বাম এবং কংগ্রেসের সঙ্গে বিরোধী জোটে শামিল হবে না তৃণমূল, জানালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
বছর ঘুরলেই লোকসভা নির্বাচন। মেরেকেটে ১৫ মাস বাকি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিলেন, ২০২৪ সালে লোকসভা ভোটের লড়াইয়ে বাম, কংগ্রেসের বিরোধী জোটের অংশ হবে না তৃণমূল। বৃহস্পতিবার নবান্নে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘তৃণমূল আর মানুষের জোট হবে। আমরা ওদের (বাম এবং কংগ্রেস) কারও সঙ্গে যাব না। একা লড়ব মানুষের সমর্থন নিয়ে।’’
মোদী বাহিনীকে গদিচ্যুত করতে অতীতে বহু বার বিরোধী জোট গড়তে সক্রিয় ভূমিকা নিতে দেখা গিয়েছে মমতাকে। ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে বাংলায় তৃতীয় বার ক্ষমতাদখলের পর থেকে নতুন করে বিজেপি বিরোধী ঐক্যে শান দিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। দিল্লিতে গিয়ে বিজেপি বিরোধী নেতাদের সঙ্গে বৈঠকও করেছিলেন। কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধীর সঙ্গেও বৈঠক করেছিলেন মমতা। কিন্তু সেই উদ্যোগ সফল হয়নি। যত সময় এগিয়েছে, কংগ্রেস-তৃণমূলের মধ্যে দূরত্ব তত বেড়েছে। গোয়ায় বিধানসভা নির্বাচনের সময় প্রকাশ্যে এসে পড়েছে দু’পক্ষের লড়াই। সম্প্রতি মেঘালয়ে গিয়ে তৃণমূলের ‘ইতিহাস’ তুলে ধরে খোঁচা দিয়েছেন রাহুল গান্ধী। ফলে সংঘাতের সুর আরও চড়া হয়েছে। বিজেপিকে হারাতে কংগ্রেস ব্যর্থ। তৃণমূলই বিজেপির একমাত্র বিকল্প বলে প্রচার করছে জোড়াফুল শিবির। তার জেরেই বিজেপি বিরোধী জোট ঘিরে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। তবে মমতার বক্তব্যের পর আপাতত এ নিয়ে আর কোনও জল্পনার অবকাশ রইল না। কারণ, মমতার কথায় স্পষ্ট যে, তিনি বিরোধী জোটে শামিল হবেন না।
গত বছর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী শিবিরকে জোটবদ্ধ করার লক্ষ্যে দিল্লিতে বিজেপি বিরোধী নেতাদের আহ্বান জানিয়েছিলেন মমতা। তখন মমতার ডাকা বৈঠকে যোগদান নিয়ে বিরোধী শিবিরের একাংশ ‘দ্বিধাগ্রস্ত’ ছিলেন বলে আভাস পাওয়া গিয়েছিল বিরোধীদের ওই অংশের তরফে। তৃণমূলের তরফে বলা হয়েছিল, রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসাবে শরদ পওয়ারের ‘সম্মতি’ নিয়েই বৈঠকে তাঁর নাম প্রস্তাব করেছিলেন মমতা। কিন্তু পরে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন পওয়ার। ফলে ‘অস্বস্তিতে’ পড়ে তৃণমূল। এমনটাই দাবি ছিল বাংলার শাসকদলের।
এর পরে উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই নিয়েও অসন্তোষ তৈরি হয়েছিল। পওয়ারের ডাকা বৈঠকে যোগ দেননি মমতা। যার ফলে বিরোধী ঐক্যে তাল কাটে। কালক্রমে উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী জগদীপ ধনখড়ের বিরুদ্ধে ভোটদানে বিরত থাকে তৃণমূল। ফলে বিরোধী শিবিরে মমতার দলকে নিয়ে জল্পনা আরও বাড়তে থাকে। তার পর থেকেই বিজেপি বিরোধী জোট নিয়ে অনেকটা ‘নীরবতা’ রেখেছে বাংলার শাসকদল। বরং বিভিন্ন রাজ্যে নিজেদের সংগঠন বৃদ্ধিতে জোর দিয়েছে ঘাসফুল শিবির। এই আবহেই ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে বিরোধী জোট প্রশ্নে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে দিলেন তৃণমূল নেত্রী।
ত্রিপুরা, মেঘালয়, নাগাল্যান্ডের পাশাপাশি বৃহস্পতিবার ছিল মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘির উপনির্বাচনের ফলঘোষণা। পঞ্চায়েত ভোটের আগে অতীতের এই জেতা আসন হাতছাড়া হল তৃণমূলের। জয়ী হয়েছেন বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী। বাম-কংগ্রেসের এই জোট ‘অনৈতিক’ বলে বর্ণনা করেছেন মমতা। সেই সঙ্গে বাম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থীর জয়ের নেপথ্যে বিজেপির ‘হাত’ রয়েছে বলেও দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘সিপিএম-কংগ্রেস একসঙ্গে রয়েছে। বিজেপির ভোটও ওদের কাছে গিয়েছে।’’ এর পরই মমতা বলেন, ‘‘এমন অনৈতিক জোট হলে কংগ্রেস, সিপিএম কী করে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়বে? ওরা যদি বিজেপির সাহায্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারাতে চায়, তা হলে ওরা কী ভাবে নিজেদের বিজেপি বিরোধী বলতে পারে! খুবই দুর্ভাগ্যজনক। এটা আমাদের কাছে একটা শিক্ষা। কংগ্রেস এবং সিপিএমের কথা শোনা উচিত নয়।’’ এই রাজ্যে সিপিএম, কংগ্রেস এবং বিজেপির আঁতাঁত নিয়ে আগেও সরব হয়েছিলেন মমতা। বলেছিলেন, ‘‘জগাই, মাধাই, গদাই।’’
এই ‘অনৈতিক জোটে’র কারণেই আগামী লোকসভা নির্বাচনে তাঁদের একলা লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত বলে জানালেন তৃণমূল নেত্রী। তিনি এ-ও বলেন, ‘‘বিজেপিকে যারা হারাতে চায়, আশা করব তারা আমাদের ভোট দেবে। আর বাম, কংগ্রেসকে যারা ভোট দেবে, তারা বিজেপিকে ভোট দেবে, এটা বিশ্বাস করি। এই সত্য আজ উদ্ঘাটিত হয়ে গিয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy