আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য টানাপড়েন। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
কেন্দ্র না রাজ্য— আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় কাজ করবেন কার এক্তিয়ারে? গত শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া কেন্দ্র-রাজ্য টানাপড়েন শেষ হল সোমবার। কিন্তু প্রশাসনিক মহলের মতে, প্রথম রাউন্ডে জিতে গিয়েছে রাজ্য সরকার। জিতেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গোটা ঘটনাপ্রবাহের ময়নাতদন্ত করতে নেমে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় শীর্ষস্তরের আমলাদের বদলির ক্ষেত্রে সাধারণত যে আইনি পদ্ধতি মেনে চলা হয়, আলাপন-প্রশ্নে তার একটি ধাপ এড়িয়ে গিয়েছিল কেন্দ্র। সে কারণেই মমতার সঙ্গে সঙ্ঘাতে অন্তত প্রথম রাউন্ডে পিছিয়ে পড়তে হল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে।
কী সেই ধাপ? সেটি হল, রাজ্য সরকারের সঙ্গে কোনও পর্যায়ে কোনও রকম আলোচনা না-করা।
কেন্দ্র এবং রাজ্যের মধ্যে সঙ্ঘাত নতুন কিছু নয়। এর আগেও রাজ্যের অফিসারদের বদলি করা নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে সঙ্ঘাত হয়েছে। কিন্তু আলাপনের ক্ষেত্রে তা চূড়ান্ত পর্যায়ে উঠেছিল। কারণ, আলাপন যেমন-তেমন অফিসার নন। তিনি একটি রাজ্যের মুখ্যসচিব। আর অন্যদিকে, গোটা বিষয়ে জড়িয়ে গিয়েছে দেশের প্রধানমন্ত্রীর নাম। গত শুক্রবার কলাইকুন্ডায় প্রধানমন্ত্রীর পর্যালোচনা বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর অনুপস্থিতির পর থেকেই ঘনঘন বদলাতে থাকে দৃশ্যপট। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেই মুখ্যসচিবও প্রধানমন্ত্রীকে রাজ্যে ইয়াসে ক্ষয়ক্ষতির খতিয়ান দিয়ে দিঘায় প্রশাসনিক বৈঠকের জন্য রওনা হয়ে যান। ঘটনাচক্রে, সেই বৈঠকে আলাপনের অনুপস্থিতি নিয়েই যাবতীয় টানাপড়েনের শুরু। গত শুক্রবার সরাসরি আলাপনকে বদলির চিঠি পাঠায় কেন্দ্রীয় সরকার। সোমবার সকাল ১০টায় নয়াদিল্লিতে কর্মিবর্গ দফতরে পৌঁছনোর নির্দেশ ছিল ওই নির্দেশে।
কিন্তু সেখানেই কেন্দ্রীয় সরকার আইনি পদ্ধতির একটি ধাপ এড়িয়ে গিয়েছে বলে মনে করছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। আইএএস ক্যাডার বিধি অনুযায়ী, কোনও আমলার বদলি নিয়ে কেন্দ্র এবং রাজ্যের মধ্যে ‘মতানৈক্য’ তৈরি হলে শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকারের ইচ্ছাই বলবৎ হবে। অর্থাৎ, তার আগে কেন্দ্রকে রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। রাজ্যের কাছে ছাড়পত্রের কথা বলতে হবে। রাজ্য আপত্তি করলে তবেই ‘মতানৈক্য’-এর প্রশ্ন আসে। এবং তার পর বল যায় কেন্দ্রের কোর্টে। কিন্তু আলাপনের ক্ষেত্রে কেন্দ্র এবং রাজ্যের সেই ‘মতানৈক্য’-এর কোনও অবকাশই দেখা দেয়নি। কারণ, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সরাসরি চিঠি পাঠিয়েছিল আলাপনকেই। রাজ্যের মাধ্যমে নয়। রাজ্যের সঙ্গে আলোচনাও করা হয়নি।
প্রসঙ্গত, রবিবার আনন্দবাজার ডিজিটালে রাজ্যের প্রাক্তন অতিরিক্ত মুখ্যসচিব প্রসাদরঞ্জন রায় লিখেছেন, ‘রাজ্য আর কেন্দ্রের সঙ্গে আইএএস ইত্যাদি কৃত্যকের অফিসারদের সম্পর্ক বেঁধে দেওয়া আছে কয়েকটি বিধিতে। আইএএস অফিসাররা রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকারে (এমনকি, ভিন্ন রাজ্য সরকারেও) কাজ করতে পারেন। কোনও কেন্দ্রীয় পদ খালি হলে (বা খালি হওয়ার আগে) কেন্দ্র রাজ্য সরকারকে জানিয়ে দেয় এবং রাজ্য প্রয়োজনীয় সিনিয়রিটির অফিসারদের সম্মতি জেনে রাজ্য সরকারের মত সমেত তা দিল্লিকে জানায়। তার পর আদেশনামা বেরোয় এবং সেই অফিসারকে দিল্লিতে যোগ দিতে বলা হয়। এ ক্ষেত্রে তার কিছুই হয়নি। এমনকি, কোন পদে যোগ দিতে হবে, সে রকম আদেশনামাও বেরোয়নি। কেবল বলা হয়েছে আলাপন যেন ৩১ মে সকাল ১০টার মধ্যে দিল্লির প্রশাসন মন্ত্রকে যোগ দেন। লক্ষণীয় হল, আদেশনামার শেষে যে বিধিটি জুড়ে দেওয়া হয়েছে। তাতে বলা আছে যে রাজ্য আর কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে মতপার্থক্য থাকলে কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তই বহাল থাকবে। কিন্তু যে বদলির আদেশ বেরোয়নি, যেখানে কোনও পদের উল্লেখই নেই, সেখানে এই বিধি প্রযোজ্যই নয়’।
প্রশাসনিক মহলের বড় অংশের বক্তব্য, কেন্দ্রের ওই ‘তাড়াহুড়ো’র ফলেই প্রথম রাউন্ডে এগিয়ে গেলেন মমতা। এর পর কেন্দ্রীয় সরকার আলাপনকে শো-কজ করে কি না বা আদালতে অথবা ‘ক্যাট’-এ যায় কি না, তা সময় বলবে। তেমন হলে আলাপন বা রাজ্য সরকারের তরফে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তা-ও ভবিষ্যতের গর্ভে। আপাতত টেনিস-রসিক এক প্রাক্তন মুখ্যসচিবের কথায়, ‘‘আলাপনকে সরাসরি বদলির নির্দেশ দিয়ে আসলে মোদীসাহেব ম্যাডামের কোর্টে বল ঠেলে দিয়েছিলেন। ম্যাডাম সেটা সপাটে ডাউন দ্য লাইন রিটার্নে ফেরত পাঠিয়ে প্রথম সেটটা নিয়ে নিয়েছেন!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy