মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
বিতর্ক বাড়ছে যে ইস্যুকে ঘিরে, তা নিয়ে জোরদার পাল্টা প্রচারে নেমে পড়ুন। দলকে নির্দেশ দিলেন তৃণমূল চেয়ারপার্সন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার ভিডিয়ো কনফারেন্সে তৃণমূলের জেলা সভাপতিদের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৈঠক করলেন। রেশন নিয়ে বিজেপি ‘ভুল’ বোঝাচ্ছে, ঠিকটা বোঝানোর জন্য সর্বশক্তি প্রয়োগ করে ঝাঁপাতে হবে— দলকে বার্তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তবে রেশন নিয়ে ‘বেয়াদপি’ যে বরদাস্ত করা হবে না, সে বার্তাও বেশ কঠোর ভাবেই নিজের দলের জেলা সভাপতিদের শুনিয়ে দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী।
লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে দলের জেলা নেতাদের সকলকে নিয়ে এই প্রথম বৈঠক করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভিডিয়ো কনফারেন্সে এই রকম বৈঠকও তৃণমূলে প্রথম। তৃণমূল সূত্রের খবর, এ দিনের বৈঠকে দলের জেলা নেতাদের সতর্কবার্তা দিয়েছেন নেত্রী, একই সঙ্গে বিজেপির প্রচারের বিরুদ্ধে পাল্টা প্রচার জোরদার করার নির্দেশও স্পষ্ট ভাবে দিয়েছেন।
করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউন শুরু হয়েছে মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে। আর এপ্রিলের গোড়া থেকেই রাজ্য জুড়ে বাড়তে থেকেছে রেশনকেন্দ্রিক বিতর্ক। রেশনে খাদ্যসামগ্রী ঠিক মতো মিলছে না, রেশন নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতি হচ্ছে, রেশন লুঠ করা হচ্ছে— বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেস একযোগে বলতে শুরু করেছে এ কথা। রেশন নিয়ে রাজ্যের কিছু কিছু এলাকায় ইতিমধ্যেই অশান্তিও হয়েছে।
কিন্তু রেশন সংক্রান্ত বিতর্ককে যে বিরোধীদের হাতিয়ার হতে দিতে চান না, দলকে শুক্রবার সন্ধ্যায় তা খুব স্পষ্ট ভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝিয়ে দিয়েছেন। রেশন নিয়ে কারও কোনও ‘বেয়াদপি’ বরদাস্ত করা হবে না— জেলা সভাপতিদের এ দিন এ কথাই বলেছেন তৃণমূল চেয়ারপার্সন। কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই যে বেশ কিছু রেশন ডিলারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সে কথা দলকে মনে করিয়ে দেন মমতা। অভিযোগ যদি দলের কারও বিরুদ্ধে ওঠে, তা হলেও যে ছেড়ে কথা বলা হবে না, সে বার্তাও এ দিন স্পষ্ট ছিল বলে তৃণমূল সূত্রে জানা যাচ্ছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকার বিরুদ্ধেও এ দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সুর চড়িয়েছেন বলে খবর। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের সভাপতি অজিত মাইতির কথায়, ‘‘আমাদের সরকারই করোনার বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেছে সবচেয়ে আগে, আমাদের সরকার কেন্দ্রীয় সরকারের আগে লকডাউন ঘোষণা করেছে। তা সত্ত্বেও কেন্দ্র নানা ভাবে আমাদের সরকারকে হেয় করার চেষ্টা করছে, প্রতিটা পদক্ষেপে বাধা দিচ্ছে। সে সব বাধাকে যে পাত্তা দিলে চলবে না, সে কথাই দলনেত্রী আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছেন। বাধা অগ্রাহ্য করে নিজেদের কাজ করে যেতে বলেছেন। আর বিজেপি যা রটাচ্ছে, তা যে মিথ্যা, সে কথা মানুষকে আরও ভাল ভাবে বোঝানোর কাজ এখন থেকেই শুরু করে দিতে বলেছেন।’’
ভিডিয়ো কনফারেন্সে অনুব্রত মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারই সবচেয়ে বেশি মানুষের কাছে রেশন পৌঁছে দেয় এবং এখনও সে ভাবেই সরকার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে, সে কথা সকলকে মনে রাখতে হবে— বৈঠকে বার্তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বিজেপি অপপ্রচার চালিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সেই সাফল্যকেই ভুলিয়ে দিতে চাইছে বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সতর্ক করেছেন নিজের দলকে। গত দেড় মাসে বিজেপি নেতারা রাজ্যের মানুষের জন্য কিছুই করতে পারেননি এবং তাঁরা জনসাধারণের থেকে অনেক দূরে সরে গিয়েছেন— বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এমনও বলেছেন বলে খবর। জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বলেই বিজেপি এখন রেশন নিয়ে ‘মিথ্যা প্রচার’ চালিয়ে সরকারকে হেয় করতে চাইছে, সে চেষ্টা সফল হতে দিলে চলবে না, নির্দেশ তাঁর। পশ্চিমবঙ্গ সরকারই সবচেয়ে ভাল মানের চাল দিচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষকে রেশন দিচ্ছে এবং কেন্দ্র কিছুই দেয়নি— জোরদার প্রচারে নেমে এ কথা জনসাধারণের সামনে তুলে ধরতে বলেছেন তিনি।
আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টায় করোনা-আক্রান্ত ১৩০, চিন্তা বাড়াচ্ছে হাওড়া এবং কলকাতা
আরও পড়ুন: কলকাতার অবস্থা উদ্বেগজনক, বহু এলাকা নিয়েই চিন্তায় পুরসভা
লকডাউনের জেরে যাঁরা সঙ্কটে, তাঁদের পাশে আরও বেশি করে দাঁড়াতে হবে, জেলা সভাপতিদের নির্দেশ দলনেত্রীর। তবে সরকারি রেশনে মাতব্বরি নয়, প্রয়োজনে নিজেদের পয়সায় ত্রাণ দিন— এ বার্তাও তিনি দিয়েছেন বলে খবর।
রাজ্যের যে পরিযায়ী শ্রমিকরা বাইরে রয়েছেন, তাঁদের ফেরানোর জন্যও রাজ্য সরকার সব রকম ব্যবস্থা করবে বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের দলের বৈঠকে এ দিন জানান। পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে এনে প্রথমে কোয়রান্টিনে রাখা হবে এবং তার পরে তাঁদের কাজের ব্যবস্থা করা হবে বলেও মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস। মনরেগা প্রকল্পে যাতে কাজ দেওয়া যায় পরিযায়ী শ্রমিকদের, সে কথা মাথায় রেখে এখন থেকেই প্রস্তুত থাকতে বলেছেন দলকে। তবে মনরেগার কাজই হোক বা সাধারণ মানুষের হয়ে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের কাজ— সব ক্ষেত্রেই সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং-এর কথা মাথায় রাখতে হবে, সতর্ক করে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শুক্রবারের এই ভিডিয়ো বৈঠকের পরে তৃণমূল অনেক বেশি চাঙ্গা হয়ে ময়দানে নামবে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা। রেশন বিতর্ক, পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরানোয় অনিচ্ছার অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে আসা নানা চাপ— এই সব কিছুকে হাতিয়ার করে গত এক-দেড় মাস ধরে সুর ক্রমশ চড়াচ্ছে বিজেপি-সহ বিভিন্ন বিরোধী দল। সেই চড়া সুর যে মুখ বুজে সহ্য করলে চলবে না, আরও জোরদার পাল্টা প্রচারে যে নামতে হবে, সে কথাই খুব স্পষ্ট ভাবে এ দিন বুঝিয়ে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লকডাউন না ভেঙেও কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে জেলা সভাপতিদের নির্দেশ দিয়েছেন নেত্রী। নানা সোশ্যাল মিডিয়া এবং ডিজিটাল মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে ব্লক স্তরের বা তার চেয়েও নীচের স্তরের কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে বলেছেন। ১০ মে ফের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভিডিয়ো কনফারেন্স করবেন। সে দিন বৈঠক করবেন দলের বিধায়কদের সঙ্গে।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy