Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
State News

পাড়ার পুজোয় গেরুয়া হাওয়া রুখতে সক্রিয় মমতার ভাই, বাতিল সঙ্ঘশ্রীর খুঁটিপুজো

মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল চেয়ারপার্সন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাই কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায় যে পুজো কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন গত বছরও,  সেই সঙ্ঘশ্রী এ বার দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিল কার্তিককে ছাড়াই।

বিজেপির অভিযোগ, সায়ন্তন বসুকে সভাপতি করে কালীঘাটের ক্লাব ‘সঙ্ঘশ্রী’র পুজো কমিটি গঠন করা হয়েছে জেনেই আসরে নেমে পড়েন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাই কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

বিজেপির অভিযোগ, সায়ন্তন বসুকে সভাপতি করে কালীঘাটের ক্লাব ‘সঙ্ঘশ্রী’র পুজো কমিটি গঠন করা হয়েছে জেনেই আসরে নেমে পড়েন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাই কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৯ ১৯:৩৯
Share: Save:

দল পিছিয়ে পড়েছে দলনেত্রীর বাড়ির ওয়ার্ডে। লোকসভা নির্বাচনের সেই চমকে দেওয়া অস্বস্তি আরও বাড়ছিল পাড়ার পুজোটাও হাতছাড়া হওয়ার মধ্যে দিয়ে। বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসুকে সভাপতি করে পুজোর আয়োজন শুরু করেছিল কালীঘাটের ক্লাব ‘সঙ্ঘশ্রী’। কিন্তু সক্রিয় হল খোদ মুখ্যমন্ত্রীর পরিবার। শেষ মুহূর্তে বাতিল হল খুঁটি পুজো। মুখ্যমন্ত্রীর ভাই দাবি করলেন, পুজো কমিটিতে কোনও বিজেপি নেতা নেই। আর সায়ন্তন বললেন, ‘‘এত সহজে ওঁদের মুখোশটা খসে পড়বে বুঝিনি।’’

মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল চেয়ারপার্সন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাই কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায় যে পুজো কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন গত বছরও, সেই সঙ্ঘশ্রী এ বার দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিল কার্তিককে ছাড়াই। এটুকু বললে অবশ্য কিছুই বলা হয় না। পুজোর প্রস্তুতি শুরু করার জন্য বৈঠকে বসেছিলেন ক্লাবের যে কর্মকর্তা ও সদস্যরা, তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, এ বার সঙ্ঘশ্রীর পুজো কমিটির সভাপতি হবেন সায়ন্তন বসু। রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তনের সঙ্গে সঙ্ঘশ্রীর লোকজন দেখাও করেছিলেন তার পরে, সায়ন্তন মতও দিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাড়ার পুজো বিজেপি নেতার হাতে যাচ্ছে— এই খবর স্বাভাবিক ভাবেই তৃণমূলকে স্বস্তিতে থাকতে দেয়নি। ফলে সঙ্ঘশ্রীর পুজো কমিটির নিয়ন্ত্রণ হাতে নেওয়ার জন্য পাল্টা তৎপরতা শুরু হয়। সে তৎপরতার ফলাফল, আপাতত খুঁটিপুজো বাতিল।

আজ অর্থাৎ রবিবার সঙ্ঘশ্রীর খুঁটিপুজো হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই কর্মসূচি শেষ পর্যন্ত বাতিল হয়। ক্লাব সূত্রের খবর, আজ সকালে সায়ন্তন বসুকে ক্লাবের তরফে জানানো হয়, খুঁটিপুজো এ দিন করা যাচ্ছে না।

আরও পড়ুন: ‘মমতার তোষণ-নীতির জন্য সামাজিক সম্প্রীতি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে’, বিস্ফোরক কেশরীনাথ

বিজেপির অভিযোগ, সায়ন্তন বসুকে সভাপতি করে পুজো কমিটি গঠন করা হয়েছে জেনেই আসরে নেমে পড়ে মুখ্যমন্ত্রীর পরিবার।মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাই কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়ই মূলত আসরে নামেন বলে খবর। যাঁরা সায়ন্তন বসুকে সভাপতি করে পুজো কমিটি গঠনের লক্ষ্যে এগিয়েছিলেন, তাঁদের অস্বীকার করে পাল্টা কমিটি গঠনের তোড়জোড় শুরু হয় বলে বিজেপির দাবি। সঙ্ঘশ্রীর যে কর্মকর্তারা সায়ন্তনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে এগোচ্ছিলেন, শনিবার তাঁদের উপরে চাপ প্রবল ভাবে বেড়ে যায় বলে খবর। আর রবিবার সকালে সায়ন্তন বসুকে জানিয়ে দেওয়া হয় যে, এ দিন খুঁটি পুজো হচ্ছে না।

এর আগে পর্যন্ত সঙ্ঘশ্রীর বিষয়ে কিছু বলার জন্য মিডিয়ার সামনে কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখা যায়নি। কিন্তু রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসুকে সামনে রেখে খুঁটিপুজো হচ্ছে না, এটা নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পরে বিষয়টি নিয়ে মিডিয়ার মুখোমুখি হন কার্তিক। সঙ্ঘশ্রীর পুজোয় কোনও রকম রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বা প্রভাব খাটানোর প্রশ্নই নেই বলে সর্বাগ্রে দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রীর ভাই। এই ক্লাবের সঙ্গে তিনি ১৯৮০ সাল থেকে রয়েছেন এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও খুব ছোট থেকে সঙ্ঘশ্রীর পুজোর সঙ্গে যুক্ত— কার্তিক এ রকমই জানান।

আরও পড়ুন: টুইট-খোঁচা উস্কে দিল ‘কোথায় ছিলেন’ বিতর্ক

স্থানীয় সূত্রের খবর, ক্লাবের সভাপতি শিবশঙ্কর চট্টোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে পুজো কমিটির নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নেওয়ার তোড়জোড় শুরু করেছেন কার্তিক। ক্লাবের সভাপতি পদে থাকলেও, গত দু’বছর ধরে পুজো কমিটি যে তাঁকে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছিল না, সে কথা শিবশঙ্কর নিজেই জানিয়েছিলেন আগে। কিন্তু শনিবার সঙ্ঘশ্রীর পুজো নিয়ে আরও একটি বৈঠক হয়। সেই বৈঠকেই নতুন পুজো কমিটি গঠনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে রবিবার কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন।

কিন্তু আগের বৈঠকে যে স্থির হয়েছিল, সায়ন্তন বসুকে সভাপতি করে পুজো কমিটি গঠিত হবে? কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, এর আগে যে বৈঠক হয়েছিল, তাতে এলাকার লোকজন ছিলেন না। ওই বৈঠক কোনও বৈধ বৈঠক ছিল না বলেও তাঁর দাবি। তাঁর ইঙ্গিত, শনিবার যে বৈঠকটি হল, সেটিই ক্লাবের আসল কর্মকর্তাদের বৈঠক। সেই বৈঠকে সায়ন্তন বসুর নাম এক বারও উত্থাপিত হয়নি বলেও কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায় রবিবার দাবি করেন।

মুখ্যমন্ত্রীর ভাইয়ের এই সক্রিয়তা এবং তার পরে খুঁটিপুজো বাতিল হওয়া নিয়ে বিজেপির প্রতিক্রিয়া স্বাভাবিক কারণেই বিরূপ। সায়ন্তন বসুর কথায়, ‘‘তৃণমূল পুজো দখলের খেলায় মেতেছে। আমি তো যেচে সঙ্ঘশ্রীতে যাইনি। ক্লাব থেকে আমার কাছে অনুরোধ এসেছিল, আমি তাতে মত দিয়েছিলাম।’’

আরও পড়ুন: হাসি কেন মুছল, জঙ্গলমহলে নজর প্রশান্তের

কিন্তু যে ক্লাবের পুজোর প্রধান উপদেষ্টা এত দিন ছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর ভাই, সেই ক্লাব এ বার কেন বিজেপি নেতাকে সভাপতি করতে চাইল? সায়ন্তন বলেন, ‘‘ক্লাবটির নির্দিষ্ট কিছু দাবি এবং অনুরোধ ছিল। পুলিশ-প্রশাসনকে দিয়ে সঙ্ঘশ্রীর পুজোটাকে প্রতি বার মার খাওয়ানো হত। ভিড়টাকে মণ্ডপের দিকে যেতে দিত না পুলিশ, ঘুরিয়ে দিত কাছাকাছি দুই মন্ত্রীর পুজোর দিকে। তাই সঙ্ঘশ্রীর কর্মকর্তারা চেয়েছিলেন, আমরা যেন সে বিষয়ে ওঁদের একটু সাহায্য করি। আর ওঁরা চেয়েছিলেন, জাতীয় স্তরের কোনও নেতা এ বার ওঁদের পুজো উদ্বোধন করুন। আমরা বলেছিলাম, সে চেষ্টাও করব। কিন্তু তাতে তৃণমূল এবং মুখ্যমন্ত্রীর পরিবার এত বিচলিত হয়ে পড়বে বুঝিনি।’’

সায়ন্তন যা-ই বলুন, তৃণমূলের বিচলিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ ছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাড়ার পুজোর উদ্বোধন হচ্ছে অমিত শাহের হাতে— এই দৃশ্য মেনে নেওয়া এ রাজ্যের শাসক দলের পক্ষে খুব কঠিন হত বলেই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মত। সেই কারণেই এত তৎপরতা বলে অনেকে মনে করছেন।

তবে সায়ন্তন বলছেন, ‘‘সঙ্ঘশ্রীর পুজো কমিটিতে কারা থাকলেন, কারা থাকলেন না, তা দেখা আমাদের কাজ নয়। ওঁরা সাহায্য চেয়েছিলেন। করব বলেছিলাম। এর পরেও যদি সাহায্য চান, আমরা করব।’’

রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদকের কথায়, ‘‘কলকাতার আরও ১০-১২টা পুজোর সঙ্গে তো আমি থাকছি। আমাদের দলের কার্যকর্তারা তো কলকাতার প্রায় ৫০টা পুজোর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। ক’টা জায়গায় খুঁটিপুজো বাতিল করতে পারে দেখি।’’

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy