Advertisement
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
Mamata Banerjee

ভুলে যাচ্ছেন আমি নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী: ধনখড়কে বেনজির কড়া চিঠি মমতার

পাঁচ পাতার চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী তুলে ধরলেন কয়েক দিন আগে তাঁকেই রাজ্যপালের পাঠানো একটি চিঠির বয়ান।

অভূতপূর্ব কড়া ভাষায় রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে চিঠি লিখলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

অভূতপূর্ব কড়া ভাষায় রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে চিঠি লিখলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২০ ১৯:১১
Share: Save:

সঙ্ঘাত তুঙ্গে পৌঁছনোর উপক্রম। অভূতপূর্ব কড়া ভাষায় রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে চিঠি লিখলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাঁচ পাতার চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী তুলে ধরলেন কয়েক দিন আগে তাঁকেই রাজ্যপালের পাঠানো একটি চিঠির বয়ান। তুলে ধরলেন রাজ্যপালের একটি এসএমএসের বয়ানও। যে ভাষায় রাজ্যপাল চিঠি লিখছেন একজন নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীকে, তা অত্যন্ত আপত্তিকর— ইঙ্গিত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ‘‘আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে যে, আপনি ভুলে গিয়েছেন, আমি একটি গর্বিত ভারতীয় রাজ্যের একজন নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী।’’ ধনখড়কে এ দিন এ রকমই লিখেছেন মমতা।

জগদীপ ধনখড় পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল হয়ে আসার পর থেকেই নবান্নের সঙ্গে রাজভবনের সঙ্ঘাত বাড়ছে। ফলে রাজ্যপাল ধনখড়ের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতার মতান্তর এর আগেও একাধিক বার প্রকাশ্যে এসেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ধনখড়ের পূর্বসূরি কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর মতান্তরও প্রকাশ্যে এসেছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে চিঠি জগদীপ ধনখড়কে পাঠিয়েছেন, সে রকম চিঠি বেশ নজিরবিহীন।

চিঠির শুরুতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘‘আপনি ২০ এপ্রিল, ২০২০ তারিখে আমাকে যে চিঠি লিখেছিলেন, আমি ২১ এপ্রিল, ২০২০ সালে আপনাকে তার যে উত্তর দিয়েছিলাম এবং ২২ এপ্রিল, ২০২০ তারিখে সকাল ৭টা নাগাদ আবার আপনি আমাকে যে এসএমএস পাঠিয়েছিলেন, সেই সবের বিষয়েই এই চিঠি লিখছি।’’ এর পরে রাজ্যপালের ২২ তারিখের এসএমএসের গোটা বয়ানটাই নিজের চিঠিতে তুলে ধরেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ওই ভাষায় এসএমএস পাঠানো তাঁর উচিত হয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

আরও পড়ুন: গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে আক্রান্ত ৫৮, রোগমুক্ত ২৪

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন যে, তাঁর যে চিঠির উত্তরে রাজ্যপাল ওই এসএমএস পাঠিয়েছেন, আগে-পিছে কোনও কিছু না জেনে যদি কেউ ওই এসএমএস পড়েন, তা হলে তিনি ভাববেন যে তিনি (মুখ্যমন্ত্রী) যে চিঠি ২১ এপ্রিল রাজ্যপালকে পাঠিয়েছিলেন, সে চিঠিতে নিশ্চয়ই কোনও ‘অকথ্য এবং (অ)সাংবিধানিক পাপ’ ছিল অথবা কারও মনে হতে পারে ওই চিঠিতে রাজ্যপালের প্রতি অপমানজনক কিছু ছিল। এ কথা লেখার পরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের সেই চিঠির বয়ানও এ দিনের চিঠিতে তুলে ধরেছেন। চার লাইনের সে চিঠিতে লেখা: ‘‘মাননীয় রাজ্যপাল, ২০ এপ্রিল, ২০২০ তারিখে আমাকে আপনি যে চিঠি লিখেছেন, তার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আপনি নিঃসন্দেহে বুঝতে পারবেন যে, গোটা রাজ্য সরকারই এখন কোভিড-১৯ অতিমারির মোকাবিলায় রত। এটা আপনাকে জানিয়ে রাখলাম।’’

এই চিঠি তুলে ধরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন যে, এই চিঠি কোনও ভাবে কারও জন্য অপমানজনক নয়। তার পরেই মমতা মনে করিয়েছেন যে, রাজ্যপালের ভুলে যাওয়া উচিত নয়, তিনি মনোনীত প্রতিনিধি হিসেবে রাজ্যপাল পদে বসেছেন। তাঁর সরকার যে একটা নির্বাচিত সরকার, সে কথা রাজ্যপাল সম্ভবত ভুলে যাচ্ছেন— লিখেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

‘‘২১ এপ্রিল, ২০২০ তারিখে আপনি আবার কলকাতাতেই অডিয়ো-ভিজ্যুয়াল মিডিয়ায় বিবৃতি দিয়েছেন, যা রাজ্যপালের পক্ষে বেনজির,’’— রাজ্যপালকে লিখেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সেই বিবৃতিতে যে রাজ্যপাল তাঁকে ‘হুঁশিয়ারি’ দেওয়ার কথা বলেছেন এবং রোজ সকালে ‘কেন্দ্রকে আক্রমণ’ না করার বিষয়ে সতর্ক করেছেন, সে কথাও মুখ্যমন্ত্রী এ দিন নিজের চিঠিতে উল্লেখ করেন। তার পরেই কঠিন শব্দে লিখেছেন, ‘‘আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে যে, আপনি ভুলে গিয়েছেন, আমি একটি গর্বিত ভারতীয় রাজ্যের একজন নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী। মনে হচ্ছে আপনি এটাও ভুলে গিয়েছেন যে, আপনি একজন মনোনীত রাজ্যপাল। ‘‘আমি এবং আমার মন্ত্রী পরিষদের কাছ থেকে যে সব পরামর্শ এবং তথ্য আপনি পান, সেগুলোকে অবজ্ঞা করা আপনি চালিয়ে যেতেই পারেন, কিন্তু ১৯৪৯ সালের ৩১ মে বাবাসাহেব অম্বেডকর সংবিধান সভায় যে কথা বলেছিলেন, সেগুলোকে অন্তত আপনার অবজ্ঞা করা উচিত নয়।’’ এই ভঙ্গিতেই এ দিন রাজ্যপালের দিকে কটাক্ষ ছুড়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এর পরে রাজ্যপাল পদটি সম্পর্কে সংবিধান সভায় অম্বেডকরের বিভিন্ন মন্তব্যকে নিজের চিঠিতে তুলে ধরেছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যপাল পদের জন্য কেন নির্বাচন হয় না, সে বিষয়ে অম্বেডকর কী ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, এ দিন রাজ্যপালকে লেখা চিঠিতে তা তুলে ধরেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কী বলেছিলেন অম্বেডকর? বলেছিলেন, ‘‘রাজ্যপালের ক্ষমতা এতই সীমিত, এতই নামমাত্র, তাঁর অবস্থান এতই আলঙ্কারিক যে, আমাদের মনে হয়েছিল, হয়তো খুব অল্প লোকই ভোটে দাঁড়াতে আগ্রহী হবেন।’’

মুখ্যমন্ত্রী আরও লিখেছেন, ‘‘ওই একই দিনে অম্বেডকর আবার বলেছিলেন, রাজ্যপাল যদি পুরোপুরি সাংবিধানিক রাজ্যপাল হন, যাঁর হাতে তার চেয়ে বেশি একটুও ক্ষমতা থাকবে না, যতটা ক্ষমতা আইনে আমরা স্পষ্ট ভাবে দেওয়ার কথা ভাবছি এবং প্রাদেশিক মন্ত্রিসভার অভ্যন্তরীণ প্রশাসনে হস্তক্ষেপ করার কোনও অধিকার যাঁর থাকবে না, তাতে ওই পদে কাউকে মনোনীত করার নীতিতে আমি ব্যক্তিগত ভাবে কোনও মৌলিক আপত্তি দেখছি না।’’

আরও পড়ুন: নরেন্দ্রপুরে যুবককে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে খুন

চিঠির শেষে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যপালকে মনে করিয়ে দিয়েছেন, সংবিধানের ধর্ম মানছেন না ধনখড়। এমনকি, দু’জন সাংবিধানিক পদাধিকারীর মধ্যে আদানপ্রদানে যে শিষ্টতা থাকা দরকার, তার সীমাও রাজ্যপাল লঙ্ঘন করছেন। একাধিক উদাহরণও তিনি এ দিন তুলে ধরেছেন, এই মন্তব্যের সপক্ষে।

রাজ্যপালকে লেখা মুখ্যমন্ত্রীর এই পাঁচ পাতার চিঠি প্রকাশ্যে আসতেই রাজনৈতিক উত্তাপও বেড়ে গিয়েছে রাজ্যে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ তীব্র আক্রমণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। রাজ্যপালের এসএমএসের ভাষা নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী ভাবে প্রশ্ন তুলছেন, তা নিয়েই পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। দিলীপের কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী নিজে প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে কী ভাষা ব্যবহার করেছেন? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সম্পর্কে কী ভাষা ব্যবহার করেছেন? আমরা কি সব ভুলে গিয়েছি নাকি? মুখ্যমন্ত্রীর স্মৃতিশক্তি দুর্বল হতে পারে, আমাদের অত দুর্বল নয়। আমাদের সব মনে আছে। ঢিলটা মেরেছেন, এ বার পাটকেলটাও খাবেন।’’

বামেদের তরফে অবশ্য আক্রমণ করা হয়েছে দু’পক্ষকেই। করোনা মোকাবিলায় সরকার কী করতে পারছে, কত টেস্টিং হচ্ছে, এ সব নিয়ে যখন মানুষ উদ্বিগ্ন, তখন সে দিক থেকে নজর ঘোরাতেই ইচ্ছাকৃত এই বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম।

মমতার সেই চিঠি

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee Jagdeep Dhankhar Governor Chief Minister
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy