ফাইল চিত্র।
ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ নিয়ে আজ, সোমবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ডাকা বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থাকতে পারবেন না। রাজ্যের তরফে প্রতিনিধিত্ব করবেন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্য দিকে, রবিবারেই কোভিডের নিয়ন্ত্রণ বিধির আওতা থেকে কৃষিকাজ এবং বন্যা মোকাবিলার সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরনের কাজকর্মকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, অমিত শাহের বৈঠক ডাকা হয়েছে বেলা ১১টায়। ওই সময় মুখ্যমন্ত্রীর পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি থাকায় তাঁর পক্ষে বৈঠকে যোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ঘূর্ণিঝড়ের মোকাবিলায় দুই ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরেই সব চেয়ে বেশি প্রস্তুতি রাখছে রাজ্য সরকার। আমপানের সময় উপকূলবর্তী এলাকা থেকে অন্তত ১৯ লক্ষ মানুষকে নিরাপদ জায়গায় সরানো হয়েছিল, এ বারেও হচ্ছে। কোভিড আবহে স্থানান্তরণের কাজে স্বাস্থ্যবিধির কথাও মাথায় রাখতে হচ্ছে। নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া মানুষদের জন্য পানীয় জল, ওষুধ, বিদ্যুৎ সংযোগ, শুকনো খাবার, পোশাক, শিশুখাদ্য, শৌচালয় ইত্যাদির ব্যবস্থা করার উপরে জোর দেওয়া হয়েছে।
২৪x৭ ভিত্তিতে কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে নবান্নে। পাশের উপান্ন থেকে মুখ্যমন্ত্রী নিজে পরিস্থিতির উপরে নজর রাখবেন বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর। জরুরি কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত সকল কর্মী-অফিসারের ছুটি বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। দুর্যোগের পরে দ্রুত পুনর্গঠনের কাজ শুরু করার প্রস্তুতিও চলছে। সরকারের আশ্বাস, পরিস্থিতি অনুকূল থাকলে অতি দ্রুত বিদ্যুৎ, পানীয় জল-সহ অতি প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা স্বাভাবিক করে দেওয়া হবে।
কেন্দ্র রবিবার চিঠি দিয়ে মৎস্যজীবীদের গতিবিধি নিয়ে ফের সতর্ক করেছে রাজ্যকে। কেন্দ্রের বক্তব্য, ইয়াস প্রবল বা অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিতে পারে। তাই ধীবরদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছিল। অভিযোগ, রামনগর ও কাঁথি এলাকায় কিছু মাছ ধরার নৌকা গভীর সমুদ্রে ঘুরছে। তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে রাজ্যকে।
রাজ্য সরকার এ দিন নির্দেশিকা দিয়ে জানিয়েছে, কৃষি, উদ্যানপালন, গ্রামোন্নয়ন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, প্রাক্বর্ষার জরুরি কাজকে করোনা নিয়ন্ত্রণ বিধির আওতা থেকে মুক্ত করা হচ্ছে।
এ দিন সকাল থেকে পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূলবর্তী এলাকায় আবহাওয়া পাল্টাতে শুরু করেছে। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন, হালকা বাতাস বইছে। যুদ্ধকালীন প্রস্তুতিতে বোল্ডার দিয়ে সমুদ্রবাঁধ মেরামতির কাজ দেখেন মৎস্যমন্ত্রী অখিল গিরি। দিঘার কন্ট্রোল রুমে বসে আগামী তিন দিন পরিস্থিতি তদারক করার কথা সেচমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রের।
করোনা পরিস্থিতিতে প্রস্তুত রাখা হচ্ছে হাসপাতালগুলিকে। ঝড়ে হাসপাতালগুলির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হতে পারে। যে-হাসপাতালে জেনারেটর নেই, সেখানে ভাড়ায় জেনারেটর নিতে এবং পর্যাপ্ত জ্বালানি মজুত রাখতে বলা হয়েছে। দীর্ঘ ক্ষণ বিদ্যুৎ না-থাকলে দুই থেকে আট ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় কোল্ড বক্সে টিকা সংরক্ষণ করার ভার্চুয়াল প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রতিটি ব্লকে ও শহরে করোনা রোগীদের জন্য পৃথক আশ্রয় শিবির খোলা হচ্ছে। প্রয়োজনে গৃহ নিভৃতবাসে থাকা উপসর্গহীন রোগীদের ওই সব শিবিরে আনা হবে।
শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে দুই ২৪ পরগনাতেও। উপকূল এলাকার দুর্বল নদীবাঁধগুলি সারানো হচ্ছে। এ দিনেও বহু জায়গায় স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে বাঁধ মেরামত করেছে প্রশাসন। হেলিকপ্টারে গঙ্গাসাগর, বকখালি, জি-প্লট, গোসাবা-সহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে প্রস্তুতি খতিয়ে দেখেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক পি উলগানাথন ও অন্য আধিকারিকেরা। ডায়মন্ড হারবারের জনপ্রতিনিধি, আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করেন সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী বঙ্কিমচন্দ্র হাজরা। স্যাটেলাইট ফোনের ব্যবহার শেখানো হয়েছে কোস্টাল থানাগুলির পুলিশকর্মীদের। হিঙ্গলগঞ্জ, হাসনাবাদ, সন্দেশখালি, মিনাখাঁ-সহ উপকূল এলাকার আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করেন উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত। দুই জেলারই বিভিন্ন বিপজ্জনক জায়গা থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই আশ্রয় শিবির, স্কুল, ক্লাব, কমিউনিটি হলগুলি জীবাণুমুক্ত করা হয়েছে। একই ভবনে যাতে অনেকে একসঙ্গে আশ্রয় না-নেন, দেখা হচ্ছে সেটাও। প্রতিটি ব্লকে ইতিমধ্যে পর্যাপ্ত শুকনো খাবার, জলের পাউচ
পাঠানো হয়েছে।
বন দফতর সূত্রের খবর, জম্বুদ্বীপ, চুলকাটির জঙ্গলের মতো প্রত্যন্ত ও বিপজ্জনক এলাকার বিট অফিসগুলি থেকে বনকর্মীদের সরিয়ে আনা হয়েছে। বন দফতরের সব বিট ও রেঞ্জ অফিসে ১৫ দিনের রেশন মজুত করা হয়েছে। সুন্দরবনে বসতি ও জঙ্গলের সীমানায় দু্র্বল নাইলনের তার মেরামতির কাজ শুরু হয়েছে।
ঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুতি শুরু হয়েছে হাওড়া-হুগলিতেও। বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণশিবির খোলা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy