Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Mamata Banerjee

নিট-জি নিয়ে ফের তোপ মমতার, স্কুল স্তরে কোনও পরীক্ষা নয়, নির্দেশ পার্থকে

ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং-এর প্রবেশিকা নিয়ে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও কয়েকটি অ-বিজেপি দল শাসিত রাজ্যের সরকার।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০২০ ২০:৫৯
Share: Save:

সুরটা বাঁধা হয়ে গিয়েছিল বেলা ১টায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষণেই। ‘ছাত্রছাত্রীদের জীবন নিয়ে কেন্দ্র ছিনিমিনি খেলছে’ এবং তার বিরুদ্ধে কিছু ক্ষণের মধ্যেই দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কড়া বার্তা দিতে চলেছেন— গাঁধীমূর্তির পাদদেশে দাঁড়িয়ে আভাস দিয়েছিলেন যুবনেতা। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্ভবত সে আভাসকেও ছাপিয়ে গেলেন শুক্রবার। কালীঘাটের বাসভবন সংলগ্ন হল থেকে ভাষণ দিলেন তিনি। দলের ছাত্র সংগঠনের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে দেওয়া সেই ভাষণের একেবারে শুরু থেকেই ছাত্রছাত্রীদের চরম বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়ার অভিযোগ তুলে তীব্র আক্রমণ করলেন কেন্দ্র তথা বিজেপি-কে।

ডাক্তারি এবং ইঞ্জিনিয়ারিং-এর প্রবেশিকা নিট (এনইইটি) এবং জি (জেইই) সেপ্টেম্বরেই করতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং বেশ কয়েকটি অ-বিজেপি দল শাসিত রাজ্যের সরকার কেন্দ্রের সে সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে। কয়েক দিন আগে বেশ কয়েক জন মুখ্যমন্ত্রী এবং বিভিন্ন দলের নেতৃত্ব এই বিষয়টি নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেখানে ছিলেন মধ্যমণি। সেই বৈঠকে ঠিক হয় যে, কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তকে আদালতে চ্যালেঞ্জ জানানো হবে। সেই অনুযায়ী বৈঠকের পর দিন সুপ্রিম কোর্টে মামলাও হয়। তবে আদালত আবেদনে সাড়া দেয়নি। মামলা খারিজ হয়েছে। আদালতের সেই সিদ্ধান্তের পুনর্বিবেচনার আর্জিও আবার এ দিন দাখিল হয়ে গিয়েছে। সেই আইনি টানাপড়েনের মাঝেই এ বার রাজনীতির সুরও তুঙ্গে উঠতে শুরু করল।

নিট, জেইই এবং কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের যে টানাপড়েন চলছে, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) প্রতিষ্ঠা দিবসে নিজের ভাষণের একেবারে শুরুতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সে প্রসঙ্গে ঢুকে পড়েন এ দিন। পড়ুয়ারা শুধু নন, তাদের পরিজনরাও এখন অত্যন্ত চিন্তিত বলে মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের বাড়ির সকলে চিন্তা করছেন, কবে হবে পরীক্ষা, কী করে হবে, কী করে পরীক্ষাকেন্দ্রে যাবে? গায়ের জোরে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার কারণে ছাত্রছাত্রীরা আজকে সবচেয়ে বিপর্যস্ত।’’

আরও পড়ুন: নিট-জেইই স্থগিত রাখতে সুপ্রিম কোর্টে আর্জি বাংলা-সহ ৬ রাজ্যের

শুধু নিট বা জি অবশ্য নয়, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ফাইনাল পরীক্ষা নিয়েও টানাপড়েন শুরু হয়েছে। ফাইনাল পরীক্ষা না নিয়ে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সবাইকে উত্তীর্ণ ঘোষণা করতে বা ফলপ্রকাশ করতে পারবে না বলে নির্দেশিকা এসেছে। সে বিষয়েও এ দিন তোপ দাগেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘আজ নির্দেশ দিয়েছে, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিতে হবে। পরীক্ষা না নিয়ে ফল ঘোষণা করা যাবে না। ইউসিজিকে আমি প্রশ্ন করব, ছেলেমেয়েদের কেন এ ভাবে বিপদে ফেলছেন? এপ্রিল মাসে আপনারাই তো চিঠি দিয়েছিলেন। যাতে বলেছিলেন, পরীক্ষা নেওয়ার প্রয়োজন নেই।’’ মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘আমার প্রশ্ন হচ্ছে, তখন বলা হচ্ছিল নিরাপত্তার কথা। ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তার কথা বলে নানা রকম পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। আবার দেখুন ১১ জুলাই আর একটা চিঠি দেওয়া হল। বলল পরীক্ষা নিতে হবে। পরীক্ষা না নিয়ে শংসাপত্র দেওয়া যাবে না।’’

ইউজিসি-র আগের চিঠির ভিত্তিতে বেশ কয়েকটি রাজ্য ইতিমধ্যেই পরীক্ষা না নিয়ে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের উত্তীর্ণ ঘোষণা করেছে বলে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন দাবি করেছেন। পরীক্ষা না নিয়ে যে সব রাজ্য ইতিমধ্যেই শংসাপত্র দিয়ে দিয়েছে, সেখানে কী হবে? প্রশ্ন তোলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। সংক্রমণ রুখতে অফিস-কাছারি, দোকান-বাজার, ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ রাখা হচ্ছে, অথচ শুধু পড়ুয়াদের উপরে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে— ছাত্র সমাবেশে ক্ষোভের সুরে বলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘সব বন্ধ, অথচ ছাত্রছাত্রীদের উপরে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে যে, ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষা দিতে হবে। পরীক্ষা দিতে গিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে যদি পৌঁছতে না পারে, তার জন্য দায়ী থাকবে কে?’’

আরও পড়ুন: দক্ষিণ চিন সাগরে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ট্রাম্পকে ‘বার্তা’ বেজিংয়ের

কেন্দ্রের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মামলা হলেও আদালত কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করেনি। কিন্তু আদালতের রায় দেখিয়ে কেন্দ্র যা খুশি তাই করতে পারে না— এমন বার্তাও এ দিন দেওয়ার চেষ্টা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সব কিছু কিন্তু কোর্ট দেখিয়ে হবে না, যাঁরা ভোটের রাজনীতিটা করেন, তাঁদের মনে রাখা উচিত, সবেতে কোর্ট দেখালে ভোটে কিন্তু জবাব পেতে হবে— এ দিন এমনই বলেন তিনি।

কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা না নিয়ে কাউকে উত্তীর্ণ ঘোষণা করা যাবে না বলে যে হেতু নির্দেশ এসেছে, সে হেতু পরীক্ষা নেওয়া হবে বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন জানান। তবে সেপ্টেম্বরে কোনও ভাবেই তা সম্ভব নয় বলে তিনি এ দিন জানিয়ে দেন। পাশে বসে থাকা তৃণমূল মহাসচিব তথা রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ভাষণের মঞ্চে দাঁড়িয়েই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ— পুজোর আগে পরীক্ষা নেওয়া যায় কি না খতিয়ে দেখে নেওয়া হোক, তবে খুব তাড়াতাড়ি সে সিদ্ধান্ত পড়ুয়াদের জানিয়ে দেওয়া হোক। যাঁরা অনলাইনে পরীক্ষা দিতে পারবেন, তাঁদের জন্য অনলাইনের ব্যবস্থা করা যায় কি না, যাঁরা পারবেন না, তাঁদের জন্য বাড়ির খুব কাছেই পরীক্ষা কেন্দ্রের ব্যবস্থা করা যায় কি না— আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই সে সব খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত জানাতে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূল চেয়ারপার্সন। তবে একই সঙ্গে বলেছেন, ‘‘মিনিমাম যতটুকু দরকার, ততটুকুই হবে। ম্যাক্সিমাম কিছুতেই নয়।’’

মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, কেন্দ্রের নির্দেশ যে মানা হচ্ছে, তা কাগজে-কলমে দেখিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু গোটা প্রক্রিয়া ঘিরে কোনও বাড়াবাড়ি হোক তা তিনি চান না, নিয়ম রক্ষার্থে যতটুকু দরকার, ততটুকুই হোক। আর স্কুলের ক্ষেত্রে পরীক্ষা যে রাজ্য সরকার কিছুতেই নেবে না, তা-ও মুখ্যমন্ত্রী এ দিন স্পষ্ট করে দেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি শিক্ষামন্ত্রীকে পরিষ্কার বলছি, স্কুলগুলো আমাদের হাতে, সেখানে কোনও পরীক্ষা এখন হবেই না। শুধু মাধ্যমিক আর উচ্চমাধ্যমিকটা হবে।’’

পরীক্ষা প্রসঙ্গ শেষ করেই এ দিন বিজেপির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সংগ্রামের প্রসঙ্গে ঢুকে পড়েন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছাত্র সংগঠনের প্রতিষ্ঠা দিবসের মঞ্চ থেকে ছাত্র-যুবদের এগিয়ে আসার ডাক দেন। তিনি বলেন, ‘‘করোনা মহামারী না হয় রুখে নেব। কিন্তু রাজনৈতিক মহমারী আপনাদের রুখতে হবে।’’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘করোনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মহামারির তাণ্ডব এই বিজেপি সরকার শুরু করেছে, সারা ভারত জুড়ে সকলের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।’’ এর বিরুদ্ধেই ছাত্র-যুবদের এগিয়ে আসার ডাক দেন তিনি। মমতা বলেন, ‘‘ছাত্র-যৌবন যদি আমার সঙ্গে থাকে, তা হলে মনে রাখবেন, এমন ভাবে আমরা জিতব, যে সারা ভারতবর্ষকে স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেবে বাংলা। একুশে সেই লড়াইই হবে।’’

২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচন যে এখন পাখির চোখ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে, তা এই মন্তব্যেই ফের স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে অনেক দিন ধরেই ঘর গোছাচ্ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচন মিটতেই পরামর্শদাতা হিসেবে নিয়ে এসেছিলেন প্রশান্ত কিশোরকে (পিকে)। তার পর থেকে একের পর জনসংযোগ কর্মসূচি রূপায়ণ করে জনভিত্তি ধরে চেষ্টা সর্বশক্তি দিয়ে তৃণমূল চালাচ্ছে। কিন্তু ছাত্র সমাবেশের মঞ্চে যে ভাবে ‘একুশের লড়াই’-এর কথা তিনি বলেছেন শুক্রবার, তাতে স্পষ্ট যে, আপাতত তৃণমূলের যে কোনও কর্মসূচির লক্ষ্যই বিধানসভা নির্বাচন। ভোট না হয়ে যাওয়া পর্যন্ত সব কর্মসূচিকেই কাজে লাগানো হবে বিজেপি বিরোধী স্বরকে আরও উঁচুতে তোলার জন্য।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy