ভাঙড়ে নথি পোড়ানোর নেপথ্যে কার পরিকল্পনা কাজ করছে, প্রশ্ন তুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
কার নথি, কিসের নথি, কেন পোড়ানো হচ্ছিল, পোড়াচ্ছিলই বা কে— সদুত্তর মেলেনি। এই নিয়ে তুমুল শোরগোল, বিতর্কের মধ্যেই ভাঙড়ে নথি পোড়ানোর নেপথ্যে কার পরিকল্পনা কাজ করছে, প্রশ্ন তুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার তিনি তর্জনী তুলেছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের দিকে। তাঁর নিশানা থেকে বাদ যাচ্ছে না বিজেপি, সিপিএম, আইএসএফ-ও।
মঙ্গলবার ভাঙড়ে চর্মনগরী থানার আন্দুলগড়ি এলাকার একটি জমিতে কাগজপত্র পোড়ানোকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায়। রটে যায়, নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত নথি পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। ঘটনাস্থলে যায় সিবিআই। মুখ্যমন্ত্রী এ দিন নবান্নে বলেন, ‘‘এমন কিছু শুনিনি। বিজেপি, সিপিএম বা আইএসএফের নতুন খেলা হতে পারে। এই নথিগুলো সিপিএমের সময়েরও হতে পারে। সিবিআইয়েরও পরিকল্পনা হয়ে থাকতে পারে এটা। ওরা তো এমনই করে।’’
সিবিআই ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা অর্ধদগ্ধ কিছু নথি পরীক্ষার জন্য ফরেন্সিকে পাঠিয়েছে। সিবিআই সূত্রের খবর, উদ্ধার করা নথি বিহার সরকারের কৃষি ও মৎস্য দফতরের অডিট সংক্রান্ত। তবে কলকাতা ও বিভিন্ন জেলার কিছু সংস্থার সঙ্গে বিহারের নানা সংস্থার আর্থিক লেনদেনের নথিও সেখানে রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যাঙ্কের ফাঁকা চেক-সহ অন্য কিছু নথিও পাওয়া গিয়েছে।
নিয়োগ দুর্নীতিতে শাসক দলের নেতাদের যোগসাজশ, গ্রেফতারি, কোটি কোটি টাকা লেনদেনের প্রসঙ্গ এ ক্ষেত্রে সরাসরি ওঠেনি। মমতার অভিযোগ, ‘‘এক টাকা পাওয়া না-গেলেও বলে দেয়, ৫০০ কোটি টাকা পাওয়া গিয়েছে। প্রমাণ আছে? নিজের চোখে কেউ দেখেছেন? অমিত শাহের কাছে কত আছে? বিজেপি নেতাদের কাছে কত আছে, দেখেছে? শিল্প মহল, সাধারণ মানুষ, বিচারপতিদের বিরক্ত করা ওদের কাজ।’’
গরু, কয়লা পাচারের তদন্ত নিয়েও সক্রিয় রয়েছে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সংস্থা। মমতা এ দিন বলেন, ‘‘সিবিআই কেন অমিত শাহের থেকে তথ্য নিচ্ছে না? তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কী ভাবে গরু পাচার হয়, এটা তাঁর দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। রাজ্যের কয়লামন্ত্রী কোথায়? উত্তরপ্রদেশ থেকে গরু পাঠাবে, আর বলবে, তৃণমূল কংগ্রেস চোর! এটা একটা পরিকল্পনা।’’
ভাঙড়ের নথি পোড়ানোর ঘটনায় সিবিআই স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা তাড়দহ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান রাকেশ রায়চৌধুরীকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তাড়দহ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান রাকেশ বলেন, ‘‘যে-জমিতে কাগজপত্র পোড়ানো হয়েছে, সেই জমির মালিককে ডাকবে পঞ্চায়েত। প্রয়োজনে তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
এই তীব্র গরমে বস্তা বস্তা কাগজ পোড়ানোর ঘটনায় সরব পরিবেশকর্মী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই পরিস্থিতির মধ্যেও কিছু মানুষের জন্য পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে, দূষণ বাড়ছে। অবিলম্বে প্রশাসনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’’
মমতা সিবিআইয়ের দিকে আঙুল তোলায় বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘বিপদে পড়ে সিবিআই এবং কেন্দ্রীয় সংস্থাকে নানা দোষ দিচ্ছেন উনি। সিবিআই টাকা পেয়েছে, না, কী পেয়েছে, তার প্রমাণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেবে না। আদালতে দেবে। লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে যে বড় বড় উকিল ধরে আনছেন, তাঁরাই উত্তর দেবেন।’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘পুলিশ তো শোচনীয় ভাবে ব্যর্থ! লেদার কমপ্লেক্সের পিছনে ওই এলাকায় গাড়ি করে নথি এনে পোড়ানো হচ্ছে, অথচ পুলিশ নাকি কিছু জানতেই পারেনি! পুলিশ রাজ্যের সর্বত্রই শাসক দলের অপরাধ আড়াল করছে বলে সিবিআই এত সক্রিয় হতে পারছে। আদালতও তাদের তদন্তের ভার দিচ্ছে।’’ সিপিএম নথি পুড়িয়েছে বলে মমতা যে-অভিযোগ করেছেন, সেই প্রসঙ্গে সুজনের কটাক্ষ, “কাগজপত্র তো ওঁর সরকারের কাছে থাকার কথা!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy