ফাইল চিত্র।
নোট বাতিলকে ঘিরে নরেন্দ্র মোদী ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংঘাতে নতুন মাত্রা যোগ হল। প্রায় দেড় বছর শীতঘুমের পরে বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার তদন্তে সিবিআই ফের সক্রিয় হয়ে উঠতেই পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন মমতা।
দেশের শীর্ষ আদালতের নির্দেশে সারদার মতো রোজভ্যালি অর্থ লগ্নি সংস্থার অনিয়মের অভিযোগ নিয়েও তদন্ত করছে সিবিআই। সেই সূত্রে মঙ্গলবার তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে নোটিস পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। তাৎপর্যপূর্ণ হল, অতীতে সারদা-তদন্তে সিবিআই দলের কাউকে নোটিস পাঠালে মুখ খুলতে চাইতো না তৃণমূল। কিন্তু সুদীপকে নোটিস পাঠানোর খবর খোদ মমতাই টুইট করে জানিয়েছেন! সেই সঙ্গে তাঁর অভিযোগ, ‘‘প্রতিহিংসার রাজনীতি করছে বিজেপি। তবে যা-ই করুক, নোট বাতিলের বিরুদ্ধে আন্দোলন থেকে তৃণমূলকে টলাতে পারবে না।’’
সিবিআই তদন্ত নিয়ে তৃণমূল নেত্রীর এই পাল্টা আক্রমণেই সংঘাতের মনোভাব স্পষ্ট। এই ব্যাপারে নরেন্দ্র মোদীর সমালোচনায় তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালও। তাঁর মন্তব্য, ‘‘মোদীজি, সিবিআইয়ের ভয় দেখিয়ে বিরোধীদের মাথা নত করাতে পারবেন না! সকলেই রাহুল গাঁধী নন!’’ কৃষিঋণ মকুবের প্রশ্নে রাহুল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করায় তাঁদের মনে যে বিরাগ জন্মেছে, মমতাকে সামনে রেখে সেটাই প্রকাশ করে দিয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী।
রোজভ্যালি তদন্তে দেখা করতে বলে গত মাসেই সুদীপকে এক প্রস্ত বার্তা পাঠিয়েছিল সিবিআই। কিন্তু সংসদের অধিবেশনে ব্যস্ততার কারণ দেখিয়ে সেই তলব এড়িয়ে গিয়েছিলেন তিনি। শীতকালীন অধিবেশন শেষ হতেই তাঁকে এ দিন ফের সমন পাঠানো হয়েছে। সিবিআই সূত্রে বলা হচ্ছে, সুদীপকে চিঠি এবং ই-মেলে নোটিস পাঠানো হয়েছে। সেই সঙ্গে ফোন করেও বলা হয়েছে, তিনি যেন আজ, বুধবার বা কাল, বৃহস্পতিবারের মধ্যে সিবিআই দফতরে উপস্থিত হন।
সিবিআইয়ের সমন পাওয়ার পরেই দলনেত্রীকে বিষয়টি জানান সুদীপ। মমতার সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা করে তিনি সিবিআই-কে পরিষ্কার জানিয়ে দেন, একাধিক পূর্বনির্ধারিত দলীয় কর্মসূচির কারণে দু’-এক দিনের মধ্যে তাদের দফতরে যাওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। তা ছাড়া, শুক্রবার রেল সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির বৈঠকও রয়েছে দিল্লিতে। সুদীপের বক্তব্য, ‘‘মমতাদি তো আগেই বলেছিলেন, তিনি নোট বাতিলের বিরোধিতা করায় কেন্দ্র সিবিআই-ইডিকে তৃণমূলের পিছনে লাগিয়ে দেবে। ফলে, সিবিআই যা করছে, তা একেবারে অপ্রত্যাশিত নয়। তবে রাজনৈতিক ভাবে এর মোকাবিলা করতে তৃণমূল প্রস্তুত।’’
প্রশ্ন হল, সিবিআইয়ের সমন অগ্রাহ্য করে সুদীপ তাদের দফতরে না গেলে আইনগত ভাবে কী সমস্যায় পড়তে পারেন? সিবিআইয়ের এক কর্তা জানাচ্ছেন, উনি এ বারও হাজিরা না দিলে তাঁকে আরও এক বার সমন পাঠানো হবে। ওই সিবিআই কর্তার কথায়, ‘‘যাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠানো হচ্ছে, তদন্তকারীর যদি মনে হয় তিনি ইচ্ছাকৃত ভাবে এড়িয়ে যাচ্ছেন, সে ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪১ ধারায় নোটিস পাঠানো হয়। আইনত তখন তাঁকে অভিযুক্ত বলে ধরে নেওয়া হয়।’’
সুদীপের ক্ষেত্রে কী হবে, সেটা পরের কথা, রাজনীতির কারবারিদের প্রথম প্রশ্ন হলো, সারদা বা রোজভ্যালি-কাণ্ডে গত দেড় বছর ধরে তদন্ত কেন থমকে থাকল? আর কেনই বা এখন নতুন উদ্যম দেখা যাচ্ছে? এর জবাব অবশ্য সিবিআইয়ের পক্ষ থেকে কেউ দেননি।
তবে রাজনীতিকদের অনেকের মতে, সাম্প্রতিক কালে সংসদের ছবিতেই এর উত্তর নিহিত রয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তি, পণ্য পরিষেবা করের মতো একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিল পাশ করাতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষে কেন্দ্রকে সাহায্য করছিলেন মমতা। হতে পারে সেই কারণেই হাত গুটিয়ে রেখেছিল কেন্দ্র। কিন্তু এখন মমতা কেন্দ্রের বিরোধিতায় অন্যতম বড় ভূমিকা নেওয়ায় তদন্ত ফের গতি পাচ্ছে। ফলে মমতাও প্রতিহিংসার তত্ত্ব তুলে ধরতে পারছেন। যা শুনে বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান (সারদার মামলাকারীও) পাল্টা বলছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর কথাতেই বোঝা যাচ্ছে, ওঁদের সঙ্গে বিজেপির বোঝাপড়ার জন্যই তদন্ত এত দিন থমকে ছিল! এখন তিনি বেসুর গাইতেই আবার কেন্দ্র নড়াচ়ড়া করছে! যদিও আসল কারণ হল, সিবিআইয়ের কাছে তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে রিপোর্ট চেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy