রাত পোহালেই তৃণমূলের মহাসমাবেশ। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে শুরু হবে তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আহূত সভা। বুধবার বিকেলে সভার প্রস্তুতি প্রায় ৯০ শতাংশই সেরে ফেলেছেন কলকাতার নেতারা। বিকেলের দিকে সভার প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে আসেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। তার পরেই ইন্ডোরের সভামঞ্চের প্রেক্ষাপটে লাগানো হয় সভার ব্যানার। ঘটনাচক্রে, সেই ব্যানারে কেবলমাত্র ছবি রয়েছে মমতার। সভার প্রধান বক্তাও যে তিনিই, তা-ও লিখে দেওয়া হয়েছে ব্যানারে। লক্ষণীয়, প্রেক্ষাপটের ব্যানার থেকে বাদ গিয়েছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি।
বুধবার যখন ব্যানারটি লাগানো হচ্ছিল, তখন ইন্ডোরের ভিতরে দাঁড়িয়ে বিষয়টি তদারকি করছিলেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি বক্সী (তৃণমূলে সুব্রত বক্সী এই নামেই পরিচিত)। সঙ্গে ছিলেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস-সহ কলকাতার তৃণমূলের ছোট-বড়-মেজো-সেজো নেতারা। ব্যানার লাগানোর কাজ অনেকটা এগিয়ে যেতে বক্সী ইন্ডোরে দলের জন্য বরাদ্দ ঘরে চলে যান।
আরও পড়ুন:
তবে মঞ্চের প্রেক্ষাপটে বা সভায় অভিষেকের ছবি না থাকা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি তৃণমূলের কোনও নেতা। সকলেই সে প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়েছেন। ঘটনাচক্রে, এই নেতাজি ইন্ডোরেই ২০২৩ সালের নভেম্বরে মমতার সভায় অভিষেকের ছবি না-থাকা নিয়ে জলঘোলা হয়েছিল। কুণাল ঘোষের মতো নেতারা প্রকাশ্যেই প্রশ্ন তুলেছিলেন, কেন অভিষেকের ছবিও রাখা হল না? যদিও তখন দলের অন্দরে কুণালের যে ‘অবস্থান’ ছিল, ইদানীং তা নেই বলেই দলের অনেকের অভিমত। গত কয়েক মাসে তৃণমূলের ‘ভরকেন্দ্র’ বদলে যাওয়ার একাধিক উদাহরণও রয়েছে। মমতা একাধিক বার বার্তা দিয়েছেন, সরকার তো বটেই, সংগঠনেও তিনিই শেষ কথা। দলীয় বৈঠকেও মমতার বক্তব্য ছিল, তিনি আরও ১০ বছর দল চালাবেন। সেই প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবারের সভামঞ্চে মমতার সঙ্গে অভিষেকের ছবি থাকে কি না, তা নিয়েও কৌতূহল ছিল তৃণমূলের অন্দরে। বুধবার পর্যন্ত অভিষেকের ছবি দেখা যায়নি।
প্রসঙ্গত, এ বছরের শুরুতেই তৃণমূলের ক্যালেন্ডারে দলনেত্রী এবং সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের ছবি নিয়ে গোলমাল বেধেছিল। অভিষেকের দফতর থেকে ২০২৫ সালের ক্যালেন্ডার পাঠানো হয়েছিল দলের জেলা সভাপতিদের কাছে। সেই ক্যালেন্ডারে মমতা এবং অভিষেক দু’জনেরই ছবি ছিল। কিন্তু অভিষেকের ছবিটি তুলনায় মমতার থেকে মাপে বড় ছিল। জেলায় জেলায় ক্যালেন্ডার পৌঁছোনোর পরে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে বড়-ছোট ছবির খবর যায়। পত্রপাঠ পদক্ষেপ করা হয়। রাজ্য নেতৃত্বের তরফে তৃণমূলের জেলা সভাপতিদের কাছে বার্তা যায়, ওই ক্যালেন্ডার ব্যবহার করা যাবে না। সেই নির্দেশমতোই অভিষেকের দফতর থেকে পাঠানো ক্যালেন্ডার ব্যবহার করেননি তৃণমূলে সর্বস্তরের নেতারা।
ঘটনাপ্রবাহ বলছে, গত বছর লোকসভা ভোটের পর থেকে অভিষেক নিজেকে তাঁর লোকসভা কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারের মধ্যেই ‘সীমাবদ্ধ’ রেখেছেন। অধুনা তিনি ব্যস্ত তাঁর কেন্দ্রে ‘সেবাশ্রয়’ প্রকল্প নিয়ে। তাই সাংগঠনিক ভাবে দলের কাজ দেখছেন বক্সীই। ইন্ডোরের সভাও আয়োজিত হচ্ছে দলের এই প্রবীণ নেতার পরিচালনায়। বৃহস্পতিবার সকাল সকাল নেতাদের নেতাজি ইন্ডোরে চলে আসার বিষয়ে কড়া নির্দেশ দিয়েছেন বক্সীই।