লক্ষীর ভান্ডারে নাম তুলতে ‘দুয়ারে সরকার’ শিবিরে দীর্ঘ লাইন বালুরঘাট আদর্শ স্কুলে। ছবি: অমিত মোহান্ত
‘দুয়ারে সরকার’-এর শিবিরে যাওয়া তথা ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-এর মতো প্রকল্পে নাম তোলানোর জন্য রাজ্যবাসীকে তাড়াহুড়ো না-করার বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার নবান্নে তিনি বলেন, ‘‘তাড়াহুড়ো করা, এক সঙ্গে ভিড় করার কোনও কারণ নেই। প্রকল্পের সুবিধে সবাই পাবেন, যাঁরা পাওয়ার যোগ্য। বেশি ভিড় করবেন না।’’ তাঁর আশ্বাস, ‘‘এক মাস সময় রয়েছে হাতে। যদি কেউ ফর্ম জমা দিতে না-পারেন, আমরা আবার জমা নেওয়ার ব্যবস্থা করব। দরকার হলে, স্পেশাল ক্যাম্প করে তিন-চার দিন আরও বাড়িয়ে দেব।’’ তিনি জানান, রাজ্যে ২২ হাজারের বেশি শিবির রয়েছে।
তবে মুখ্যমন্ত্রী বার্তা দেওয়ার আগে, এ দিন সকাল থেকে বৃষ্টির মধ্যেও পুরাতন মালদহের সাহাপুর হাইস্কুলের শিবিরে বন্ধ দরজার সামনে থিকথিকে ভিড় ছিল। ‘দুয়ারে সরকার’ শিবিরের জন্য দরজা খুলতেই হুড়মুড়িয়ে পড়ে যান বহু মহিলা। জখম, অসুস্থ হন অনেকে। কাউকে জল দিয়ে সুস্থ করা হয়। কয়েকজনকে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য পাঠাতে হয় হাসপাতালে। সে সময় কিছুক্ষণের জন্য শিবির বন্ধ থাকলেও, পরে ফের শিবির শুরু হয় সাহাপুর স্কুলে। প্রশাসনের দাবি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বুথ স্তরে শিবিরের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। শুধু মালদহই নয়, শিলিগুড়ি থেকে দুই দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি থেকে কোচবিহার—ভিড়ের ছবিতে বিশেষ ফারাক নেই।
‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পে ফর্ম তুলতে গিয়ে এ দিন হাওড়ার জগৎবল্লভপুর পাতিহাল দামোদর হাইস্কুলেও পদপিষ্ট হন স্থানীয় এক মহিলা। তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। মহিলাকে উদ্ধারের সময় পুলিশ লাঠি চালিয়ে জনতাকে সরায় বলে অভিযোগ। তবে লাঠি চালানোর কথা মানেনি পুলিশ।
পূর্ব বর্ধমানের কালনার নাদনঘাট রামপুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিবিরে ভিড়ের চাপে দু’জন মহিলা অসুস্থ হন। পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরের ভিড়িঙ্গিতে শিবির খোলার আগেই অনেকে জড়ো হন। সেখানেও হুড়োহুড়ি পড়ে। পরিস্থিতি সামাল Qদিতে হিমসিম খায় পুলিশ।
মনসাপুজোর জন্য পুরুলিয়ার ১৮টি ব্লকে এ দিন শিবির হয়নি। দু’টি ব্লকে চারটি শিবির হয়েছে। তবে দুই ২৪ পরগনা, ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর, হুগলি, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, বাঁকুড়ার প্রায় সর্বত্র ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পের জন্য শিবিরে ভিড় করতে দেখা গিয়েছে মহিলাদের। অধিকাংশেরই মুখে মাস্ক নেই। দূরত্ববিধিও মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ।
প্রশাসন ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-এর কাউন্টার বাড়ালেও ভিড় কমছে না কেন? ঝাড়গ্রাম জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের ব্যাখ্যা, ‘‘এক জন মহিলার সঙ্গে তাঁর পরিবারের এক-দু’জনও আসছেন। তাই ভিড় বাড়ছে।’’ পাশাপাশি, পশ্চিম বর্ধমানের রানিগঞ্জের একটি শিবিরে এক সিভিক ভলান্টিয়ারের মন্তব্য, ‘‘বিধি মানতে মানুষকে বেশি চাপাচাপি করা যাচ্ছে না। কারণ, জনরোষের আশঙ্কা রয়েছে।’’
বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর ব্লকে রাধানগর পঞ্চায়েতের মুক্তমঞ্চের শিবিরে শিশু কোলে লাইনে ছিলেন রাধানগরের লয়ার গ্রামের এক মহিলা। তাঁর দাবি, ‘‘বাড়িতে বাচ্চাকে দেখার কেউ নেই। তাই সঙ্গে এনেছি। মাস্ক আনতে ভুলে গিয়েছি।’’ অনেকের মন্তব্য, ‘‘ভ্যাপসা গরমে মাস্ক পরা কি সম্ভব?’’ মাস্ক ব্যবহারে সাধারণ মানুষ যখন অনীহা দেখাচ্ছেন, তখন বিষ্ণুপুর স্বাস্থ্য-জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জগন্নাথ সরকার মনে করাচ্ছেন, ‘‘গত তিন-চার দিনে বিষ্ণুপুরে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় চল্লিশ জন।’’ মুখ্যমন্ত্রীও বলেছেন, ‘‘শিবিরে গায়ে গা লাগিয়ে বেশি ভিড় করবেন না। কোভিড-সতর্কতাবিধি জারি রয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy