এসএসকেএম হাসপাতালে বৃহস্পতিবার সকালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাজ্যের মন্ত্রী জাকির হোসেনকে খুন করতে বড় ধরনের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল বলে সরাসরি জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার এসএসকেএম হাসপাতালে শ্রম দফতরের প্রতিমন্ত্রী জাকিরকে দেখতে এসে মমতা বলেন, ‘‘পুরো ব্যাপারটা খুবই ভয়াবহ। কেউ ট্রেন ধরতে যাচ্ছে। সে কোন প্ল্যাটফর্মে যাবে, কখন ট্রেন ধরবে, তার সব খবর আগাম ছিল দুষ্কৃতীদের কাছে! যাঁরা জাকিরের সঙ্গে ছিলেন তাঁরা জানিয়েছেন, রিমোট কন্ট্রোলে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। জাকিরের সঙ্গে ওর ভাগ্নে ছিল। সে-ও আমায় একই কথা বলেছে (বস্তুত, পাশএ দাঁড়ানো জাকিরের ভাগ্নের থেকে তা আরও একবার যাচাই করিয়ে নেন মুখ্যমন্ত্রী)। সেটা সত্যি কি না আমি জানি না। বিষয়টা নিয়ে তদন্ত চলছে। স্থানীয় ছেলেমেয়েদের কথা শুনে আমার মনে হয়েছে, জাকিরের চলাফেরার খবর জেনেশুনেই এই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘এটা জাকিরকে হত্যা করার জন্য সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র।’’ ঘটনায় গুরুতর আহতদের এককালীন পাঁচ লক্ষ টাকা এবং তুলনায় কম আহতদের এককালীন এক লক্ষ টাকা সাহায্য দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
পাশাপাশিই মমতা বলেছেন, ওই ঘটনার দায় এবং দায়িত্ব রেলকে নিতে হবে। তাঁর কথায়, ‘‘ঘটনাটা ঘটেছে রেলের জায়গায়। অথচ রেল গোটা বিষয়টাকে খুব হাল্কা ভাবে দেখছে। ঘটনাটা যখন ঘটে, তখন স্টেশন চত্বরের ওই এলাকা পুরোপুরি অন্ধকার ছিল। কাছাকাছি কোনও রেলপুলিশও ছিল না। রেল এ ভাবে তাদের দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারে না।’’ প্রসঙ্গত, রেল ইতিমধ্যেই ওই ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করেছে। রেলের দাবি, তদন্তও শুরু হয়েছে। রাজ্য সরকার অবশ্য ইতিমধ্যেই রাজ্যে গোয়েন্দা দফতরের একটি দল নিমতিতার ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছে। তারা তদন্তও শুরু করে দিয়েছে। বৃহস্পতিবার জাকিরকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিম, তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ এবং ফুরফুর শরিফের পিরজাদা ত্বহা সিদ্দিকি। ববি হাসপাতাল চত্বরে বলেন, ‘‘পুলিশের কাছে দাবি জানাচ্ছি, যাতে দ্রুত অপরাধীদের চিহ্নিত করে, গ্রেফতার করে তাদের কঠোরতম শাস্তি দেওয়া হয়।’’ তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, এই ঘটনায় এই রাজ্যে মন্ত্রীরাও সুরক্ষিত নন বলে বিরোধী শিবির দাবি তুলছে। যার জবাবে ববি বলেন, ‘‘বিরোধীরা মন্ত্রীদের সুরক্ষিত থাকতে দিচ্ছে না! গুজরাতে ২,০০০ লোককে খুন করা হয়েছিল। একজন সাংসদকে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এটা রাজনৈতিক তরজার সময় নয়। কিন্তু এই প্রশ্ন এবং সন্দেহের জবাবে আমি এই কথাগুলো বলতে বাধ্য হচ্ছি! যে ভাবে কথা গুলো বলা হচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে, ‘এটা ঠাকুরঘরে কে, আমি তো কলা খাইনি’ গোছের ব্যাপার নয় তো!’’ কুণালও বলেন, ‘‘এটা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র।’’ আর ত্বহার কথায়, ‘‘উনি মানুষের জন্য কাজ করেন। কারও কাছে কিছু নেন না। বরং উল্টে মানুষকে দেন।’’
বৃহস্পতিবার মমতা যখন এসএসকেএমে যান, তখন জাকিরের অস্ত্রোপচার চলছে। মমতা বাইরে এসে বলেন, ‘‘আমি জাকিরকে দেখেছি। অস্ত্রোপচারের আগে ওঁর সঙ্গে আমার ফোনে কথা হয়েছে। ওঁর স্ত্রী-র সঙ্গেও কথা হয়েছে। গোটা ঘটনা সম্পর্কে আমি খোঁজখবর নিয়েছি। এখনও নিচ্ছি। ১২ জন এর মধ্যেই ভর্তি হয়েছে স্থানীয় হাসপাতালে। বাকি আরও ১৪ জন কলকাতায় আসছে। সব মিলিয়ে ২৭-২৭ জন আহত। এটা একটা ভয়াবহ ঘটনা। কয়েকজন আহতের অবস্থা তো চোখে দেখা যাচ্ছে না! আমিও দূর থেকে দেখেছি। হাত-পা উড়ে গিয়েছে। রাজ্য সরকার ওঁদের কৃত্রিম হাত-পা লাগানোর ব্যবস্থা করে দেবে। আমরা রাজ্য সরকার থেকে ওঁদের সমস্ত দায়িত্ব নিচ্ছি।’’ বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর আরও বক্তব্য, ‘‘এ ধরনের ঘটনা রেলের জায়গায় হওয়া সত্ত্বেও কেন্দ্র এ নিয়ে কোনও কথা বলেনি। ওরা এভাবে দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারে না।’’ মমতার কথায়, ‘‘জাকির একজন জনপ্রিয় নেতা। তাঁকে যদি এভাবে আক্রমণ করা হয়, যদি এর সঙ্গে কোনও রাজনৈতিক যোগও থাকে, তবে সেটা কোনও রাজনীতি নয়। সেটাকে রাজনীতি বলা যায় না। তৃণমূল নেতাদের বেছে বেছে টার্গেট করা হচ্ছে। এটা একটা বড় ষড়যন্ত্র।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy