Advertisement
০২ ডিসেম্বর ২০২৪
Mamata Banerjee

কোনও সংস্থা ফোন করলে ধরবেন না! বিধায়কদের কড়া নির্দেশ নেত্রী মমতার, নিশানায় ‘টিম আইপ্যাক’?

তৃণমূল-আইপ্যাক সম্পর্ক এই মুহূর্তে কী অবস্থায় দাঁড়িয়ে, সোমবার দলীয় বিধায়কদের বৈঠকে দলের সর্বোচ্চ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তৃতার পরে তা নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে।

Mamata Banerjee hints party MLAs that she will take the decision on the future relation between TMC and I-PAC

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল ছবি।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২৪ ২০:২৯
Share: Save:

কাগজেকলমে এখনও তারা তৃণমূলের ‘পরামর্শদাতা’ সংস্থা। কিন্তু সেই তৃণমূলেরই সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি নির্দেশ ঘিরে ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের (পিকে) হাতে তৈরি আইপ্যাক নিয়ে জল্পনা তৈরি হল শাসক শিবিরের অন্দরে। সোমবার বিধানসভা ভবনে দলীয় বিধায়কদের বৈঠকে মমতা ওই নির্দেশ দিয়েছেন। যাকে ‘নেতিবাচক মন্তব্য’ বলেই ব্যাখ্যা করছেন দলের নেতাদের একাংশ। সেই সূত্রেই তৃণমূল-আইপ্যাক সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে দল এবং প্রশাসনের অন্দরে আলোচনা শুরু হয়েছে।

কী বলেছেন মমতা? তিনি অবশ্য আইপ্যাকের নাম করেননি। কিন্তু যা বলেছেন এবং যে ভাবে বলেছেন, তাতে তাঁর লক্ষ্য আইপ্যাক ছাড়া অন্য কোনও সংস্থা হওয়া প্রায় অসম্ভব। তৃণমূলের এক বিধায়ক বলেন, ‘‘নেত্রী কোনও সংস্থার নাম করেননি। তবে তিনি বলেছেন, কোনও সংস্থা যদি ফোন করে তাদের ফোন ধরার প্রয়োজন নেই। আপনার এলাকার ব্লক সভাপতি বা অন্য কোনও দলীয় পদাধিকারী নিয়োগ নিয়ে মতামত চাইলেও দেবেন না। ওদের কিছু বলার দরকার নেই। আমি যা করার করব।’’

মমতার মুখনিসৃত সেই ‘ওরা’ আইপ্যাক বলেই মোটামুটি নিঃসন্দেহ ওই বিধায়ক-সহ দলের অনেকে। তৃণমূলের একটি অংশ মনে করছে, আইপ্যাকের কার্যকলাপ ‘পছন্দ’ না হওয়ায় নতুন করে দলীয় সংগঠনের রাশ হাতে নিতে চলেছেন তৃণমূলনেত্রী। সোমবার তৃণমূল পরিষদীয় দলের বৈঠকে সেই বার্তাই দিয়েছেন তিনি।

প্রসঙ্গত, আইপ্যাকের সঙ্গে তৃণমূলের অঘোষিত ‘দু-নম্বর’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্ক মসৃণ। দলের অন্দরে এ তথ্য অজানা নয় যে, ওই পরামর্শদাতা সংস্থা অভিষেকের দফতরের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রেখে কাজ করে। সারা রাজ্য থেকে তথ্যসংগ্রহ করা, কোথায় সরকারি কাজ কতটা হয়েছে বা হয়নি থেকে শুরু করে কোনও জনপ্রতিনিধি কেমন কাজ করছেন, সে সমস্ত নিয়েই সমীক্ষা করে আইপ্যাক। সেই সমস্ত তথ্য তারা দলীয় স্তরে সরবরাহ করে। যার ভিত্তিতে রিপোর্ট তৈরি করে অভিষেকের দফতর সরকারকে সরবরাহ করে।

তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, মমতা বিধায়কদের বৈঠকে এমনও বলেছেন যে, কোনও সমীক্ষার জন্য কাউকে তথ্য দেওয়ার প্রয়োজন নেই। যদিও আনুষ্ঠানিক ভাবে ওই তথ্যের সমর্থন মেলেনি। কিন্তু মমতা যদি ‘সমীক্ষা’র কথা বলে বিধায়কদের তাতে সহযোগিতা করার নির্দেশ না-দিয়ে থাকেন, তা হলে তা আরও বেশি করে আইরপ্যাকের দিকেই আঙুল তোলে। কারণ, রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে বিবিধ সমীক্ষা তারাই চালায়।

তবে তৃণমূলে আইপ্যাকের ভূমিকা নিয়ে দলের অনেকের ক্ষোভও রয়েছে। বিশেষত, প্রবীণদের। এবং তাঁরা মূলত মমতার প্রজন্মের নেতা। তাঁদের অনেকেরই অভিমত, আইপ্যাক পরামর্শদাতার ‘ভূমিকা’ ছেড়ে দলের মধ্যে নিজেদের আধিপত্য কায়েম করার মানসিকতা নিয়ে চলে। যাকে অনেকেই ‘দলের মধ্যে দল’ বলে অভিহিত করেন। প্রবীণ নেতাদের অভিযোগ ছিল, আইপ্যাক বক্তৃতার বিষয়বস্তু থেকে শুরু করে সাংবাদিক বৈঠকে বক্তব্যের খসড়াও ঠিক করে দিচ্ছে। যা তাঁদের কাছে ‘অবমাননাকর’। এক প্রবীণ নেতা তো এক বার বলেও দিয়েছিলেন যে, ‘‘আইপ্যাকের কাছে কি রাজনীতি করা শিখতে হবে?’’ সেই মর্মে অভিযোগ যে তাঁরা দলনেত্রী মমতার কাছে করেননি, তা নয়। এমন অভিযোগও মমতার কাছে জমা পড়েছে যে, এক প্রবীণ মন্ত্রী সাংবাদিক বৈঠক শুরু করেও থামিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। কারণ, আইপ্যাক ফোন করে তাঁর বক্তব্যে আরও কিছু বক্তব্য জুড়েছে। সেগুলি জেনে নিয়ে আবার তাঁকে সংবাদমাধ্যমের সামনে ফিরতে হয়েছে। এ ছাড়াও দলীয় পদাধিকারী মনোনয়ন এমনকি, পঞ্চায়েত থেকে লোকসভা ভোটে প্রার্থী নির্বাচনেও আইপ্যাকের বিরুদ্ধে ‘আধিপত্য’ দেখানোর অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের অন্দরে। দলীয় পদাধিকারী এবং প্রার্থী নির্বাচনে ‘অনিয়মে’ জড়িত থাকার অভিযোগও কালীঘাটে জমা পড়েছিল। তবে সেগুলিকে ‘ব্যতিক্রম’ হিসেবেই ধরে নেওয়া হয়েছিল।

আইপ্যাক যখন প্রথম তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত হয়, তখন জেলায় জেলায় তাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ তুমুল আকার নিয়েছিল। অভিযোগ উঠেছিল, আইপ্যাকই ‘নেতৃত্ব’ ঠিক করে দিতে চাইছে। যদিও ২০২১ পর্যন্ত সে সবে আমল দেননি তৃণমূলের প্রথম সারির নেতৃত্ব। দেখা গিয়েছিল, পরামর্শদাতা সংস্থার কথায় চলে ভোটে লাভ হয়েছে তৃণমূলের।

তবে আইপ্যাকের ভূমিকা নিয়ে তৃণমূলে উল্টো অভিমতও রয়েছে। শাসকদলের একটি অংশ মনে করে (মূলত অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি অনুগত নেতারা), আইপ্যাকের সাহায্যে দলে একটি ‘সিস্টেম’ চালু করা গিয়েছে। যা ২০১৯ সালের ভোটের পরে ছন্নছাড়া হয়ে গিয়েছিল। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বাংলায় ‘ধাক্কা’ খাওয়ার পরে পিকের তৈরি ওই পরামর্শদাতা সংস্থাকে পেশাগত ভাবে নিয়োগ করেছিল তৃণমূল। আইপ্যাক প্রথম তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পরে দলের অন্দরে যে বিক্ষোভ তৈরি হয়েছিল, তাতে ২০২১ সাল পর্যন্ত আমল দেননি শীর্ষনেতৃত্ব। ভোটের ফলাফলে দেখা গিয়েছিল, পরামর্শদাতা সংস্থার কথায় চলে লাভই হয়েছে তৃণমূলের। তবুও ‘ক্ষোভ’ পুরোপুরি মেটেনি। চলতি বছরে লোকসভা ভোটপর্বের সময় তৃণমূলের নেতা কুণাল ঘোষ সমাজমাধ্যমে খোঁচা দিয়ে লিখেছিলেন, তৃণমূলের মুখপাত্র এবং রাজ্য সাধারণ সম্পাদক হিসাবে আইপ্যাকের প্রধান (প্রধান পরামর্শদাতা) প্রতীক জৈনকে নিয়োগ করা হোক। তাতে অভিষেক ‘প্রসন্ন’ হয়েছিলেন বলে শোনা যায়নি।

তবে সেই পর্ব এখন অতীত। বস্তুত, ২০২৪ সালে লোকসভা ভোটে সাফল্যের পর আইপ্যাকের সঙ্গে তৃণমূলের চুক্তির মেয়াদ বেড়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠাতা পিকে এখন নিজের তৈরি সংস্থার দৈনন্দিন কার্যকলাপে যুক্ত নন। তিনি বিহারের রাজনীতিতে নিজের দলকে প্রতিষ্ঠিত করতে ব্যস্ত। প্রশান্তের অনুপস্থিতি অবশ্য আইপ্যাকের দাম (‘ব্র্যান্ড ভ্যালু’) কমাতে পারেনি। অরবিন্দ কেজরীওয়ালের দল আম আদমি পার্টি (আপ) দিল্লির আসন্ন বিধানসভা ভোটের জন্য ‘পরামর্শদাতা সংস্থা’ হিসাবে গত সপ্তাহে আইপ্যাককেই নিয়োগ করেছে।

কিন্তু মমতার সোমবারের বক্তব্যের পরে আইপ্যাকের সঙ্গে তৃণমূল তথা রাজ্য সরকারের ‘সমীকরণ’ নিয়ে প্রত্যাশিত ভাবেই আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে। গত এক সপ্তাহের কিছু বেশি সময় ধরে শাসক শিবিরের শীর্ষতম নেতৃত্বের সঙ্গে আইপ্যাকের সম্পর্ক খুব ‘অনায়াস’ নয় বলেই খবর। অন্তত আগের মতো তো নয়ই। দল এবং সরকারের প্রধানের সোমবারের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে সেই সম্পর্কের জল কোথায় গড়ায়, তা নিয়েই আপাতত আগ্রহী শাসক শিবির।

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee CM Mamata Banerjee IPAC TMC MLA
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy