Advertisement
১৫ অক্টোবর ২০২৪
চাকরির আশ্বাস, তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন বিরোধীদের
Mamata Banerjee

Rampurhat Clash: রেয়াত নয়, বার্তা গ্রামেই

নিহতদের আত্মীয়দের অভিযোগ ছিল তৃণমূলের ব্লক সভাপতি আনারুল হোসেনের দিকে। মমতা গ্রামে দাঁড়িয়েই তাঁকে গ্রেফতার করার নির্দেশও দেন।

বগটুই গ্রামের বাসিন্দা মিহিলাল শেখ হারিয়েছেন স্ত্রী শেলি বিবি ও সাত বছরের মেয়ে তুলিকে।

বগটুই গ্রামের বাসিন্দা মিহিলাল শেখ হারিয়েছেন স্ত্রী শেলি বিবি ও সাত বছরের মেয়ে তুলিকে। নিজস্ব চিত্র।

দয়াল সেনগুপ্ত 
বগটুই (রামপুরহাট) শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২২ ০৬:০২
Share: Save:

বধ্যভূমিতে দাঁড়িয়ে স্বজনহারাদের সান্ত্বনা দিলেন। চাকরির প্রতিশ্রুতি দিলেন। দিলেন ‘সুবিচার’-এর আশ্বাস এবং ক্ষতিপূরণ। বৃহস্পতিবার রামপুরহাটের বগটুই গ্রামে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিলেন, দোষীরা সাজা পাবেই, কাউকে ছাড়া হবে না। দীর্ঘস্থায়ী পুলিশ পিকেট বসানোর নির্দেশ দিলেন বগটুই গ্রামে। আবার বললেন, গোটা ঘটনার পিছনে ‘বৃহত্তর ষড়যন্ত্র’ রয়েছে।

প্রথম থেকেই নিহতদের আত্মীয়দের অভিযোগ ছিল তৃণমূলের রামপুরহাট ১ ব্লক সভাপতি আনারুল হোসেনের দিকে। মমতা গ্রামে দাঁড়িয়েই তাঁকে গ্রেফতার করার নির্দেশও দেন। তার ঘণ্টা তিনেকের মধ্যেই গ্রেফতার হলেন ওই নেতা। মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য পুলিশের ডিজি মনোজ মালবীয়-সহ উপস্থিত পুলিশকর্তাদের নির্দেশ দেন, মামলা এমন ভাবে করতে হবে, যাতে কোনও ভাবেই অভিযুক্তেরা ছাড়া না-পায়। এ প্রসঙ্গে বীরভূমের নানুরের সুচপুর গণহত্যার প্রসঙ্গও তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘সুচপুরে যেমন হয়েছিল, লোকগুলো এখনও ছাড়া পায়নি। ঠিক তেমন ভাবেই পরিবারের লোক, পাড়া-পড়শিদের বক্তব্য নিয়ে এই মামলাটা সাজাতে হবে। এতে আমি কোনও গাফিলতির কথা শুনব না। যেন শুনতে না পাই, একে পেলাম না, ওকে পেলাম না। যেখানেই পালাক, দোষীদের ধরে আনতে হবে!’’

যদিও বগটুই গ্রামে গিয়ে ক্ষতিপূরণ বিতরণ এবং আনারুলকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দেওয়া নিয়ে মমতা বলতেই এ দিকে পুলিশ আনারুলকে গ্রেফতার করতে এসেছে খবর পেয়েই সেখানে ব্লকের তৃণমূল কর্মীরা জমায়েত হতে থাকেন। পুলিশ বেরিয়ে যাওয়ার পরেই আনারুল অনুগামী ওই কর্মীরা বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত তারাপীঠের একটি হোটেল লাগোয়া এলাকা থেকে বিকেলে আনারুলকে ধরে পুলিশ।

রামপুরহাট ১ পঞ্চায়েত সমিতির বড়শাল গ্রাম পঞ্চায়েতও আনারুলের অধীনে ছিল। এই পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ভাদু শেখও আনারুলের ‘কাছের লোক’ বলে পরিচিত ছিলেন। সোমবার, ভাদু শেখের খুনের রাতে আনারুল বলেছিলেন, ‘‘ভাদু এলাকায় খুব ভাল কাজ করছিল। বগটুইকে শান্ত রাখার ক্ষেত্রে ওর ভূমিকা ভাল ছিল।’’ ভাদুর খুনের পরেই বদলা নিতে বগটুইয়ের একাধিক বাড়িতে হামলা চলে বলে অভিযোগ। স্বজনহারা পরিবারগুলির অভিযোগ ছিল, আনারুল হোসেনের নির্দেশেই হামলা হয়েছে। তিনিই পুলিশকে গ্রামে ঢুকতে বারণ করেছিলেন বলে অভিযোগ জানিয়েছিলেন তাঁরা। সেই আনারুল গ্রেফতার হওয়ার খবরে খুশি স্বজনহারারা। হামলায় মাকে হারানো মফিজা বিবি বলেন, ‘‘আনারুলের নির্দেশেই সব হয়েছে। সে রাতে আমরা ওকে ফোন করেছিলাম। কিন্তু, তিনি সহযোগিতা করেননি। যার জন্য এতগুলো প্রাণ চলে গেল। আনারুল ধরা পড়েছে, ঠিক হয়েছে!’’

আনারুলের উত্থান অবশ্য চমকে দেওয়ার মতো। প্রথম জীবনে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন আনারুল। তখন তিনি কংগ্রেসে। রামপুরহাটের বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত আনারুল তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকেই রামপুরহাট ১ ব্লকের সভাপতি। দল সূত্রে খবর, এলাকায় তৃণমূলের সংগঠন বৃদ্ধি করতে আনারুলের বড় ভূমিকা রয়েছে। পরে তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে রামপুরহাট ১ পঞ্চায়েত সমিতিতে ঠিকাদারি শুরু করেন আনারুল। দলের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করে দক্ষ সংগঠক হয়ে ওঠেন। দল সূত্রে খবর, প্রথম দিকে বীরভূমের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের সুনজরে ছিলেন আনারুল। তবে, গত লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে অনুব্রত বেশ কয়েক বার আনারুলকে ব্লক সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও আশিসবাবুর ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুবাদে পদ বেঁচে যায়।

এ যাত্রা অবশ্য পদ বাঁচল না। তৃণমূল নেতা সৈয়দ সিরাজ জিম্মিকে ব্লক সভাপতি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রামপুরহাটের বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়।

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee Rampurhat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE