নবান্নে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র
বিজেপির ঔদ্ধত্যের জন্যই মানুষ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে বলে মন্তব্য করলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কালিয়াগঞ্জ, খড়্গপুর, করিমপুর— তিনটির মধ্যে তিনটিতেই পদ্মকে পিছনে ফেলে ঘাসফুলের জয়ের নেপথ্যে বিজেপির ঔদ্ধত্যের পাশাপাশি এনআরসি অন্যতম বড় কারণ বলে মনে করেন মমতা।
নদিয়ার করিমপুর নিজেদের দখলে রেখেই প্রথম বারের জন্য উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জ এবং খড়্গপুরে সবুজ ঝড়ের পরেই মমতা বলেন, ‘‘বিজেপির ঔদ্ধত্য আর অহঙ্কার মানুষ ভালভাবে নেয়নি। রাজনীতির সঙ্গে একে মারব, ওকে মারব, ওকে পেটাব বললে মানুষ তাদের পছন্দ করে না। তাই মানুষ বলছে, তিনে তিন, মানে মানে বিজেপি বিদায় নিন।’’ লোকসভায় এ রাজ্যে ১৮টি আসন জিতে বিজেপির ঔদ্ধত্য মাত্রা ছাড়িয়েছিল বলে মমতার দাবি। তাঁর কথায়, ‘‘কয়েকটা আসন জিতে যা ইচ্ছে, তাই করছে। যাকে খুশি জেলে ঢুকিয়ে দিচ্ছে, জোর করে রাজ্য দখল করে নিচ্ছে! এত ঔদ্ধত্য ওদের।’’
এনআরসি-আতঙ্কে মানুষ যে তৃণমূলের দিকে ঘুরে এসেছে, তার ইঙ্গিত দিয়ে মমতা বলেন, ‘‘দেশের মানুষের ভোটেই জিতে আসেন প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে বিধায়ক, সাংসদরা। তা সত্ত্বেও দেশের স্বাধীনতার ৭০ বছর পরেও কেউ যদি এসে বলে নতুন করে নাগরিকত্ব নিতে হবে, তা হলে কী হবে? এত দিন ধরে নির্বাচিত সরকার তৈরি করেছে যে মানুষ, এনআরসি করে তাদের তাড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখালে এমনই হয়।’’ এনআরসি-কাঁটার সঙ্গে বিজেপি-ধসের পিছনে আরও অনেক কারণকে দায়ী করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। মমতার মতে, ‘‘দেশে বেকারত্ব বাড়ছে। সবাইকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছে। রেল, ব্যাঙ্ক, এয়ার ইন্ডিয়া, বিএসএনএল, অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরি, বেঙ্গল কেমিক্যাল সব গায়ের জোরে বন্ধ করে দিচ্ছে। ব্যাঙ্কে টাকা পাচ্ছে না মানুষ।’’
ধর্মের ভিত্তিতে বিজেপির দেশ, রাজ্য ভাগ করার চেষ্টাও গেরুয়া শিবিরের পরাজয়ের অন্যতম কারণ বলে বারবার বুঝিয়ে দিয়েছেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘বাংলা সকলকে নিয়ে চলে। আমরা সভ্যতার সঙ্কট মানি না। সভ্যতার মানবিকতা মানি। এই জয়ের মধ্য দিয়ে সংস্কৃতি, সভ্যতার বার্তা দেওয়া গিয়েছে।’’
এই জয়ের ধারা অব্যাহত রেখেই আগামী ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে এ রাজ্যে ঘাসফুলই যে ফুটবে, তাও বুঝিয়ে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। বিজেপিকে বিঁধে মমতার আগাম হুঁশিয়ারি, ‘‘ওদের এত অহঙ্কার যে বলছে ’২১-এ তৃণমূল হবে সাফ। ওরা নিজেরা আগে ১৯ এর ধাক্কা সামলাক। তিনটির তিনটিতেই সাফ হয়ে গিয়েছ। এখন তো সারা দেশে যা পরিস্থিতি তাতে মানুষ বলছে ১,২,৩ বিজেপি বিদায় নিন।’’
লোকসভায় তৃণমূলকে ভোট না দেওয়ার ‘ভুল’ এ বারের উপনির্বাচনে মানুষ নীরবে সংশোধন করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, ‘‘মানুষ বুঝেছে বিজেপি বিপজ্জনক দল। তাই লোকসভার বিভ্রান্তি কাটিয়ে এ বার বিজেপির থেকে মুখ ঘুরিয়েছে।’’
পদ্ম-দখলে থাকা কালিয়াগঞ্জ ও খড়্গপুরে ঘাসফুলের দিকে মানুষের মুখ ঘোরানোর গুরুদায়িত্ব ছিল রাজ্যের দুই মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী এবং রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরে। শুভেন্দু উত্তর দিনাজপুরে তৃণমূলের পর্যবেক্ষক এবং খড়্গপুরের ভোটের দায়িত্বে ছিলেন। আর রাজীব নদিয়ার পর্যবেক্ষক, সঙ্গে কালিয়াগঞ্জের ভোটের দায়িত্বে ছিলেন। এই দুই মন্ত্রীই বিজেপি গড় থেকে অধরা কালিয়াগঞ্জ ও খড়্গপুর ছিনিয়ে আনার পরে শুভেন্দু বোঝালেন, ‘‘আমি সংগঠক। মুর্শিদাবাদের পরে এ বারও দলকে তৃতীয় স্থান থেকে তুলে প্রথমে নিয়ে এলাম।’’ আর কালিয়াগঞ্জের মানুষের কাছে ভোটভিক্ষা চেয়েছিলেন রাজীব। জয়ের পরে মানুষের ‘ভরসা’ ফিরে পেয়ে রাজীব বলেন, ‘‘বাড়ি বাড়ি গিয়ে বুঝিয়েছি। ভুলভ্রান্তির জন্য ক্ষমাও চেয়েছিলাম। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর আস্থা রাখুন আগামী দেড় বছর। মানুষ সেই আস্থা রাখছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy