আবার বিরোধী জোট গড়ার বার্তা দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে পর্যুদস্ত করতে আবার বিরোধী জোট গড়ার বার্তা দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার মুর্শিদাবাদের শমসেরগঞ্জের সভায় বিজেপিকে আক্রমণ করার সময়ই বিরোধী ঐক্য গড়ার বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘‘সব বিরোধী দল এক হয়ে যান। ওয়ান টু ওয়ান ফাইট হোক। চেষ্টা করব একসঙ্গে কাজ করার।’’ জাতীয় স্তরে সব বিজেপি বিরোধী দলের জোট চেয়ে অতীতেও সরব হতে দেখা গিয়েছিল মমতাকে। তবে তার পর গঙ্গা-যমুনা দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। যার জেরে বিরোধী ঐক্যের ছবি অধরাই থেকে গিয়েছে। বছর ঘুরলেই লোকসভা নির্বাচন। তার আগে বিজেপির বিজয়রথ ঠেকাতে দেশের সব বিজেপি বিরোধী দলকে এক সুতোয় বাঁধার আহ্বান জানালেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।
মোদী বাহিনীকে ক্ষমতাচ্যুত করতে অতীতে বহু বার বিরোধী জোট গড়তে সক্রিয় ভূমিকা নিতে দেখা গিয়েছে মমতাকে। ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে বাংলায় তৃতীয় বার ক্ষমতাদখলের পর থেকে নতুন করে বিজেপি বিরোধী ঐক্যে শান দিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। দিল্লিতে গিয়ে বিজেপি বিরোধী নেতাদের সঙ্গে বৈঠকও করেছিলেন। সেই সময় কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধীর সঙ্গেও বৈঠক করেছিলেন মমতা। তবে সেই উদ্যোগ সফল হয়নি। এর পর যত সময় এগিয়েছে, কংগ্রেস-তৃণমূলের মধ্যে দূরত্ব তত বৃদ্ধি পেয়েছে। গোয়ায় বিধানসভা নির্বাচনের সময় প্রকাশ্যে এসে পড়েছিল দু’পক্ষের লড়াই। কিছু দিন আগে মেঘালয়ে গিয়ে তৃণমূলের ‘ইতিহাস’ তুলে ধরে খোঁচা দিয়েছিলেন রাহুল গান্ধী। ফলে সংঘাতের সুর আরও চড়া হয়। বিজেপিকে হারাতে কংগ্রেস ব্যর্থ। তৃণমূলই বিজেপির একমাত্র বিকল্প বলে প্রচার করছে জোড়াফুল শিবির। তার জেরেই বিজেপি বিরোধী জোট ঘিরে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। এর পর গত ২ মার্চ মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘিতে উপনির্বাচনে বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থীর জয়ের পর ‘ক্ষুব্ধ’ মমতা জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, তৃণমূল আর মানুষের জোট হবে। একাই লড়বে তাঁর দল। ওই সময়ই কংগ্রেসকে ছাড়া তৃতীয় ফ্রন্ট গঠন নিয়ে তৎপরতা শুরু হয়েছিল জাতীয় রাজনীতির অলিন্দে।
তবে এই ছবিটা কিছু দিনের মধ্যেই বদলায়। মোদী পদবি নিয়ে মন্তব্যের জেরে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজ করা হয়। এই নিয়ে রাহুলের পাশে দাঁড়িয়ে সরব হন মমতা। রাহুলের নাম না করলেও টুইটারে সনিয়া-পুত্রের পাশে দাঁড়িয়েই মোদী সরকারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। শুধু মমতা নন, দেশের বিভিন্ন বিরোধী নেতাও রাহুলের পাশে দাঁড়ান। এই আবহে গত মার্চ মাসে ধর্মতলায় ধর্না মঞ্চ থেকে মমতার গলায় আবার বিরোধী জোটের কথা শোনা গিয়েছিল। বলেছিলেন, ‘‘সব বিরোধীকে বলব, এমন কোনও বিরোধী দল নেই, যাদের বিরুদ্ধে অত্যাচার হচ্ছে না। কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে! কে বাকি রয়েছে? সবাই বলতে পারে না, চুপচাপ থাকে। সব বিরোধীকে একসঙ্গে লড়তে হবে। বিজেপিকে কুর্সি থেকে হটাতে হবে।’’ শুক্রবারও সেই একই সুর শোনা গেল মমতা-কণ্ঠে। বললেন, ‘‘যে যেখানে শক্তিশালী, সে সেখানে লড়ুক।’’
কিছু দিন আগেই মমতার সঙ্গে নবান্নে গিয়ে দেখা করেছেন জেডিএস নেতা এইচডি কুমারস্বামী, সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার, উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব। ওড়িশায় গিয়ে মমতা দেখা করেছিলেন সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েকের সঙ্গে। যদিও সেই সাক্ষাৎপর্বে রাজনীতি নিয়ে কথা হয়নি বলে জানিয়েছিলেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার মালদহের ইংরেজবাজারে তৃণমূলের ‘নবজোয়ার’ কর্মসূচিতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মঞ্চে গিয়েছিলেন মমতা। সেখানেও আগামী লোকসভা নির্বাচনে ‘পরিবর্তনের’ ডাক দিয়েছিলেন তিনি। বলেছিলেন, ‘‘কর্নাটক থেকে পতন শুরু হলে আমরা খুশি হব। ডোন্ট ভোট ফর বিজেপি! যেখানে আমরা ভোটে দাঁড়াব, সেখানে অন্য কাউকে ভোট নয়। ভোট নষ্ট করবেন না।” এর আগে, রাজ্যে তৃতীয় বার সরকারে আসার দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সব বিজেপি-বিরোধী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কেন্দ্রে পরিবর্তন আনতে সব বিরোধীর ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কথা বারেবারেই শোনা যাচ্ছে তৃণমূলনেত্রীর মুখে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy