(বাঁ দিক থেকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, হুমায়ুন কবীর এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
দলে ইদানীং তাঁর পরিচয় ‘বিদ্রোহী’ হিসাবেই। তিনি হুমায়ুন কবীর। মুর্শিদাবাদের ভরতপুরের এই তৃণমূল বিধায়ক মাসখানেক আগেই তাঁর ‘স্বভাব দোষে’ শো-কজ়ের চিঠি পেয়েছেন দলের কাছ থেকে। শুক্রবার খেলেন জোড়া ধমক। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সর্বসমক্ষে কিছুটা ভর্ৎসনার সুরেই তাঁকে বললেন ‘‘তুমি প্রেসের (সংবাদমাধ্যম) সামনে দলের ব্যাপারে একটু কম কথা বল।’’ দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও সতর্ক করেন তাঁকে। যদিও দেখা গেল, তা থেকে ‘শিক্ষা’ নেননি হুমায়ুন। ধমক খেয়ে মমতার সামনে ‘শপথ’ করে হুমায়ুন জানিয়েছিলেন, তিনি সংবাদমাধ্যমের সামনে আর মুখ খুলবেন না। কিন্তু তার অনতিবিলম্বেই ভরতপুরের বিধায়ককে দেখা গেল বাইরে বেরিয়ে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে।
মুর্শিদাবাদ জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে শুক্রবার তৃণমূলনেত্রী মমতা বৈঠকে বসেছিলেন তাঁর কালীঘাটের বাড়িতে। ওই বৈঠকে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন মুর্শিদাবাদের নেতানেত্রীরা। ছিলেন জেলার বিধায়ক হুমায়ুনও। সেই বৈঠকেই সর্বসমক্ষে মমতা এবং অভিষেকের কাছে তিরস্কৃত হন তিনি। বৈঠকে হাজির থাকাদের সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার বৈঠক চলাকালীন হুমায়ুনের আচরণ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অভিষেক। জেলার সংবাদমাধ্যমের সামনে তৃণমূল প্রসঙ্গে বিধায়কের কথা বলা নিয়ে তাঁকে সতর্ক করেন অভিষেক। পাল্টা হুমায়ুন যুক্তি দেন, তিনি নিজে থেকে কথা বলেন না। সংবাদমাধ্যমই তাঁর কাছে নানা বিষয়ে জানতে চায়। জবাবে অভিষেক আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলেন হুমায়ুনকে, সেই সময়েই মমতা ধমক দেন হুমায়ুনকে। দলনেত্রী বলেন, ‘‘তুমি বড্ড বেশি কথা বলছ।’’
বৈঠকে হাজির থাকা একটি সূত্রের দাবি, হুমায়ুনকে সংবাদমাধ্যমের সামনে কথা বলা নিয়ে এর পরেই ভর্ৎসনা করেন মমতা। তৃণমূলনেত্রী বলেন, ‘‘একটু কম কথা বলো। মিডিয়াকে সব বলা বন্ধ করো।’’ এমনকি, বৈঠকে বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরীকে নিয়ে হুমায়ুন কিছু বলতে গেলে, তাঁকে চুপ করিয়েও দেন মমতা। পরে অভিষেক নাম না করে বলেন, ‘‘জেলায় ভাল ফল হচ্ছে। পঞ্চায়েতেও সিংহ ভাগ আমরা জিতেছি। কিন্তু কিছু কিছু নেতা যদি ভাবেন জিতে মৌরসিপাট্টা জমাবেন, তা হলে ভুল হবে।’’
প্রসঙ্গত, পঞ্চায়েত ভোটের সময় থেকেই দলবিরোধী কথাবার্তা বলতে শুরু করেছিলেন হুমায়ুন। নিজের অনুগামীদের প্রার্থী করতে না-পারা নিয়ে দলের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ক্ষোভ দেখিয়েছিলেন তিনি। শুধু তা-ই নয়, মুর্শিদাবাদের তৎকালীন জেলা তৃণমূল সভাপতি শাওনি সিংহ রায়ের অফিস ঘেরাওয়ের ডাক দিয়েছিলেন বিধায়ক। পরে বিধানসভার অধিবেশন চলাকালীনও প্রশ্নোত্তর পর্বে দলের নীতি -বিরোধী কথা বলতে শোনা যায় তাঁকে। যার ফল হাতেনাতে আসে। হুমায়ুনকে দলের তরফে শো-কজ়ের চিঠি ধরানো হয়। হুমায়ুনও কিছুটা ‘শুধরে’ যান। দল যা বলবে তা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলবেন বলে কথা দেন দলের দুই শীর্ষ নেতা— রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী এবং পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে। যেমন শুক্রবারও হুমায়ুন মুখ্যমন্ত্রীর সামনেই শপথ করে বলেন, ‘‘দলের কথা বাইরে বলব না।’’
কিন্তু হুমায়ুনের সব শুধরে যাওয়াই ‘সাময়িক’ বলেই দলের একাংশের দাবি। তৃণমূল সূত্রে খবর, সম্প্রতি জেলা থেকে হুমায়ুনের বিরুদ্ধে দলবিরোধী কথাবার্তা বলার রিপোর্ট আসতে শুরু করেছিল শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে। সে ব্যাপারেই বৈঠকে তাঁকে হুমায়ুনকে সতর্ক করেছিলেন নেত্রী। কিন্তু বৈঠকের পরেই মমতার বাড়ি থেকে বেরিয়ে তাঁকে দেখা যায় সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে। আমরা যদি লোকসভা ভোটে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করি তবে মুর্শিদাবাদের তিনটি আসনই জিততে পারবে তৃণমূল।’’ দলবিরোধী কোনও কথা অবশ্য বলেননি তিনি। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী কয়েক মিনিট আগেই তাঁকে বলেছিলেন ‘সব বলা বন্ধ’ করতে। হুমায়ুন কয়েক মিনিটের মধ্যেই সব ভুলে গিয়ে ‘সব’ বলেও ফেললেন!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy