মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
তোলাবাজির টাকা ফেরত দিতে দলের নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সরকারি প্রকল্পের সুবিধা বণ্টন বা অন্য নানা অছিলায় শাসক দলের নেতা-কর্মীদের একাংশ যে মানুষের থেকে ‘তোলা’ তুলছেন, সেই অভিযোগ নানা সময়ে মমতা নিজেই প্রকাশ্যে এনেছেন। লোকসভা ভোটের পরে ফলাফল পর্যালোচনা করতে গিয়ে এই অভিযোগ আরও বেশি করে ভাবাচ্ছে তৃণমূল নেত্রীকে। এ সব দুর্নীতি বরদাস্ত করবেন না বলে হুঁশিয়ারিও দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘চোরেদের আমি দলে রাখব না।’’
মঙ্গলবার নজরুল মঞ্চে দলের কাউন্সিলরদের সঙ্গে এক সভায় নির্দিষ্ট কয়েকটি অভিযোগ তুলে মমতা বলেন, ‘‘গরিবদের জন্য বাংলার বাড়ি প্রকল্পে টাকা থেকেও ২৫% কমিশন দলের লোকেরা নিচ্ছে, আমি সব খবর রাখি। সমব্যথী প্রকল্পে দু’হাজার টাকার মধ্যেও ২০০ টাকা কেন নেওয়া হচ্ছে? দল এ সব বরদাস্ত করবে না। যাঁরা টাকা নিয়েছেন, ফেরত দিয়ে দিন।’’
মানুষের জন্য বরাদ্দ প্রকল্প থেকে তোলা নেওয়া দলের এক শ্রেণীর লোকের ‘অভ্যাস’ হয়ে গিয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন মমতা। তাঁর সতর্কবার্তা সত্ত্বেও তোলাবাজি যে দলে চলছেই, তাও কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন মমতা। আর যাতে কেউ তোলা না নেন, তার জন্য সতর্কও করেছেন। সরকারি প্রকল্পের এক টাকাও যে নেতা-কর্মীদের নেওয়ার অধিকার নেই, সেই নীতিবাক্য স্মরণ করিয়ে দিতে হয় তৃণমূল নেত্রীকে।
আরও পড়ুন: তৃণমূল ছাড়লে আর ফেরাব না, বার্তা দিলেন মমতা
কাউন্সিলরদের বেশিরভাগই এখন এলাকার কাজ না করে শুধুমাত্র প্রোমোটিং-এ ব্যস্ত বলেও অভিযোগ করেছেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘নিজের এলাকায় কাজ না করে এখন অনেকেই বাড়ি আর প্রোমোটিং-এর সঙ্গে শুধু সম্পর্ক রাখছেন, জানি। সরকার এই চুরি ধরলেই অন্য দলে পালিয়ে যাচ্ছেন। অন্য দলে গিয়েও লাভ নেই। সরকারের পাই-পয়সার হিসেব আছে। পালালে তো আরও ফাঁসবেন।’’ সাধারণ মানুষের টাকা নেওয়ার পাশাপাশি সরকারি সম্পত্তি তৃণমূল কর্মীদের অনেকে ‘জবরদখল’ করে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেছেন মমতা। কর্মীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘অনেকে সরকারি সম্পত্তিকে নিজের পরিবারের নামে করে নিয়েছেন। জনগণের সম্পত্তি দখল করার অধিকার কারও নেই। কারা সরকারকে ফাঁকি দিয়ে নিজের পরিবারের নামে করে নিয়েছে, তা-ও জানি। প্রত্যেকটা ঘটনার তদন্ত হবে।’’
তোলাবাজির টাকা ফেরত দেওয়ার এই নির্দেশকে অবশ্য ‘নাটক’ বলে কটাক্ষ করেছেন বিরোধীরা। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের মন্তব্য, ‘‘দলের লোকেরা যে তোলা তোলে, তা এতদিনে বুঝলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? কিন্তু মুখে তো বলছেন, টাকা ফেরত দিতে। কী ভাবে, কাকে টাকা ফেরত দেওয়া হবে, তা কি উনি বলে দিয়েছেন? না কি ফাঁকা বুলি দিলেন?’’ বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘টাকা ফেরতের এই নির্দেশের সত্যিই সারবত্তা থাকলে তিন মাসের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় জানান, তাঁর দলের কে কাকে তোলাবাজির কত টাকা ফেরত দেবেন। যদি সাহস থাকে, শ্বেতপত্র প্রকাশ করুন। এই চ্যালেঞ্জ যদি মুখ্যমন্ত্রী রাখতে না পারেন, তা হলে বুঝতে হবে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে এ সব নির্দেশ উনি দিচ্ছেন।’’
কংগ্রেসের আব্দুল মান্নানের প্রশ্ন, ‘‘কোথা থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে, তার কোনও তালিকা আছে নাকি? তা হলে কাদের টাকা ফেরত দেবেন? উনি যা বলছেন, তার সঙ্গে বাস্তবের কোনও তো মিল নেই। ওঁর দলের কাউন্সিলর, বিধায়ক, মন্ত্রী, সাংসদদের কী ছিল, আর বিপুল সম্পত্তি হয়েছে, তা কি এতদিন চোখে পড়েনি?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy