মঙ্গলবার বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
কেন্দ্রীয় বাজেটে বাংলাকে বঞ্চনা করা হয়েছে, বিধানসভা থেকে এমনটাই মন্তব্য করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে তাঁর বার্তা, উত্তরবঙ্গ যেন এই বাজেটকে মনে রাখে। উল্লেখ্য, উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে বিজেপির প্রভাব তুলনামূলক বেশি। এ বারও সেখান থেকে ছ’টি আসনে হারতে হয়েছে তৃণমূলকে। লোকসভা ভোটের সময়ে উত্তরবঙ্গে প্রচারে বেশি জোর দিয়েছিল কেন্দ্রীয় শাসকদল। তা সত্ত্বেও বাজেটে কেন বাংলা তথা উত্তরবঙ্গকে বঞ্চনা করা হল, সেই প্রশ্ন তুলেছেন মমতা। বাজেটে বিহার এবং অন্ধ্রপ্রদেশের মতো রাজ্যের প্রাপ্তি নিয়েও মন্তব্য করেছেন তিনি।
এ বারের বাজেটে বাংলার কথা সে ভাবে উল্লেখ করা হয়নি। বাজেট প্রস্তাব পাঠের সময় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ‘পূর্বোদয় পরিকল্পনা’র কথা জানান। সেই সময়ে বিহার, ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা ও অন্ধ্রপ্রদেশের সার্বিক উন্নয়নের কথা বলা হয়। এর পর রেল প্রসঙ্গে অমৃতসর-কলকাতা বাণিজ্যিক করিডরের কথা উল্লেখ করেন নির্মলা। এ ছাড়া সমগ্র বাজেটে বাংলার নামটুকুও নেওয়া হয়নি। কোনও বরাদ্দও করা হয়নি বাংলার জন্য। এই প্রস্তাবকে কটাক্ষ করে মঙ্গলবার মমতা বলেন, ‘‘বাংলাকে বঞ্চিত করা হয়েছে। বাংলা কারও দয়া চায় না। কিন্তু তার সম্মান বিঘ্নিত হলে বাংলার মানুষ কিন্তু গর্জন করবে, ছেড়ে কথা বলবে না।’’
এর পরেই উত্তরবঙ্গের প্রসঙ্গ টেনে মমতা বলেন, ‘‘ভোটের সময়ে ওরা বড় বড় কথা বলেছিল। ভোটের পর দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়াংকে ভুলে যায়। এটাই ওদের ধরন। দার্জিলিং যেন এই বাজেটকে মনে রাখে। সিকিম পাক, কিন্তু দার্জিলিংকে কেন বঞ্চনা?’’
বিহার এবং অন্ধ্রপ্রদেশের জন্য যে এ বারের বাজেটে বেশি প্রাপ্তিযোগ থাকবে, তা আগেই আন্দাজ করেছিলেন অনেকে। কারণ এই দুই রাজ্যের শাসকদল কেন্দ্রে বিজেপিকে সরকার গড়তে সাহায্য করেছে। এ বারের লোকসভা নির্বাচনে কেন্দ্রে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি বিজেপি। এনডিএ শরিকদের উপর ভরসা করে গড়ে উঠেছে তৃতীয় বারের মোদী সরকার। কিন্তু স্পিকার পদ কিংবা গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রিত্ব বিহারের নীতীশ কুমারের জেডিইউ কিংবা অন্ধ্রের চন্দ্রবাবু নায়ডুর তেলুগু দেশম পার্টি (টিডিপি) পায়নি। তাই বাজেটে যে তাঁদের দু’হাত ভরে দেবে কেন্দ্র, তা আগে থেকেই আন্দাজ করা গিয়েছিল। মমতা সেই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘একটা সরকার স্পিকার পদ বা মন্ত্রিত্ব না দিয়ে কেবল শেয়ারের দুর্নীতি করে এবং অর্থ দিয়ে শরিকদের হাতে রাখছে। শরিকেরাই বা কেন এটা গ্রহণ করছে, আমার জানা নেই। অন্ধ্র বা বিহারকে টাকা দেওয়ায় আমার আপত্তিও নেই। তারাও আমাদের দেশের মধ্যেই রয়েছে। কিন্তু এক জনকে দিতে গিয়ে আর এক জনকে বঞ্চনা করা যায় না।’’
১০০ দিনের টাকা নিয়েও বাজেটে কোনও দিশা দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ মমতার। বলেন, ‘‘১০০ দিনের কাজের টাকার কোনও হদিস নেই বাজেটে। বাংলাদেশ একটি স্বতন্ত্র দেশ। সেই দেশের প্রায় সমান ভোটার কিন্তু রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। এই রাজ্যকে তা-ও বঞ্চনা করা হচ্ছে।’’
এ বারের বাজেটে সোনা, রুপো এবং প্ল্যাটিনামের মতো ধাতুর দাম কমেছে। কর হ্রাস করা হয়েছে ওই ধাতুগুলি থেকে। কিন্তু গরিবের এতে লাভ হবে না বলে জানান মমতা। বলেন, ‘‘মেয়েরা সোনা-রুপো পরুক। কিন্তু সাধারণ ঘরের মেয়েদের জন্য তো এটা নয়। খাদ্যের উপর কোনও ভর্তুকি নেই কেন? আগের বারও জিরের উপর কর ছিল, হিরের উপর ছিল না। আসলে এই বাজেট গরিবের দিকে ফিরে না তাকানোর বাজেট। যাদের অনেক আছে, তারা বাজেটের মাধ্যমে আরও পাবে। যাদের নেই, তারা কিছুই পাবে না। এটি দিশাহীন, জনগণবিরোধী বাজেট। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করাই এই বাজেটের একমাত্র উদ্দেশ্য। এটি অন্ধকার বাজেট।’’
কেন্দ্রের কাছ থেকে এখনও বাংলার এক লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাওনা রয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। তা সত্ত্বেও বাংলাকে বঞ্চনা করায় ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তিনি। বাজেটে চাকরির কোনও সংস্থান না থাকাকেও কটাক্ষ করেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy