ফাইল চিত্র।
বাংলার উন্নয়নে কেন্দ্রের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে রাজ্য যে প্রস্তুত, সোমবার তা স্পষ্ট করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অশোকনগরে তেল ভান্ডারকে ঘিরে পূর্ণাঙ্গ শিল্প পরিকাঠামো গড়ার আবেদন করে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, এ কাজে যত জমি প্রয়োজন, রাজ্য সরকার তা বিনামূল্যে দিতে প্রস্তুত।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘ওএনজিসি ৪০ একর জমি চেয়েছিল রাজ্যের কাছে। আরও কিছু জমির চাহিদা ছিল ব্যারাকপুরে। বলেছি, প্রয়োজনীয় জমি বিনামূল্যে দিতে পারলে রাজ্য সরকার খুশি হবে। টাকার দরকার নেই। রাজ্যে শিল্প করো। যা জমি লাগবে, তা দেব। যত টাকা লাগে দেব। তেল পাওয়া গিয়েছে বলে বলছি।’’
অশোকনগরে তেলের সন্ধান পাওয়ায় রাজ্যের শিল্প-সম্ভাবনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হচ্ছে বলে নবান্নের কর্তারা জানান। কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানকে সম্প্রতি চিঠি দিয়ে প্রকল্পটি দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যেতে অনুরোধ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, অশোকনগরে তেলের হদিস মিলেছে, হলদিয়ায় পরিশোধনাগার আছে আইওসিএলের। অশোকনগরের সঙ্গে হলদিয়াকে যুক্ত করতে পারলে ভাল উন্নয়ন হবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বড়, মাঝারি, ক্ষুদ্র— সব শিল্পেরই সুবিধা। অনুসারী শিল্পের সঙ্গে তেলের পরিশোধনাগার তৈরে হবে। বিপুল কর্মসংস্থানও হবে। তেলের সন্ধান চালানোর সময় রাজ্য পুরোপুরি কেন্দ্রের সঙ্গে সহযোগিতা করছে। কেন্দ্র-রাজ্য একসঙ্গে কাজ করতে পেরে খুশি। রাজ্যের ভূমিকা এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাড়াতাড়ি প্রকল্প শুরু করতে আবেদন করেছি। তিনশো মানুষ আছেন ওই জায়গায়। তাঁদের পুনর্বাসন ও চাকরির ব্যাপারে কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলেছি। অশোকনগরে এটা শুরু। বাংলাকে ভবিষ্যৎ ‘এনার্জি ডেস্টিনেশন’ হিসেবে গণ্য করা হোক।’’
রাজ্য জানিয়েছে, বেঙ্গল বেসিনের জন্য ইতিমধ্যেই ৩৩৬১ কোটি টাকা খরচ করেছে ওএনজিসি। আরও ৪২৫ কোটি টাকা দু’বছরে খরচ করার কথা আছে। এর ফলে স্থানীয় মানুষ চাকরি এবং পুনর্বাসন পাবে। অনুসারী অনেক শিল্পও গড়ে উঠবে। হলদিয়া পেট্রোকেমে প্রতি বছর আট মিলিয়ন টন পরিশোধন করার ক্ষমতা রয়েছে। সরকারের দাবি, ডেউচা পাঁচামিতে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কোল বেল্ট পেয়ে গিয়েছে রাজ্য। ব্যারাকপুর, অশোকনগর, হলদিয়া যুক্ত হলে তা-ও বিশ্ব মানচিত্রে চলে আসবে। সেই দিক থেকে বিপুল কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা তৈরি হবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। ‘‘এ বার বাংলায় সবাই আসবে কাজ করতে। কাউকে কাজ করতে বাইরে যেতে হবে না,’’ বলেন মমতা।
কিছু দিন আগেই রাজ্যে এসে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ অভিযোগ করেছিলেন, বাংলা ক্রমশ শিল্পে পিছিয়ে পড়ছে। তথ্য দিয়ে সরকারের ভূমিকার সমালোচনাও করেন তিনি। সরাসরি কারও নাম না-করলেও এ দিন মমতা তেল এবং কয়লা প্রকল্পকে এক পঙ্ক্তিতে এনে সেই সমালোচনার জবাব দিয়েছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। রাজ্যের দাবি, আগে ছ’টি রাজ্য মিলে ডেউচা পাঁচামি প্রকল্প করার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গই সেই দায়িত্ব পায়। ঠিক হয়েছে, প্রকল্প এলাকায় যে-বসতি রয়েছে, সেখানকার মানুষের জীবন-জীবিকা নিশ্চিত করে প্রত্যেককে বুঝিয়ে তবে কাজে হাত দেবে রাজ্য। প্রকল্পের যে-সব এলাকায় বসবাস নেই, সেখানে দ্রুত কাজ শুরু হবে। মমতার কথায়, ‘‘বাংলাকে নিয়ে যাঁরা বলেন, এখানে শিল্প নেই, বাংলায় শুধু গল্প রয়েছে, আমি তাঁদের বলি, এটা গল্প নয়, এটাকেই বলে শিল্প। এই শিল্প তৈরি করতে সময় লাগে। কারণ, অনেক ভেবেচিন্তে কাজ করতে হয়। যে-দিন থেকে সন্ধান মিলেছে, সে-দিন থেকে ওএনজিসি-র সঙ্গে সমন্বয় করে সরাসরি সহযোগিতা করতে পেরে আমরা গর্বিত। বিজ্ঞানী-কর্মী-প্রশাসনকে অভিনন্দন। অনেকে প্রশ্ন তোলেন। ভেবে দেখেছেন কি, শিল্প সম্মেলনগুলির মাধ্যমে বাংলাকে আমরা কোথায় নিয়ে গিয়েছি?’’
মুখ্যমন্ত্রীর আরও দাবি, ডেউচা পাঁচামি প্রকল্প এক বার শুরু হয়ে গেলে একশো বছরের জন্য রাজ্যে বিদ্যুৎ-সমস্যা থাকবে না। সস্তা হয়ে যাবে বিদ্যুতের দাম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy