মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।
নরেন্দ্র মোদীর আমলে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নারী নির্যাতনকে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ‘মূল হাতিয়ার’ করতে চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার ২১ জুলাইয়ের সভামঞ্চ থেকে তাঁর বক্তৃতায় তার ইঙ্গিত স্পষ্ট। এবং সেই আক্রমণে তিনি সবচেয়ে আগে রাখছেন মণিপুরের ঘটনাকে। মমতা নিজে মহিলা রাজনীতিক হওয়ায় নারী নির্যাতন নিয়ে তাঁর বক্তব্যের জোর স্বভাবতই অনেক বেশি। ফলে তাঁর বিষয়টি নিয়ে বাড়তি ‘উদ্যোগী’ হওয়ার পিছনে কেউ চট করে ‘রাজনীতি’ খুঁজতে না-ও পারেন। পারলেও তা প্রকাশ্যে বলা কঠিন!
তৃণমূল সূত্রের খবর, সমস্ত দিক খতিয়ে দেখেই মমতা মণিপুর নিয়ে ‘বাড়তি সরব’ হওয়ার কৌশল নিয়েছেন। ধর্মতলার সভা থেকে মমতা আবার বলেছেন, ‘ইন্ডিয়া’র মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে তিনি মণিপুর যেতে চান। মমতা বলেন, ‘‘এটা নিয়ে আমার অরবিন্দের (কেজরীওয়াল, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী) সঙ্গে কথাও হয়েছে। আমরা ওখানে গিয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলতে চাই। বলতে চাই, সারা দেশ আপনাদের পাশে রয়েছে। সকলে রাজি থাকলে আমরা ‘ইন্ডিয়া’র মুখ্যমন্ত্রীরা মণিপুরে যাব।’’
গত মে মাসে মণিপুরে দু’জন জনজাতি মহিলাকে নগ্ন করে রাস্তায় হাঁটানো হয়েছিল। ওই ঘটনাপ্রবাহের ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসে গত বৃহস্পতিবার রাতে। শুক্রবার ওই ঘটনা নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কড়া মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্ট। আড়াই মাসের বেশি সময় ধরে মণিপুরে জাতিহিংসা চলছে। কিন্তু রা কাড়েননি মোদী। কিন্তু ওই ভিডিয়ো এবং দেশের শীর্ষ আদালতের মন্তব্যের পর প্রধানমন্ত্রীকেও মৌনব্রত ভাঙতে হয়েছে। বৃহস্পতিবার সংসদে ঢোকার সময়ে মোদী বলেছেন, ‘‘এই ঘটনা যে কোনও সভ্য সমাজের লজ্জা।’’ সেই সঙ্গে রাজস্থান, পশ্চিমবঙ্গের মতো কয়েকটি অ-বিজেপি রাজ্যে মহিলাদের অবস্থার কথাও উল্লেখ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
শুক্রবার শহিদ দিবসের সভামঞ্চ থেকে মোদীর উদ্দেশে মমতা বলেন, ‘‘আপনার মনটা বড় করুন! আপনি বিদেশে গিয়ে দেশের জন্য কাঁদছেন। আর আপনাদের জন্য দেশের মানুষ কাঁদছে। আপনার মনে মা-বোনেদের প্রতি এতটুকু ভালবাসা নেই? একদিন এই মহিলারাই আপনাদের ছুড়ে ফেলে দেবে!’’ মমতারও আরও বক্তব্য, ‘‘এই সরকার হল বেটি পড়াও, বেটি জ্বালাও!’’
সর্বভারতীয় কুস্তি সংস্থার প্রাক্তন প্রধান ব্রিজভূষণ শরণ সিংহের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ নিয়ে যখন কুস্তিগিররা রাস্তায় নেমে আন্দোলন করছেন তখন সাক্ষী মালিক, বজরং পুনিয়াদের সংহতি জানিয়েছিলেন মমতা। শুধু তাই নয়, ব্রিজভূষণের গ্রেফতারের দাবিতে কলকাতার রাস্তায় জোড়া মিছিল করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনিই একমাত্র মুখ্যমন্ত্রী যিনি কুস্তিগিরদের সমর্থনে রাস্তায় নেমেছিলেন। বিজেপি সাংসদ ব্রিজভূষণ বৃহস্পতিবার জামিন পেয়েছিলেন। শুক্রবার তা নিয়েও কটাক্ষ ছুড়ে দিয়ে মমতা বলেন, "ওই তো, কালকে জামিন পেয়ে গেল!"
মমতা বক্তৃতা শেষ করার অব্যবহিত পরেই দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক করেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তিনিও মণিপুরের ঘটনাকে ‘লজ্জাজনক’ বললেও বাংলায় মহিলাদের ‘বিপন্নতা’র কথাই সর্বসমক্ষে তুলে ধরতে চেয়েছেন। অনেকের মতে, মণিপুরের ঘটনার অভিঘাত যে কোথায় পৌঁছেছে, তা বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে নিচুতলা— সকলেই বুঝতে পারছেন। তাই এখন রাজ্যভিত্তিক ‘পাল্টা’ ঘটনা খোঁজা শুরু হয়েছে।
মণিপুরের পাশাপাশি গুজরাতের বিলকিস বানোর ধর্ষকদের কারামুক্তি নিয়েও বিজেপির তীব্র সমালোচনা করেন তৃণমূল নেত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘এক দিকে বলছে বেটি পড়াও, আর অন্য দিকে চলছে বেটি জ্বালাও! ধর্ষকদের ছেড়ে দাও!’’
মোদী ক্ষমতায় আসার পরে পরেই বিজেপি সাংগঠনিক ভাবে ‘পুবে তাকাও নীতি’ (লুক ইস্ট পলিসি) নিয়েছিল। যা ছাপ ফেলেছিল কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মধারাতেও। এক দিকে যেমন পূর্ব ও উত্তর-পূর্বে বিজেপি সংগঠন বিস্তারে ঝাঁপিয়েছিল, তেমনই বাজেটেও প্রচুর বরাদ্দ ঘোষণা করা হয়েছিল। উত্তর-পূর্বে সিকিম বাদে প্রায় সব রাজ্যেই হয় বিজেপির একক শক্তির সরকার অথবা তারা সহযোগী। সেই উত্তর-পূর্বের মণিপুর নিয়ে বিজেপি যখন ‘নাস্তানাবুদ’, তখন গেরুয়া শিবির এবং প্রধানমন্ত্রী মোদীর উপর আরও চাপ বাড়াতে চাইছেন মমতা। সে কারণেই মণিপুরকে ‘চোখের মণি’র মতো রক্ষা করছেন। কারণ, মমতা চাইছেন, লোকসভা ভোটের আট মাস আগে একটি বিজেপি-শাসিত রাজ্যের ঘটনাকে যত দিন সম্ভব ‘জীবন্ত’ রেখে দেওয়া। যাতে লোকসভা ভোটের সময় গোটা দেশের সেটি মনে থাকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy