মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
সুভাষ চন্দ্র বসুর জন্মদিনে নাম না করেই কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ ক্ষোভ উগরে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আন্দামানের দ্বীপের নামকরণ, রাজ্যে কেন্দ্রীয় দলের আসা, যোজনা কমিশনের কাজ না করা থেকে রাজনৈতিক সৌজন্য— মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে উঠে এল সবই।
সুভাষের জন্মদিন উপলক্ষে সোমবার রেড রোডে তাঁর মূর্তির পাদদেশে পুষ্পার্ঘ্য দেন মুখ্যমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে সাইরেনের সঙ্গে তাঁকে শাঁখ বাজাতেও দেখা যায়। দেশের ইতিহাসে সুভাষের অবদান নিয়ে আলোচনা করার পাশাপাশিই কেন্দ্রকে বিঁধে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘কেউ নাম কামানোর জন্য বলতেই পারে শহিদ দ্বীপ, স্বরাজ দ্বীপ আমরা করলাম। কিন্তু ঘটনা আদৌ তা নয়। সুভাষচন্দ্র যখন আন্দামানে সেলুলার জেল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন,সেই সময়ে তিনিই করে এসেছিলেন।’’ মুখ্যমন্ত্রীর সংযোজন, ‘‘দেশের কী হবে, তার পরিকল্পনা করতে যোজনা কমিশন তৈরি করেছিলেন নেতাজি। দুর্ভাগ্যের বিষয় যে, আজ শুধু আছে নন-প্ল্যানিং! যোজনা কমিশনটাই উঠে গিয়েছে।’’ সুভাষকে প্রকৃত নেতা দাবি করে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নেতাজিকে দেশনেতা, দেশপ্রেমিক বলেছিলেন। যাঁরা সঠিক অর্থে দেশের নেতা হন, তাঁদের কারও শংসাপত্র নিতে হয় না। তাঁদের নেতৃত্বের গুণ জন্ম থেকেই হৃদয়ে গাঁথা থাকে। তাই এই চিন্তাভাবনাগুলো কারা করতে পারে, আমাদের হৃদয়ে যেন এটা গাঁথা থাকে।’’
সাম্প্রতিক কালের নানা মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘খবরদারি’ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করছেন, এ দিনের অনুষ্ঠানেও তচার ব্যতিক্রম হয়নি। তিনি বলেন, ‘‘আমি কারও সমালোচনা করছি না। নৈতিকতার কথা বলছি। কথায় কথায় বাংলাকে অসম্মানিত করা। গত দু-তিন বছরে পঞ্চাশের বেশি বার এখানে কেন্দ্রীয় দল পাঠানো হয়েছে। ক’বার উত্তরপ্রদেশে গিয়েছে কেন্দ্রীয় দল। বৃদ্ধাকে বা ছাত্রীকে হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে গাড়ি নিয়ে চলে গিয়েছে। কেন্দ্রীয় দল গিয়েছে কি? আমাকে খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে, আমি শুনেছি উন্নাওয়ের ঘটনার অভিযুক্তদের প্যারোলে ছাড়া হয়েছে। নিজেদের বেলায় সব সাধু!’’ সংবিধান ও গণতন্ত্রের পরিবেশ লঙ্ঘন, সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নেও এ দিন কেন্দ্রের সমালোচনা করেছেন মমতা। বদলে যাওয়া পরিস্থিতির প্রেক্ষিতেই মুখ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন, এক সময়ে তাঁরা সংসদের কক্ষে একে অন্যের সমালোচনা করলেও বাইরে বেরিয়ে আবার একে অন্যকে পাউরুটি-টোস্টও খাওয়াতেন।
অনুষ্ঠানে মমতার সঙ্গে হাজির ছিলেন কলকাতার মেয়র তথা মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন, বাবুল সুপ্রিয়-সহ বিশিষ্টেরা। বসু পরিবারের তরফে উপস্থিত ছিলেন সুগত বসু এবং সুমন্ত্র বসুও। ওই অনুষ্ঠানেই চন্দ্র বসু বলেন, ‘‘আাজাদ হিন্দ বাহিনী তৈরির মাধ্যমে সুভাষ চন্দ্র বার্তা দিয়েছিলেন যে, আমরা হিন্দু, মুসলিম, শিখ, ইশাই নই, আমরা ভারতীয়। এখন আমরা দেখছি ভারতবর্ষে সাম্প্রদায়িকতা, বিচ্ছিন্নতাবাদ মাথা চাড়া দিচ্ছে। ভারতবর্ষকে অখণ্ড রাখতে হলে সুভাষের আদর্শকে নিয়ে চলতে হবে।’’ মুখ্যমন্ত্রীর লেখা ৮টি গানের অ্যালবামে সুর করেছেন অজয় চক্রবর্তী। অনুষ্ঠানে এ দিন সেই অ্যালবাম প্রকাশ করা হয় এবং অজয়, বাবুল, ইন্দ্রনীল সেন, স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্ত, মনোময় ভট্টাচার্য-সহ অ্যালবামের শিল্পীরা গানগুলি পরিবেশন করেন। উদ্বোধন করা হয় ৫০টি ‘সুফল বাংলা’র গাড়িও।
মহাজাতি সদন থেকে রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার পর্যন্ত এ দিন মিছিল হয়েছে কেন্দ্রীয় নেতাজি জয়ন্তী কমিটির উদ্যোগে। সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে সুভাষের মুর্তিতে শ্রদ্ধা জানান বামফ্রন্টের নেতৃত্ব। ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট হলে এ দিনই সুভাষের জন্মের ১২৫ বছর উদযাপনের সর্বভারতীয় কমিটির আয়োজিত সভায় অনলাইনে অংশগ্রহণ করেছিলেন সুভাষ-কন্যা অনিতা বসু পাফ। তাঁর বাবার জীবন থেকে প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সাহস সঞ্চয় করার কথা উঠে এসেছিল তাঁর বক্তব্যে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy