মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
তৃণমূল কংগ্রেসের পুর-প্রার্থী তালিকায় পরামর্শদাতার সুপারিশকে ছাপিয়ে গেল শীর্ষ নেতৃত্বের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। যাতে মুখ্য ভূমিকা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
প্রার্থী তালিকা প্রকাশের আগে তৃণমূলের শুক্রবারের বৈঠকটি ছিল যথেষ্ট দীর্ঘ। সচরাচর যা হয় না। সূত্রের খবর, সেখানে বিভিন্ন ওয়ার্ড ধরে ধরে প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে মমতা গুরুত্ব দেন দলের প্রবীণ নেতাদের বক্তব্য এবং অভিজ্ঞতার উপরে। প্রয়োজনে নিজে কোনও কোনও ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপও করেন। এক সময় পরামর্শদাতা সংস্থা ‘আইপ্যাক’-এর দুই প্রতিনিধি প্রশান্ত কিশোর এবং প্রতীক জৈন বলেও ফেলেন, প্রার্থী বাছাই নিয়ে তাঁদের সমীক্ষা কি তা হলে অর্থহীন হয়ে পড়ল! দলীয় সূত্রে খবর, শেষ পর্যন্ত দলের হাতে থাকা ১২৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৮০টিতে প্রার্থী বদলের প্রস্তাব দিয়েছিল পরামর্শদাতা সংস্থা আইপ্যাক। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে তার অর্ধেকই খারিজ করেছে তৃণমূল।
লোকসভা ভোটের পর থেকেই পুরভোটে তৃণমূলের সাংগঠনিক প্রস্তুতি শুরু করে দেয় আইপ্যাক। দীর্ঘ সময় সমীক্ষা চালিয়ে সংস্থাটি প্রার্থী তালিকা সম্পর্কে যে প্রস্তাব তৈরি করেছিল, কালীঘাটের বৈঠকে দলীয় নেতাদের সঙ্গে তা নিয়ে সবিস্তার আলোচনা করেন মমতা। বৈঠকে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও ছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সী, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম এবং অরূপ বিশ্বাস। আইপ্যাকের প্রস্তাবিত যে ওয়ার্ডটি নিয়ে নেতারা আপত্তি তোলেন, তা হল বিদায়ী ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষের। বৈঠক থেকেই যোগাযোগ করে অতীনের কাছে জানতে চাওয়া হয়, তিনি প্রার্থী হতে রাজি কি না। অতীন জানান, তিনি রাজি। মমতা তখন তাঁকেই প্রার্থী করার কথা বলেন। আর এক বিধায়ক দেবাশিস কুমারের ওয়ার্ডে তাঁর মেয়েকে প্রার্থী করার প্রস্তাব দিয়েছিল আইপ্যাক। দেবাশিস জানান, তাঁর মেয়ে পেশাগত কাজে দেশের বাইরে আছেন। ফলে ফিরে এসে মনোনয়ন জমা দেওয়ার ব্যাপারে সংশয় তৈরি হয়। স্থির হয়, দেবাশিসই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।বিদায়ী মেয়র ফিরহাদ হাকিমের (ববি) ওয়ার্ডে তাঁরই মেয়েকে প্রার্থী করতে চেয়েছিল আইপ্যাক। তা জেনে বৈঠকে উপস্থিত শীর্ষ নেতৃত্ব জানতে চান, ববির মত কী। তিনি কি এ বারের ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান না? জানা যায়, ববিও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান। এবং তখনই বহুচর্চিত ববির নির্বাচনী ভাগ্যে সিলমোহর দিয়ে দেন তৃণমূল নেত্রীই। দলীয় সূত্রে খবর, আইপ্যাকের প্রতিটি প্রস্তাবকে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনায় আনলেও বৈঠকে উপস্থিত দলীয় নেতাদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট করে মত চান মমতা। তার পরে নিজের সিদ্ধান্ত জানান।
প্রার্থী নিয়ে ওয়ার্ড ভিত্তিক আলোচনায় একাধিক বার আইপ্যাকের দুই প্রতিনিধির সঙ্গে সরাসরি মতের অমিল হয় পার্থেরও। নিজেদের পরামর্শের পক্ষে সমীক্ষা ও সংগৃহীত অন্য তথ্য বিশ্লেষণ করেন তাঁরা। তবে এক সময় তাঁদের থামিয়ে দেন পার্থ এবং বক্সী। আইপ্যাক-এর প্রতিনিধিদের আশ্বস্ত করার ভঙ্গিতে বক্সী বলেন, ‘‘আমরাও বাংলাকে চিনি। এখানকার মানুষকে চিনি। দেখুন না।’’ তাঁকে সমর্থন করেন পার্থও। বৈঠকে উপস্থিত অভিষেক বিশেষ কোনও কথা বলেননি। গোটা আলোচনা মন দিয়ে শুনেছেন।
তৃণমূলের এক শীর্ষনেতার কথায়, ‘‘বিধানসভা ভোটের সময়েও আইপ্যাকের প্রস্তাবে কাটছাঁট করে তার উপরে ‘বেস্ট অব লাক’ লিখে দিয়েছিলেন মমতাদি। তাতে বিপুল সাফল্য এসেছিল। এ বারেও প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে নিজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy