙ্গলে যাচ্ছেন।’’ কিন্তু ভিন্ রাজ্য থেকে ফেরা নবীন প্রামাণিকের কথায়, ‘‘একশো দিনের প্রকল্পে মাসে খুব বেশি হলে ১০ দিন কাজ জোটে। মেরেকেটে হাজার দু’য়েক টাকা আয়। কাঁকড়া ধরে মাসে ৬-৭ হাজার টাকা রোজগার হয়েই যায়। তাই সুযোগ পেলে জঙ্গলে যাই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy