মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
ইঞ্চিতে ইঞ্চিত লড়াই হবে বিজেপি-র সঙ্গে। দলের অন্দরে স্পষ্ট নির্দেশ দিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অমিত শাহের কলকাতা সফর শুরুর আগেই শুক্রবার দলের গুরুত্বপূর্ণ কোর কমিটি বৈঠকে কিছু সাংসদকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন মমতা। শুক্রবার রাতে অমিতের কলকাতায় পৌঁছনোর কথা। তার অব্যবহিত আগেই মমতার কালীঘাটের বাড়ি লাগোয়া দফতরে ওই বৈঠক হয়। কোর কমিটির সদস্য এবং সাংসদ মিলিয়ে মোট ২৯ জনকে ওই বৈঠকে ডাকা হয়েছিল বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। শাসক শিবির মনে করছে, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি বাংলায় ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। ফলে ভোটের কাজ এবং পরিকল্পনা শুরু করে দিতে চাইছেন মমতা। সেই কারণে শুক্রবারের বৈঠক আরও গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলে মনে করছে দলের একাংশ।
বৈঠকে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি, সোমবার থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দলের প্রচারের পরিকল্পনা করে দিয়েছেন মমতা। জানিয়ে দিয়েছেন, প্রচারে সকলকেই সময় দিতে হবে। দলের চার তারকা সাংসদ দেব, শতাব্দী, মিমি এবং নুসরতকে প্রচারে বেশি করে ঝাঁপানোর নির্দেশ দিয়েছেন দলনেত্রী। পাশাপাশিই জানিয়েছেন, দলের প্রত্যেক শীর্ষনেতাকে কমপক্ষে প্রতি মাসে দলের জন্য ১০ দিন করে সময় দিতেই হবে। গত লোকসভা ভোটের ফলাফলের নিরিখে উত্তরবঙ্গ এবং জঙ্গলমহলে বেশি জোর দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। বস্তুত, উত্তরবঙ্গের দুই নেতাকে তিনি সরাসরিই বলেছেন, নিজেদের মধ্যে গোলমাল কমিয়ে দলকে জেতানোর দিকে নজর দিতে। বৈঠকে উপস্থিত এক নেতার কথায়, ‘‘নেত্রী বলেছেন, কেউ হেরে গেলে তিনি ব্যক্তিগত ভাবে হারবেন না। তৃণমূল হারবে। সেটা যেন সকলে মনে রাখেন!’’
শুক্রবার সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরু হয়েছে। তবে অধিবেশনের প্রথম দিনই অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে রাষ্ট্রপতির ভাষণ বয়কট করেছে তৃণমূল। এর পর তৃণমূল অধিবেশন বয়কটের পথে যেতে পারে বলেও দলের একাংশ মনে করছে। তাই অধিকাংশ সাংসদ দিল্লি পৌঁছননি। সেই কারণে কোর কমিটির বৈঠকে কমিটির সদস্যরা ছাড়াও সাংসদদের একাংশকে ডাকা হয়েছিল। তবে তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, তিন তারকা সাংসদ দেব, মিমি এবং নুসরতের বৈঠকে আসার বিষয়ে কোনও জোরাজুরি করা হয়নি। তবে দেব ছাড়া বাকি দু’জন বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন। বৈঠকে এসেছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যসভার সাংসদ শুভাশিস চক্রবর্তী ও দক্ষিণ কলকাতার সাংসদ মালা রায়। দক্ষিণ কলকাতার সাংসদ মালা সম্প্রতি একটি দুর্ঘটনায় পড়ে আহত হয়েছেন। ডানহাত ভেঙেছে তাঁর। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন। ঘটনাচক্রে, মালার লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী মমতার বিধানসভা কেন্দ্র ভবানীপুর। শুধু তাই-ই নয়, দক্ষিণ কলকাতার একটি কেন্দ্র ছাড়া প্রতিটি কেন্দ্রই রাজ্যের কোনও না কোনও মন্ত্রীর বিধানসভা এলাকা। প্রত্যাশিত ভাবেই শুক্রবারের বৈঠকে ডাকা হয়নি কাঁথির অধিকারী পরিবারের দুই সংসদ সদস্য শিশির ও দিব্যেন্দুকে।
সন্ধ্যায় বৈঠকের পর দলের এক প্রথমসারির নেতার বক্তব্য, লোকসভার কিছু সাংসদ এবং রাজ্যসভার সাংসদদের নির্বাচনের আগে নির্দিষ্ট দায়িত্ব বণ্টন করার জন্যই ওই বৈঠকে ডাকা হয়েছিল। সেই মতোই মমতা বিভিন্ন সাংসদ এবং অন্য নেতাদের দায়িত্ব ভাগ করে দিয়েছেন। নিজের প্রচার প্রথম দফায় শুরু করে দিয়েছেন মমতা। প্রথম দফায় তিনি সেই এলাকাগুলিতেই প্রচার করেছেন এবং করছেন, যেখানে গত লোকসভা ভোটে তৃণমূল তুলনায় খারাপ ফল করেছিল। বাঁকুড়ায় রাজনৈতিক সভা দিয়ে বিধানসভা ভোটের প্রচার শুরু করেছিলেন মমতা। গিয়েছিলেন উত্তরবঙ্গেও। কিছুদিনের মধ্যেই তাঁর আবার উত্তরবঙ্গে যাওয়ার কথা। পাহাড়ে বিমল গুরুং ভোল পাল্টে তৃণমূলের সঙ্গে আসায় পাহাড়ের তিনটি আসন নিয়ে অনেকটাই নিশ্চিন্ত মমতা। পাশাপাশি, সমতলের কিছু আসনেও গুরুংয়ের প্রভাব রয়েছে। উত্তরবঙ্গের দক্ষিণেও প্রচারে জোর দিতে চাইছেন তৃণমূল নেত্রী। প্রথম দফায় তুলনায় ‘কমজোরি’ এলাকায় প্রচার করে শেষপর্বে আবার সেখানে প্রচারে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে মমতার। কিন্তু তাঁর নিজের পাশাপাশিই তিনি দলের তারকা সাংসদ-সহ অন্যদেরও প্রচারে ঝাঁপানোর নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। কারণ, বিজেপি-র বিরুদ্ধে লড়াই এ বার ‘ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy