Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪
বাম-অভিযান নিয়ে চ্যালেঞ্জ মুখ্যমন্ত্রীর

এক মিনিটেই বুঝে নিতে পারি

বোঝাতে চাইলেন, বামেদের ‘নবান্ন অভিযান’কে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। কিন্তু যা বললেন, তাতেই বোঝা গেল গুরুত্ব দিচ্ছেন! তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের সভায় বামেদের আক্রমণ করলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বস্তুত, তাঁর বক্তৃতার সিংহ ভাগ জুড়েই থাকল নবান্ন অভিযানের বিরুদ্ধে বিষোদগার।

তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৫ ০৩:১৭
Share: Save:

বোঝাতে চাইলেন, বামেদের ‘নবান্ন অভিযান’কে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। কিন্তু যা বললেন, তাতেই বোঝা গেল গুরুত্ব দিচ্ছেন! তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের সভায় বামেদের আক্রমণ করলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বস্তুত, তাঁর বক্তৃতার সিংহ ভাগ জুড়েই থাকল নবান্ন অভিযানের বিরুদ্ধে বিষোদগার।

নবান্ন অভিযানকে ঘিরে বৃহস্পতিবার কলকাতা ও হাওড়ার রাজপথে বাম কর্মী-সমথর্কদের সঙ্গে দফায় দফায় খণ্ডযুদ্ধ বাধে পুলিশের। বিধানসভা ভোটের আগে সংগঠনের স্থবিরতা কাটানোই ছিল বাম নেতৃত্বের উদ্দেশ্য। রাস্তায় কর্মীদের পাশে দাঁড়িয়ে নেতাদেরও পুলিশের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ঘটনা ইতিবাচক বার্তাই বয়ে এনেছিল বলে ধারণা বাম মহলের। তার মধ্যে শুক্রবার তৃণমূল নেত্রী বামেদের প্রবল ভাবে নিশানা করায় বাম শিবির মনে করছে, তাদের অভিযানের উদ্দেশ্য আরও সফল! এক দিকে ভেঙে পড়া সংগঠন ও অন্য দিকে বিজেপির উত্থান চিন্তায় রেখেছিল বাম নেতৃত্বকে। এখন ফের বিজেপি-তৃণমূলের নৈকট্য নিয়ে পাল্টা প্রচার চালাচ্ছে বামেরা। বিজেপি-র সঙ্গে ‘সখ্য’ গড়ে তুলে বিধানসভা ভোটে মমতা তাঁর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বামেদেরই মূল প্রতিপক্ষ ভাবছেন— এ দিনের সমাবেশে সেই বার্তা ছড়িয়ে পড়ল বলে মনে করছে বাম শিবির। তাতে প্রতিষ্ঠান-বিরোধী মন জয় করতে সুবিধা বামেদেরই!

নবান্ন অভিযানে হিংসার দায় বৃহস্পতিবার বামেদের ঘাড়েই চাপায় শাসক দল। গাঁধীমূর্তির পাদদেশে এ দিন সমাবেশ থেকে তৃণমূল নেত্রী প্রায় সেই অভিযানের চুলচেরা সমালোচনা করেছেন! তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘কলকাতার বুকে যে নারকীয় তাণ্ডব হয়েছে, তা রাজনৈতিক হতাশার রাজনীতি। রাজনৈতিক লোকদের আমি রাজনৈতিক ভাবে মোকাবিলা করব। ছাত্রদের বলছি, আর বাকি যারা গুন্ডামি করেছে, তাদের ছবি পাঠান। চিহ্নিত করুন। তাদের দেখতে চাই!’’ বামেদের প্রতিরোধে সামান্য হলেও তাঁদের যে উদ্বেগ বেড়েছে, তার আভাস ধরা পড়েছে মুখ্যমন্ত্রীর কথায়। বিরোধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে মমতা বলেন, ‘‘চ্যালেঞ্জ করবেন না। এক মিনিট সময় লাগবে। শুধু এক মিনিট!’’

আলিমুদ্দিনও সঙ্গে সঙ্গেই শাসক দলের নেত্রীর চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র মুখ্যমন্ত্রীকে পাল্টা বলেন, ‘‘উনি নাকি এক মিনিটে শেষ করে দিতে পারতেন! এটা অপরাধ জগতের ভাষা। স্বৈরাচারীর কণ্ঠস্বর। স্বৈরাচারীদের স্থান হয় ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে। এমন ভাষা যিনি ব্যবহার করেন, তাঁরও সেখানেই স্থান হবে!’’ নবান্ন অভিযানে পুলিশি আক্রমণের জবাব ২ সেপ্টেম্বর সাধারণ ধর্মঘটের মধ্যে দিয়েই বাংলার মানুষ দেবেন, সেই কথাও মনে করিয়ে দেন সূর্যবাবু। বামেদের এ দিন ‘নিষ্কর্মার ঢেঁকি’ বলে কটাক্ষ করে মমতা বলেন, ‘‘চারটে লোক চল্লিশটা করে পাথর নিয়ে আসছে! পকেটে করে, ম্যাটাডোরে করে পাথর আনছে! ক্ষমতায় না থাকলে এই রাজনীতিই আঁকড়ে ধরে!’’ তাঁর দাবি, বাম আমলে পুলিশ বিরোধীদের আন্দোলনে অনেক বার লাঠি-গুলি চালিয়েছে। কিন্তু তাঁর জমানার পুলিশ বামেদের প্রতি অনেক ‘সৌজন্য’ দেখিয়েছে! দলনেত্রীর সুরে তৃণমূলের ‘যুবরাজ’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও বামেদের আন্দোলনকে কটাক্ষ করেছেন, ‘‘কাস্তেয় জং ধরেছে। হাতুড়ির ওজন সহ্য করতে পারছে না! তাই ইট-পাটকেল নিয়ে বাংলাকে অশান্ত করতে রাস্তায় নেমেছে।’’ দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘আগে মিছিলে লোক আসত। এখন আসছে বোমা, পকেট-ভর্তি ইট!’’ সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীরও বক্তব্য, ‘‘বামেরা দিশাহীন হয়ে পুলিশের মাথায় ইট মারছে!’’

সূর্যবাবুও পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। সাফ বলেছেন, ‘‘কাল যা হয়েছে, তা সবে শুরু! উনি আরও দেখবেন! ২ তারিখের ধর্মঘট, ৯-১০ সেপ্টেম্বর বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদ, খাদ্য সুরক্ষা নিয়ে আন্দোলন সবই ওঁকে দেখতে হবে।’’ মিছিলে পুলিশের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কিতে আহত সিপিএম সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ককিক্সের টেল বোনে’ চিড় ধরেছে। পুলিশের উপরে হামলার দায়ে বাম নেতাদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। তার মোকাবিলাও করবেন বলে জানান সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক। মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁর পাল্টা কটাক্ষ, ‘‘পুলিশের প্রতি সহানুভূতি ওঁর মুখে মানায় না! ওঁর দলের লোকেরা পুলিশকে খুন করেছে, থানায় ঢুকে আক্রমণ করেছে। উনি বলেছেন, পুলিশ-প্রশাসনকে চাবকে ঠান্ডা করে দেব! এখন যে সহানুভূতি দেখাচ্ছেন, সেটা কুম্ভীরাশ্রু!’’

এই বাগ্‌যুদ্ধের মাঝেই ভবিষ্যতের রাজনৈতিক সমীকরণের ইঙ্গিতবাহী ঘটনাও ঘটে এ দিন। ২ সেপ্টেম্বর বাম, কংগ্রেস-সহ বিভিন্ন দলের কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলি সাধারণ ধর্মঘট ডেকেছে কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির প্রতিবাদে। সেই ধর্মঘটই ব্যর্থ করে দেওয়ার কথা বলেছেন তৃণমূল নেত্রী। যা থেকে সূর্যবাবু প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘এ তো প্রধানমন্ত্রী এবং বিজেপি-শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কণ্ঠস্বর!’’ আর তার আগেই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী সরাসরিই জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা ২ তারিখের

ধর্মঘটকে সমর্থন করছেন। মমতার মোকাবিলায় আনুষ্ঠানিক ভাবে না হলেও ২০১৬-য় বাম-কংগ্রেস বোঝাপড়া জরুরি বলে মনে করে দুই শিবিরেরই একাংশ। ধর্মঘট থেকেই তার ক্ষেত্র প্রস্তুতি শুরু হলে চিন্তার ভাঁজ বাড়বে তৃণমূল শিবিরে!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy