সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেন একা নন। প্রায় দু’কোটি টাকা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আঁকা ছবি কিনেছিলেন এ রাজ্যের আর এক বড় মাপের অর্থলগ্নি সংস্থা, রোজভ্যালির কর্ণধারও! সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তে নেমে এমনটাই জানতে পেরেছেন সিবিআইয়ের গোয়েন্দারা।
শুধু এই দু’জনই নন, সিবিআই তদন্তকারীরা মুখ্যমন্ত্রীর ছবির ক্রেতাদের যে তালিকা তৈরি করেছেন তাতে শহরের কিছু শিল্পপতির নামও রয়েছে। তদন্তকারীরা ওই তালিকায় থাকা কয়েক জনকে এর মধ্যেই জিজ্ঞাসাবাদও করেছেন। তদন্তকারীদের বক্তব্য, তাঁদের চাপ দিয়ে ছবি কিনতে বাধ্য করা হয়েছিল বলে ওই শিল্পপতিদের একাংশ গোয়েন্দাদের জানিয়েছেন। ছবি কেনা হলে তাঁদের বাড়তি সুবিধা পাইয়ে দেওয়া হবে প্রচ্ছন্ন প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছিল বলেও তাঁরা তদন্তকারীদের জানিয়েছেন। সিবিআই সূত্রের খবর, শিল্পপতিদের একাংশের ওই বক্তব্য ঠিক কি না, তা খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা।
সারদা কাণ্ডে ধৃত তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষ অভিযোগ করেছিলেন, উত্তরবঙ্গের ডেলো পাহাড়ে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে রাজ্য সরকারের সঙ্গে নতুন ব্যবসা করা নিয়ে আলোচনায় বসেছিলেন সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেন ও রোজভ্যালি কর্তা গৌতম কুণ্ডু। গোয়েন্দাদের একাংশ জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর ছবি কেনার সঙ্গে এই ব্যবসা-বৈঠকের কোনও যোগসূত্র আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
রোজভ্যালি সংস্থার ব্যবসা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে কেন্দ্রীয় সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। সিবিআইও ওই সংস্থা নিয়ে তদন্ত শুরু করবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন গোয়েন্দারা। এর মধ্যে কী ভাবে রোজভ্যালির নাম মুখ্যমন্ত্রীর ছবির ক্রেতার তালিকায় উঠে এল?
সিবিআই সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর ছবি বিক্রির ব্যাপারটি মূলত দেখভাল করতেন তৃণমূলের সাসপেন্ড হওয়া রাজ্যসভার সাংসদ কুণাল ঘোষ এবং দলের আর এক শীর্ষ নেতা। সারদা কেলেঙ্কারিতে নেমে সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেন ও কুণালকে ছবি বিক্রির ব্যাপারে বারবার জেরা করেছেন সিবিআইয়ের গোয়েন্দারা। তদন্তকারীরা জানান, সুদীপ্ত সেন জেরায় ছবি বিক্রির প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু কুণাল তদন্তকারীদের মুখ্যমন্ত্রীর ছবি বিক্রির কথা সবিস্তার জানান। তদন্তকারীদের বক্তব্য, কুণালই প্রথম জানান, রোজভ্যালির মালিকও ১ কোটি ৮২ লক্ষ টাকায় মুখ্যমন্ত্রীর আঁকা ছবি কেনেন। এর পরে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেন গোয়েন্দারা।
সিবিআই সূত্রের খবর, গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে টাউন হলে মুখ্যমন্ত্রীর আঁকা ছবির প্রর্দশনী করা হয়েছিল। ওই প্রর্দশনীতে সুদীপ্ত সেন ও আরেক অর্থলগ্নিকারক সংস্থার কর্ণধার-সহ একাধিক শিল্পপতি হাজির ছিলেন বলে জানিয়েছেন কুণাল। চেক মারফত ওই সব ছবি কেনা হয়েছিল বলে সিবিআই সূত্রের দাবি।
তদন্তে নেমে সিবিআইয়ের গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, রোজভ্যালি সংস্থার কর্ণধার গৌতমবাবুর বেকবাগান এলাকায় একটি হোটেল রয়েছে। তার অভ্যর্থনা-কক্ষে (রিসেপশন) দীর্ঘদিন ওই ছবি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। কিন্তু সারদা কেলেঙ্কারি সামনে আসার পরেই মুখ্যমন্ত্রীর ওই ছবিটি তড়িঘড়ি সেখান থেকে সরিয়ে ফেলা হয়।
মুখ্যমন্ত্রীর আঁকা ছবি কেনা নিয়ে অবশ্য রোজভ্যালির কোনও মন্তব্য মেলেনি। গৌতমবাবুর মোবাইল ফোন বন্ধ ছিল। এসএমএস করা হলেও জবাব মেলেনি।
সিবিআই সূত্রের দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর ছবির ক্রেতা হিসেবে আরও কয়েক জন ব্যবসায়ীর নাম উঠে এসেছে। ওই ব্যবসায়ীরা নিজেরা ওই ছবি কিনতে খুব বেশি আগ্রহী ছিলেন না। অনেক ক্ষেত্রেই শাসক দলের নেতাদের চাপে পড়ে ওই ছবি কিনতে বাধ্য হয়েছিলেন। “জেরা করতে গিয়েই এমন তথ্য পেয়েছি আমরা।”মন্তব্য এক সিবিআই কর্তার।কী রকম সেই তথ্য?
গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, কুণাল ও সুদীপ্তকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরার সময় ছবি বিক্রির প্রসঙ্গ তোলা হয়। সে সময়ই কুণাল এই ছবি বিক্রির কথা বলেন। সুদীপ্ত তার প্রেক্ষিতে বলেন, কুণালই তাঁকে ১ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ছবি কিনতে বাধ্য করেছিলেন। তিনি কোনও ভাবেই ছবি কিনতে রাজি ছিলেন না বলে জেরায় দাবি করেছেন সুদীপ্ত। মঙ্গলবার সিবিআই দফতরে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় শিল্পী শুভাপ্রসন্নকে। সিবিআই সূত্রের খবর, তাঁকেও ছবি বিক্রি নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন তদন্তকারীরা। তিনিও জিজ্ঞাসাবাদে কুণালকেই ছবি বিক্রির দেখভালকারী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। সিবিআই কর্তাদের বক্তব্য, দলের শীর্ষ নেতা ও মুখ্যমন্ত্রীর চাপেই তিনি ছবি কিনতে সুদীপ্তকে চাপ দেন বলে কুণাল দাবি করেছেন।
গোয়েন্দারা বলছেন, রোজভ্যালি কর্ণধারই নয়, সারদা কেলেঙ্কারির প্রসঙ্গে ছবি বিক্রিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েই দেখা হচ্ছে। সিবিআইয়ের এক কর্তা বলছেন, “এ ক্ষেত্রে রাজ্যের প্রায় সব অর্থলগ্নি সংস্থার ভূমিকাই খতিয়ে দেখা হবে।” সেই সূত্রে ছবির ক্রেতা হিসেবে উঠে আসা শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের নামের তালিকাও করে সিবিআই। প্রয়োজনে ওই তালিকার সব শিল্পপতিদেরই ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে । তাঁদের আয়করের নথি চাইতে পারেন তদন্তকারীরা। শাসক দল ও তার কিছু নেতার আয়কর রিটার্ন-ও খতিয়ে দেখা হতে পারে বলে সিবিআই সূত্রের খবর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy