মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শুভেন্দু অধিকারী।
মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে কেন্দ্রীয় সরকার তলব করলেও রাজ্য সরকার কী অবস্থান নেবে, তা নিয়ে প্রশাসন এবং রাজনীতির সর্ব স্তরে জল্পনা শুরু হয়েছে। প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, আলাপনকে ছাড়া হবে না। তবে প্রশাসনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত ভাবে জানা যাবে শনিবার বিকেল ৩টের সময়। তখনই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি সাংবাদিক বৈঠক করবেন। সেখানেই ওই বিষয়ে তিনি অবস্থান স্পষ্ট করবেন বলে খবর। প্রসঙ্গত, শনিবার দুপুরে দিঘা থেকে কলকাতায় ফিরেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সঙ্গে একই হেলিকপ্টারে শহরে ফিরে এসেছেন আলাপনও।
ঘটনাপ্রবাহ বলছে, মমতার সাংবাদিক বৈঠকের ঠিক পরে পরেই একটি সাংবাদিক বৈঠক করতে চলেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ভার্চুয়াল মাধ্যমে সংবাদমাধ্যমকে শুভেন্দু তাঁর বক্তব্য জানাবেন ও প্রশ্নের উত্তর দেবেন বলে বিজেপি-র পক্ষ থেকে শনিবার দুপুরে জানানো হয়েছে।
আলাপনের অবসরের দিন ৩১ মে। ঠিক সেই দিনই তাঁকে নর্থ ব্লকে গিয়ে দেখা করতে বলা হয়েছে। প্রসঙ্গত, কয়েকদিন আগেই আলাপনের চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধি করার ঘোষণা করেছেন মমতা। ফলে আলাপন ওই দিনের পরেও সরকারি চাকরিতে থাকবেন। এখন প্রশ্ন, কেন্দ্রীয় সরকার তাঁর চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধি করার যে সিদ্ধান্ত রাজ্য নিয়েছে সেটি খারিজ করে দেবে কি? তার চেয়েও আগে রয়েছে আরও একটি প্রশ্ন। মুখ্যসচিবকে দিল্লির ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য নবান্ন ছাড়পত্র দেবে কিনা? শনিবার সেই উত্তরই দিতে চান মমতা। আলাপন-প্রশ্নে রাজ্যের প্রাক্তন আমলাদের একাংশ জানাচ্ছে, এ ভাবে কোনও আইএএস অফিসারকে তলব করা বা তাঁকে জোর করা যায় না। কেন্দ্রীয় সরকার সংশ্লিষ্ট অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিতে পারে। কিন্তু ‘ক্যাট’ (সেন্ট্রাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনাল) বা আদালতে গেলে তা ধোপে টিকবে না। অন্তত এই ক্ষেত্রে কারণ, আলাপনের চাকরির শেষদিনে তাঁকে এই বদলির নির্দেশ যে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং প্রতিহিংসা মূলক’, তা স্পষ্ট।
প্রাক্তন আমলারা পদ্ধতিগত দিক নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন। তাঁদের মতে কোনও অফিসারকে রাজ্য থেকে কেন্দ্রে বদলি করতে গেলে অন্তত সাতটি বিষয় নিরূপণ করতে হয়—
১. শূন্যপদের বিজ্ঞাপন দেওয়া। যা করা হয়নি।
২. বিকল্পের জন্য সংশ্লিষ্ট অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করা। যা করা হয়নি।
৩. সংশ্লিষ্ট অফিসারের তরফে তাঁর মতামত জানানো। যা করা হয়নি।
৪. সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারের তরফে সংশ্লিষ্ট অফিসারের বিকল্পগুলি প্রস্তাব করা। যা হয়নি।
৫. সংশ্লিষ্ট অফিসারের নাম সেন্ট্রাল এলিজেবিলিটি প্যানেলে থাকা। যা জানা নেই।
৬. নতুন পোস্টিং সংশ্লিষ্ট অফিসারের বেতনের স্কেল এবং গ্রেডের সঙ্গে সমান কি না। জানা যায়নি।
৭. সংশ্লিষ্ট রাজ্যের তরফে ওই অফিসারকে যাওয়ার ছাড়পত্র দেওয়া। হয়নি। অর্থাৎ, এর কোনওটিই আলাপনের ক্ষেত্রে মানা হয়নি। সেই কারণেই বিষয়টি ‘বেআইনি এবং পদ্ধতিগত ভাবে’ ভুল বলে ব্যাখ্যা করছেন প্রাক্তন আমলাদের একাংশ।
অন্য দিকে, বিজেপি-র রাজ্য নেতারা আলপনকে তলব নিয়ে এখনও সে ভাবে মুখ খোলেননি। রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘এটা প্রশাসনিক বিষয়। তাই দল এর মধ্যে মাথা গলাতে চায় না।’’ দিলীপ এড়িয়ে গেলেও সাংবাদিক বৈঠক ডেকেছেন শুভেন্দু। জানা গিয়েছে, দলের নির্দেশেই এই সিদ্ধান্ত শুভেন্দুর। বিজেপি চাইছে, শুক্রবার কলাইকুন্ডায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বৈঠকে যেহেতু শুভেন্দু হাজির ছিলেন, তা-ই এই বিষয়েও তিনিই কথা বলুন। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা তাঁর সাংবাদিক বৈঠকে কী বলেন, তা দেখে এবং শুনে নিয়েই শুভেন্দু তার পাল্টা বক্তব্য, ব্যাখ্যা এবং দাবি পেশ করবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy