পঞ্চায়েত ভোটের আগে দুর্নীতি নিয়েও বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: ফেসবুক থেকে।
‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ কর্মসূচিতে গিয়ে প্রায় রোজই সাধারণ মানুষের ক্ষোভের মুখে পড়ছেন ‘দিদির দূতেরা’। অবশেষে তা নিয়ে মুখ খুললেন ‘দিদি’।
পঞ্চায়েত ভোটের আগে রাজ্য জুড়ে ওই কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তৃণমূল। ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ যে তাঁরই প্রকল্প, তা-ও জানিয়েছেন মমতা। এবং বলেছেন, ‘‘সমস্যা থাকলে নিশ্চয়ই বলবেন। কিন্তু কুৎসায় কান দেবেন না।’’ অর্থাৎ, মমতা বলতে চেয়েছেন, অনেকে ওই কর্মসূচি নিয়ে ‘কুৎসা’ও করছেন। তবে একই সঙ্গে দুর্নীতি প্রসঙ্গেও দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি বার্তা দিয়েছেন নেত্রী। বলেছেন, ‘‘লোভ করবেন না।’’ আরও বলেছেন, ‘‘এক-দু’জন খারাপ। সবাই নয়। কেউ ভুল করে থাকলে মানুষের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিন। কেউ কারও কাছ থেকে কিছু নিয়ে থাকলে তাঁকে তা ফিরিয়ে দিন।’’
পঞ্চায়েত ভোটকে সামনে রেখে বাংলায় ১০ কোটি মানুষের সমস্যার কথা জানতে ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তখনই জানানো হয়েছিল, এই কর্মসূচির রূপায়ণের দায়িত্বে থাকবেন ‘দিদির দূত’। ওই ‘দূত’ হিসাবে দলের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং নেতানেত্রীদেরই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কর্মসূচির প্রথম দিন থেকেই গোলযোগ বেধেছে। মানুষের অভাব-অভিযোগ শুনতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়ছেন ‘দিদির দূতেরা’। তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ, মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক থেকে শুরু করে তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়, বিধায়ক লাভলি মৈত্র, অভিনেত্রী সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়দের ঘিরে বিক্ষোভের ছবি প্রকাশ্যে এসেছে। গত শনিবারেই উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুরে খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষকে অভিযোগ জানাতে গিয়ে তৃণমূলের এক কর্মীর কাছে চড় খেতে হয় স্থানীয় এক বাসিন্দাকে। ঘটনাচক্রে, তিনি এলাকার স্থানীয় বিজেপির মণ্ডলের নেতা। এ নিয়ে সরগরম হয়েছিল রাজ্য রাজনীতি। মন্ত্রী অবশ্য আক্রান্ত ব্যক্তিকে জড়িয়ে ধরে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তার পরেও রবিবার উত্তরবঙ্গে মন্ত্রী উদয়ন গুহ বিক্ষোভের মুখে পড়েন।
এত দিন বিষয়টি নিয়ে মমতার দিক থেকে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। সোমবার মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘির সভায় এক কর্মসূচিতে অবশেষে এ নিয়ে মুখ খুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। স্পষ্টই বলেছেন, ‘‘এটা আমারই প্রকল্প। আপনার সমস্যা থাকলে নিশ্চয়ই বলবেন। সমস্যা তো থাকেই। তবে কারও কথা শুনে কুৎসা-অপপ্রচারে কান দেবেন না।’’ মুখ্যমন্ত্রীর কথায় স্পষ্ট যে, ১১ বছর তাঁর দল সরকার চালানোর পরেও এ রাজ্যে সাধারণ মানুষের সমস্যা রয়েছে। তবে পাশাপাশিই তিনি বলেছেন, এই কর্মসূচি নিয়ে ‘কুৎসা-অপপ্রচার’ চালানো হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, বাংলায় শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগে গত কয়েক মাসে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের মতো তৃণমূলের নেতারা গ্রেফতার হয়েছেন। আবার গরু পাচার কাণ্ডে জেলে রয়েছেন বীরভূমের তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। কয়লা পাচারেও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। আবার তারই পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় দুর্নীতির অভিযোগও সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে। ওই প্রকল্প নিয়েও নাজেহাল হতে হচ্ছে শাসকদলকে। যদিও কিছু ক্ষেত্রে ওই প্রকল্পে দুর্নীতির সঙ্গে বিরোধী বিজেপির যোগাযোগও মিলেছে। তবে স্বাভাবিক ভাবেই ‘শাসক’ এবং রাজ্য স্তরে প্রকল্পের ‘রূপায়ক’ হিসাবে তৃণমূলের পঞ্চায়েত স্তরের নেতাদের উপরেই ওই দুর্নীতির ‘দায়’ গিয়ে পড়েছে। সেই প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলের সর্বময় নেত্রীর সোমবারের মন্তব্য ‘তাৎপর্যপূর্ণ’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy