Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

গ্রামে রাত কাটাতে নির্দেশ, ‘দিদিকে বলো’ দাওয়াই মমতার

এরই পাশাপাশি মমতা এ দিন তাঁর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে অভিযোগ বা মতামত জানানোর জন্য একটি ফোন নম্বর এবং ওয়েবসাইট চালু করে দেন।

নজরুল মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।—ছবি পিটিআই।

নজরুল মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।—ছবি পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৯ ০২:৫৫
Share: Save:

দলে জনসংযোগের ফাঁক ভরাট করতে কর্মী-নেতাদের গ্রামে গিয়ে খাটিয়ায় বসার কথা বলেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২১ জুলাইয়ের সমাবেশে খাটিয়ায় বসার ওই কর্মসূচি ঘোষণার পরেই প্রশ্ন উঠেছিল, শাসক দলের জামা পড়া নেতারা এ কাজে কতদূর ‘আন্তরিক’ হতে পারবেন? এক সপ্তাহের মধ্যেই সেই কর্মসূচিকে আরও এগিয়ে নিয়ে গিয়ে মমতা তাঁদের গ্রামে গিয়ে মানুষজনের সঙ্গে একত্রে খাওয়াদাওয়া করারও নির্দেশ দিলেন। বললেন, ‘‘এলাকায় রাতও কাটাতে হবে নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের।’’

এরই পাশাপাশি মমতা এ দিন তাঁর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে অভিযোগ বা মতামত জানানোর জন্য একটি ফোন নম্বর এবং ওয়েবসাইট চালু করে দেন। ওয়েবসাইটটির নাম হয়েছে ‘দিদিকে বলো’। মমতা বলেন, ‘‘৯১৩৭০৯১৩৭০ নম্বরে ফোন করে যে কোনও সমস্যার কথা জানালে যতটা পারব সমাধানের চেষ্টা করব। www.didikebolo.com ওয়েবসাইটে লগ ইন করেও অভিযোগ জানানো যাবে।’’

সোমবার নজরুল মঞ্চে দলের বিধায়ক, সাংসদ, ব্লক স্তরের নেতাদের সভায় মমতা জানিয়ে দিলেন, দলের এক হাজার জনপ্রতিনিধি ও নেতাকে ১০০ দিনে ১০ হাজারটি গ্রাম ও শহর এলাকায় গিয়ে মানুষের সঙ্গে নিবিড় জনসংযোগ করতে হবে। এক একটি গ্রাম বা এলাকার চার-পাঁচ জন মানুষের ঘরে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে গল্প করে অভাব-অভিযোগ শুনতে হবে। তাঁদের সঙ্গে খাওয়াদাওয়া করতে হবে, রাতও কাটাতে হবে। দরকারে ডাল-রুটি পেলে তাই খাবেন। মানুষের অভিযোগ শুনে তার বিহিতের জন্যই এই ব্যবস্থা।

স্থানীয় সমস্যার প্রতিকারে এবং তৃণমূলের সাংগঠনিক শক্তি বাড়াতে ‘জন সংযোগ সভাও’ করতে নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। সংশ্লিষ্ট এলাকায় যে ওই নেতা গিয়েছিলেন, তার চিহ্নস্বরূপ সেই নেতাকে সেখানে তৃণমূলের দলীয় পতাকা উত্তোলন করে আসতে হবে। কে কোন এলাকায় গিয়ে কাদের সঙ্গে দেখা করবেন, তা অবশ্য দল থেকে বেছে দেওয়া হচ্ছে। কী প্রশ্ন করতে হবে, তাও আগাম ঠিক করে দিচ্ছে দল। সংশ্লিষ্ট নেতা-কর্মী জনসংযোগ ঠিক ভাবে করছেন কি না, তাতেও দল নজরদারি চালাবে।

আরো পডু়ন: প্রশান্তের ছোঁয়া, তৃণমূল এবার নব কলেবরে

এই ভাবে জনসংযোগের পদ্ধতি অবশ্য আগেই দেখা গিয়েছে বিজেপিতে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এটা জনসম্পর্ক তৈরির ‘আরএসএস ঘরানা’। এ বার তৃণমূল কার্যত সেই পথেই পা বাড়াল। এর পিছনে ভোট-কুশলী প্রশান্ত কিশোরের পরামর্শ রয়েছে বলেও তৃণমূল অন্দরের খবর।

পশ্চিমবঙ্গের প্রত্যন্ত গ্রামে গিয়ে মানুষের সঙ্গে খাওয়াদাওয়া করেছিলেন বিজেপির অমিত শাহ, দিলীপ ঘোষেরা। তখন সেই ঘটনাকে ‘সাজানো’ বলে বিরোধিতা করেছিল তৃণমূল। এখন তৃণমূল বিজেপির ধাঁচেই জনসংযোগ বাড়াতে চাওয়ায় বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহের প্রতিক্রিয়া, ‘‘তৃণমূলের নতুন মাস্টারমশাই বিজেপির বিদ্যা চুরি করে তৃণমূলকে পরীক্ষায় পাশ করাতে পারবেন না। কারণ, ছাত্র অযোগ্য।’’ রাহুলের প্রশ্ন, ‘‘মাত্র আট বছরে মা-মাটি-মানুষের দলের জনসংযোগে এত বড় গহ্বর তৈরি হল কী ভাবে? তৃণমূল নেত্রীকেই সেই জবাব দিতে হবে। আর অমিত শাহ থেকে শুরু করে বিজেপির অন্য নেতারা যখন মানুষের বাড়িতে গিয়ে থাকছিলেন, খাচ্ছিলেন, তখন তো তৃণমূল বিরোধিতা করত। এখন বিজেপি সেই বিরোধিতা ফিরিয়ে দিলে কেমন লাগবে?’’

বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীরও কটাক্ষ, ‘‘তৃণমূলের ফাটল গহ্বরে পরিণত হয়েছে বলেই সবাইকে ডেকে ডেকে বলতে হচ্ছে দিদিকে বলো। কিন্তু এখন আর পঞ্চায়েত সদস্য, কাউন্সিলর বা বিধায়ক-সাংসদদের বলে কোনও লাভ নেই। দিদিকে বললে তিনি কতটা শোনেন, তা তৃণমূলের বড় নেতারা ভালই জানেন!’’ কংগ্রেসের আব্দুল মান্নানের বক্তব্য, ‘‘এই ধরনের নাটক এবং চমকে কোনও লাভ হবে না। দিদিকে নতুন করে বলার কী আছে? কাটমানি কী ভাবে নেওয়া হয়েছে, পঞ্চায়েত এবং পুরসভার ভোট কী ভাবে লুঠ হয়েছে, সবই তো দিদি জানেন।’’

লোকসভা ভোটে বিজেপির কাছে ১৮টি আসনে ধাক্কা খাওয়ার পরে তৃণমূলের জেলাওয়াড়ি বৈঠকগুলিতে বারবারই মমতা দলের জনবিচ্ছিন্নতা নিয়ে উদ্বেগ ব্যক্ত করেছিলেন। কেন জনসংযোগ বৃদ্ধির উপর এত জোর দিতে হচ্ছে, সে প্রশ্নের জবাবে মমতা বলেন, ‘‘আমরা সংগঠিত দল নই। ফলে তৃণমূল স্তরে মানুষের সঙ্গে আরও বেশি যোগাযোগ বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। অন্য দল তথ্য সংগ্রহের নামে যা করছে, তার মোকাবিলায় জনসংযোগই আমাদের অস্ত্র।’’

তবে কোনও ভাবেই দলের জনভিত্তি দুর্বল হয়েছে বলে স্বীকার করতে মমতা রাজি হননি। কেন এখন আলাদা ভাবে ফোন নম্বর দিতে হচ্ছে? তাঁর জবাব, ‘‘দলকে আধুনিক পদ্ধতিতে সড়গড় করা হচ্ছে। আধুনিক ব্যবস্থায় মানুষের কাছে পৌঁছতে চাইছি।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy