বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্যের প্রতিবাদে সরকারপক্ষের নিন্দাপ্রস্তাবে বুধবার তেতে উঠল বিধানসভা। বক্তৃতা করতে উঠে নাম না করে শুভেন্দুকে নিশানা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘সভাপতি হওয়ার জন্যই এ সব করছেন! সভাপতি কি লড়াই করে হতে হয়? যে যোগ্য, সে-ই পাবে সভাপতির পদ।’’
শুভেন্দু অবশ্য সেই সময় বিধানসভার অধিবেশনকক্ষে উপস্থিত ছিলেন না। তিনি বাইরে ছিলেন, কারণ তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতার সময় সভাকক্ষ থেকে ওয়াকআউট করেছিলেন বিজেপি বিধায়কেরা। বাইরে তাঁরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। তাঁদের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন শুভেন্দুই। মুখ্যমন্ত্রীর ‘সভাপতি’ মন্তব্যের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ‘‘এটা তো তৃণমূল নয়। এটা বিজেপি। এখানে নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সভাপতি নির্বাচন হয়। বিজেপিতে ‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ নীতি আছে। এমন কোনও ব্যক্তি যিনি একটি পদে রয়েছেন, এবং যদি তাঁকেই অন্য দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়, তা হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে দিল্লিতে ডেকে কথা বলেন শীর্ষ নেতৃত্ব। জানতে চাওয়া হয়, বিরোধী দলনেতা পদে থাকতে চান, না কি সভাপতি? তার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাই ওঁর মন্তব্যের জবাব দেওয়ার কোনও প্রয়োজন বোধ করছি না। আসলে ২০২১ সালে ১৯৫৬ ভোটে আমার কাছে হারের কথা এখনও ভুলতে পারেননি উনি। তাই এ সব কথা বলছেন।’’
দলের নতুন সর্বভারতীয় সভাপতি বেছে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বিজেপিতে। দলীয় সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় স্তরের পাশাপাশি বাংলাতেও রাজ্য সভাপতি পদে বদল আসন্ন। সেই পদের জন্য সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে যে সব নাম নিয়ে বিজেপির অন্দরে আলোচনা চলছে, সেই তালিকায় শুভেন্দুও রয়েছেন। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েক বার দিল্লিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন শুভেন্দু। কিন্তু বিজেপিতে ‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ নীতি চালু রয়েছে। ফলে বিরোধী দলনেতা পদে থাকা শুভেন্দুকে রাজ্য সভাপতি পদে বসানো হবে কি না, তা নিয়ে জল্পনা চলছে দলে। বিজেপির সাংগঠনিক নিয়মরীতি বলে, যদি তাঁকে রাজ্য সভাপতি করা হয়, তা হলে বিরোধী দলনেতার পদ তাঁকে ছাড়তে হবে। ঠিক যেমন ভাবে ২০১৯ সালে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পর কয়েক মাসের মধ্যেই সর্বভারতীয় সভাপতির পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন অমিত শাহ। সভাপতি হয়েছিলেন জেপি নড্ডা।
মঙ্গলবার বিধানসভার বাইরে দাঁড়িয়ে শুভেন্দুর ‘চ্যাংদোলা’ মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। পাল্টা আক্রমণ শানিয়েছে তৃণমূলও। বুধবার বিরোধী দলনেতার বক্তব্যের বিরোধিতা করেই বিধানসভায় নিন্দাপ্রস্তাব এনেছিল সরকার পক্ষ। ওই নিন্দাপ্রস্তাব পেশ করেছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী গোলাম রব্বানী। তারই বিরোধিতা করতে শুরু করেন বিজেপি বিধায়কেরা। তাঁদের বক্তব্য, শুভেন্দু অধিবেশনকক্ষে উপস্থিত নেই। এ ভাবে তাঁর সম্পর্কে আলোচনা করা যায় না। শুভেন্দুকে সাসপেন্ড করার প্রতিবাদে বুধবার কালো পোশাক পরেও এসেছিলেন বিজেপি বিধায়কেরা।
বিজেপি বিধায়কেরা প্রতিবাদ দেখানোর সময়েই বিধানসভায় বক্তৃতা করতে ওঠেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘গত কালের বিবৃতি শুনেছি। আমরা রাজ্য, পুরসভা, পঞ্চায়েত চালাই। তখন চেয়ারে বসে চালাই। দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে আমাদের।’’ মুখ্যমন্ত্রী বক্তৃতা শুরু হওয়ার পরেই আরও সরগরম হয় বিধানসভা। দলের মুখ্যসচেতক শঙ্কর ঘোষের নেতৃত্বেই চলে বিজেপির প্রতিবাদ। সেই সময় শঙ্করের উদ্দেশে মমতা বলেন, ‘‘আপনারা বলতেই পারেন। আমরা শুনব। গণতন্ত্রে প্রতিবাদ হতে পারে। কিন্তু আমার কথাও শুনতে হবে।’’ স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘আপনারা যা বলছেন, উনি শুনবেন।’’ এর পরেই বিক্ষোভ থামিয়ে দেন শঙ্করেরা। কিছু ক্ষণ মুখ্যমন্ত্রীর কথা শোনেন তাঁরা।
খানিক বাদে মমতার অনুমতি নিয়ে বলতে ওঠেন শঙ্করও। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘বিরোধী দলনেতা অনুপস্থিত। ফাঁকা মাঠে গোল দিতে এসেছেন উনি। কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল, তা আমি জানি না। আপনি বিধানসভার সদস্য না হয়েও বিধানসভা ভাঙার সময় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। বিরোধী দলনেতা বাইরে। আর তাঁর মন্তব্যের জবাব দিতে প্রস্তাব আনছেন। কেন ফিরহাদ হাকিম, সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হবে না?’’
শঙ্করের বলা শেষ হলে মমতাও জবাব দেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি বাইরে কিছু বললে আপনারা এখানে বলতে পারেন। তা হলে বিরোধী দলনেতা বললে কেন আলোচনা হবে না? আমাকে সার্টিফিকেট নিতে হবে? ফিরহাদ হাকিমকে দল থেকে বলা হয়েছে, এ সব কথা বলা যাবে না। মদন, সিদ্দিকুল্লাকেও বলা হয়েছে।’’ মমতা আরও বলেন, ‘‘আমি কোনও চেয়ার ভাঙিনি। প্রমাণ করতে পারলে চেয়ার ছেড়ে দেব।’’ এর পরেই স্লোগান তুলে ওয়াকআউট করেন বিজেপি বিধায়কেরা। পরে শুভেন্দুর নেতৃত্বে তাঁরা বাইরে বিক্ষোভ দেখান।