ছবি: পিটিআই।
কর্মসূচি দীর্ঘদিনের। তা সত্ত্বেও অনেকে যে তফসিলি জাতি ও জনজাতি শংসাপত্র পাচ্ছেন না, ‘দুয়ারে সরকার’ প্রকল্পে সেটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। ওই শংসাপত্র বিলিতে টালবাহানা নিয়ে সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তীব্র ভর্ৎসনার মুখে পড়েন বীরভূমের জেলাশাসক বিজয় ভারতী। মুখ্যমন্ত্রী বোলপুরে প্রশাসনিক বৈঠকে জেলাশাসককে প্রশ্ন করেন, জাতি শংসাপত্রগুলি দ্রুত বিলি করা হচ্ছে না কেন?
শুধু ওই জেলাশাসককে তিরস্কার করেই এ দিন ক্ষান্ত হননি মুখ্যমন্ত্রী, প্রশাসনিক কাজে আমলাতন্ত্রের ভূমিকা কতটা ‘নেতিবাচক’, তা বোঝাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আপনাদের কাজ হল ‘এ-বি-সি-ডি’! ‘এ’-তে অ্যাভয়েড, ‘বি’-তে ব্লক, ‘সি’-তে ক্যাজ়ুয়াল আর ‘ডি’-তে ডেডলক। ‘এগিয়ে বাংলা’ করতে হলে কিন্তু এগিয়ে গিয়ে কাজ করতে হবে।”
এ দিন বৈঠকের মাঝখানে জেলার কাজের তথ্য দিতে গিয়ে মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, জেলায় জাতি শংসাপত্র পেতে ২৮ হাজার আবেদন জমা পড়েছে। কিন্তু দেওয়া গিয়েছে মাত্র চার হাজারের কিছু বেশি। কেন শংসাপত্র দিতে বিলম্ব, প্রশ্ন তোলেন মুখ্যসচিব।
দুয়ারে সরকার শিবিরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রণাম। সোমবার বোলপুরের এই শিবির থেকে মোড়া কেনেন মমতা। —নিজস্ব চিত্র।
তার পরেই ক্ষিপ্ত হয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানতে চান, শংসাপত্র বিলির জন্য বার বার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। তার পরেও ঢিলেমি কেন? নথিপত্র যাচাই করতে গিয়ে কেন এত সময় নষ্ট করা হচ্ছে? ‘‘কোনও পরিবারের এক জন জাতি শংসাপত্র পেয়ে থাকলেই অন্য কিছু না-দেখে সংশ্লিষ্ট পরিবারের অন্যদের তা দিয়ে দেওয়া হোক। এর পরেও হয়রানির কোনও মানে হয় না,’’ বলেন ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী।
জেলাশাসক ভারতী জানান, আবেদন যাচাইয়ের জন্য ৫৪১টি দল গড়া হয়েছে। নথি যাচাই করা হয়েছে প্রত্যেকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে। সেই পর্ব সম্পূর্ণ হলেই শংসাপত্র দেওয়া হবে। জেলাশাসকের ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হতে পারেননি মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, আরও সক্রিয় হয়ে কাজ করতে হবে। পরিবারের এক জনের জাতি শংসাপত্র থাকলেই অন্যদের হয়ে যাবে। এখানে অন্য কোনও প্রশ্ন হবে না। ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, প্রশ্নের সবিস্তার প্রক্রিয়া হবে না। বাড়ির এক জনের থাকলেই হবে,’’ ব্যাখ্যা দেন মুখ্যসচিব।
মুখ্যমন্ত্রী এর পরে অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ উন্নয়ন দফতরের সচিব এ সুব্বাইয়ার উদ্দেশে বলেন, ‘‘সুব্বাইয়া, তোমাকে একটা কথা বলি। হয়তো তুমি জানো না, নীচের তলার অনেকে এটাই করে, তাদের দোষ নেই। তারা ভাববে, আমার কাছে হয়তো অফিসিয়াল কোনও নির্দেশ নেই। কিন্তু অফিসিয়াল নির্দেশটা তো তোমাদের প্রত্যেকটা বৈঠকে বলা হচ্ছে। এটা নিয়ে তো অনেক বার ভিডিয়ো কনফারেন্সও করা হয়েছে যে, পরিবারের এক জনের থাকলে হবে সেখানে নো কোয়্যারি।’’
মুখ্যমন্ত্রী ফের ভর্ৎসনার সুরে বলেন, ‘‘তোমার দফতর ঠিক করতে পারছে না। আমরা কিন্তু নির্দেশ দিয়েছি। তা সত্ত্বেও লোকজনকে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কেন ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে? হোয়াই? সরকার বার বার বলছে, জন্মসূত্রে পরিবারের এক জনের জাতি শংসাপত্র থাকলেই হবে। তা হলে তোমার অফিসারেরা ফিরিয়ে দিচ্ছে কেন? প্লিজ় গিভ দেম দ্য ইনস্ট্রাকশন। কবে আর ক্লিয়ার করবে! দশ-পনেরো দিন তো সময় নষ্ট করে ফেললে। এগুলো সিরিয়াসলি দেখো। এগুলো এ-রকম ভাবে হবে না।’’
মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, বিডিও-রা কী করছেন? আপনারা কি ফিরিয়ে দিচ্ছেন? আপনাদের কাছে কী নির্দেশ আছে? ডিএম, কী নির্দেশ আছে? জেলাশাসক ব্যাখ্যা শুরু করার সঙ্গে সঙ্গেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আরে, পোর্টাল পোর্টাল করছে! পোর্টালে তুমি পরে তোলো, আগে তো দাও। আমি কিন্তু ডিএম-দের ধরব এ বার।’’ তিনি জানান, এখানে লোকসংখ্যা বেশি। দরকার হলে পাড়ায় পাড়ায় শিবির করো হোক। পাড়ায় যেতে হবে। দেখতে হবে, কী অসুবিধে আছে।
রীতিমতো ক্ষোভের সুরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বার বার একটা নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। তা সত্ত্বেও নির্দেশটাকে নিজেরা নিজেদের মতো করে নিচ্ছে! এই যে আমি বার বার বলি, ‘এ’ মানে অ্যাভয়েড করা। ফিরিয়ে দেয় কারা?’’
মুখ্যমন্ত্রী এতটাই ক্ষুব্ধ হন যে, এক সময় তিনি বলেন, “সুব্বাইয়া, তোমার সম্বন্ধে আমার ধারণা পাল্টে গেল আজ। দিস ইজ় ভেরি আনফরচুনেট। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। যারা ‘দুয়ারে সরকারে’ কর্মসূচিতে স্থানীয় স্তরে কাজ করছে, তারা ঠিকমতো নির্দেশ না-পেলে আমি তো তাদের দোষারোপ করতে পারব না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy